/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/31/ellora-temple-2025-10-31-22-06-15.jpg)
Kailasa Temple Mystery: রহস্যময় কৈলাস মন্দির।
Kailasa Temple Mystery: ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের ঔরঙ্গাবাদ জেলার ইলোরা গুহার মধ্যে অবস্থিত এক বিস্ময়কর সৃষ্টি— কৈলাস মন্দির। প্রায় অষ্টম শতাব্দীতে সম্পূর্ণ একটি পাহাড় খোদাই করে তৈরি করা হয় এই মন্দির, যা আজও বিশ্বের একমাত্র 'মনোলিথিক' বা এক-পাথর খোদাই করা শিব মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরে আজও অসংখ্য রহস্য ও তত্ত্ব প্রচলিত। ইতিহাস, স্থাপত্য, ধর্ম— সব মিলিয়ে কৈলাস মন্দির যেন এক অজানা সভ্যতার নিদর্শন।
এক পাহাড় থেকে জন্ম নেওয়া মন্দির
কৈলাস মন্দির তৈরি করা হয়েছে পুরোপুরি একটি পাহাড় কেটে। এটি কোনও ইট-পাথর জোড়া দিয়ে বানানো নয়— বরং একটি বিশাল পাথরের পাহাড় খোদাই করে, ওপরের দিক থেকে নীচের দিকে কাটতে কাটতে পুরো মন্দিরটি গড়ে তোলা হয়েছে। স্থপতি ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, প্রায় ৪ লক্ষ টন পাথর সরানো হয়েছিল এই কাজের সময়, যা আজকের যুগে অত্যন্ত কঠিন।
আরও পড়ুন- স্বাদ বদলান! দামে কুলোতে অল্প হলেও একবার খান ইচা মারা, মুখে লেগে থাকবে
কৈলাস মন্দিরের নির্মাণ সম্রাট ১ম কৃষ্ণ-র শাসনকালে হয়েছিল বলে অনুমান। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় — তখনকার যুগে, যখন আধুনিক যন্ত্র বা ক্রেনের অস্তিত্বই ছিল না, তখন কীভাবে এমন নিখুঁত খোদাই সম্ভব হয়েছিল? এই মন্দিরের ছাদ, সিঁড়ি, স্তম্ভ, ভাস্কর্য— প্রতিটি জায়গায় এত সূক্ষ্ম কাজ করা হয়েছে যে, আধুনিক প্রযুক্তিতেও তা পুনর্নির্মাণ করা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞই।
আরও পড়ুন- একদিন আগেই নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী?
ঔরঙ্গাবাদের কৈলাস মন্দিরের নীচে রয়েছে একটি গোপন গুহা পথ, যা বহু বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ লেখক ইমান হেনরিক তাঁর বইয়ে জানিয়েছেন— এক ইংরেজ অভিযাত্রী এই গুহায় প্রবেশ করে নীচে আরেকটি মন্দিরের মত জায়গা দেখেছিলেন। সেখানে কিছু রহস্যময় মানুষের উপস্থিতিও তিনি লক্ষ্য করেছিলেন। এই ঘটনার পর থেকে সেই গুহা সরকারি নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজও তার প্রবেশপথ রহস্যে ঢাকা।
আরও পড়ুন- রাজস্থানের বুন্দি, নীল শহরের সোপানকূপে সময়ের প্রতিধ্বনি পর্যটকদের হাতছানি দেয়
ইতিহাস বলছে, ১৬৮২ সালে সম্রাট ঔরঙ্গজেব কৈলাস মন্দির ধ্বংস করতে সৈন্য পাঠান। তিন বছর ধরে প্রচেষ্টা চললেও, এক হাজার সৈন্যও মন্দিরটির একটি অংশও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ঔরঙ্গজেব নিজেই আদেশ দেন কাজ বন্ধ করতে। এই ঘটনা এই মন্দিরের রহস্যকে আরও গভীর করে তুলেছে।
আরও পড়ুন- চিনপাই গ্রামের বড়মা সিদ্ধেশ্বরী, যাঁর দর্শনে পূর্ণ হয় ভক্তের মনস্কামনা!
বিজ্ঞানীরা আজও নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি কীভাবে এমন একটি মন্দির তৈরি হয়েছিল। কেউ বলেন, এটি অতিপ্রাচীন ভারতীয় প্রকৌশলের নিদর্শন, কেউ আবার মনে করেন — এটি এলিয়েন টেকনোলজির ফল। ভক্তদের ধারণা, এই মন্দির হয়তো ভিনগ্রহের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। তবে ঐতিহাসিকরা মনে করেন, ভারতীয় স্থপতিরা সেই সময়েই অসাধারণ গাণিতিক দক্ষতা ও নির্মাণ কৌশল জানতেন, যা আজও বিস্ময় জাগায়।
মন্দিরের ছাদে রয়েছে এমন বিশেষ নকশা যার ফলে বৃষ্টির জল সহজে নিষ্কাশিত হয় — একপ্রকার প্রাকৃতিক ড্রেনেজ সিস্টেম। অভ্যন্তরীণ খিলান, ভাস্কর্য ও থামগুলি এমনভাবে কাটা হয়েছে যে শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেলেও কাঠামোতে কোনো ফাটল দেখা যায়নি। আজ এটি ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক এখানে আসেন, কিন্তু এখনও এর প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে অজানা রহস্য, অসমাপ্ত প্রশ্ন, আর এক অসীম বিস্ময়। কৈলাস মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়— এটি ভারতের প্রাচীন জ্ঞান, স্থাপত্য আর আধ্যাত্মিকতার এক জীবন্ত সাক্ষী।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us