/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/16/dr-dilip-mahalanabis-2025-10-16-17-57-18.jpg)
Dr Dilip Mahalanabis: ওআরএসের উদ্ভাবক ডা. দিলীপ মহলানবিশ।
ORS Doctor Dr Dilip Mahalanabis: ডাক্তার হয়ে কার্যত ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। বনগাঁ সীমান্তে কলেরায় আক্রান্ত কয়েক হাজার মানুষকে বাঁচিয়েছিলেন চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ। সেই সময়ও বিশ্ব চিকিৎসা মহল ওআরএস বা Oral Rehydration Solution-এর কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু মহলানবিশ নিজের অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে দেখালেন— নুন, চিনি ও বেকিং সোডা মেশানো জলে লুকিয়ে আছে জীবনরক্ষার জাদু।
কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ববাংলা থেকে কয়েক লক্ষ শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হঠাৎ সেই শিবিরগুলিতে কলেরার মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। তখনও ওআরএসের প্রয়োগ স্বীকৃত ছিল না। সেই সময় ঝুঁকি নিয়েই কাজ শুরু করেন ডা. মহলানবিশ। খুব অল্প উপকরণে তৈরি ঘরোয়া এই তরল পানীয় দিয়েই তিনি রুগীদের প্রাণে সাড়া ফেরান।
আরও পড়ুন- বাংলায় কালীপুজোর জোয়ার, পিছনে এই ৩ সাধকের বিরাট অবদান!
তাঁর দু’মাসের নিরলস পরিশ্রমের পর দেখা যায়, শিবিরে মৃত্যুহার দ্রুত কমছে। সুস্থ হয়ে উঠছেন আক্রান্তরা। পরে তাঁর গবেষণালব্ধ তথ্য ১৯৭৩ সালে জন হপকিনস মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৭৮ সালে বিখ্যাত ‘ল্যানসেট’ পত্রিকাও তা স্বীকৃতি দেয়। ধীরে ধীরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ ওআরএসকে স্বীকৃতি দেয় বিশ্বের অন্যতম সস্তা ও কার্যকর জীবনরক্ষার ওষুধ হিসেবে।
আরও পড়ুন- গানেই জিতেছিলেন দেবীর করুণা, রামপ্রসাদের এই সব অলৌকিক কাহিনি জানেন?
ওআরএস বা Oral Rehydration Solution এখন প্রতিটি গৃহে পরিচিত নাম। কলেরা, ডায়েরিয়া কিংবা সান-স্ট্রোক— সব ক্ষেত্রেই এটি জীবনরক্ষার প্রথম ধাপ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই আবিষ্কারকে 'the simplest medical innovation that saved millions' বলা হয়।
আরও পড়ুন- কাজে লাগান এই টিপস, বদলে ফেলুন দুর্ভাগ্য, খুলবে কপাল!
রাষ্ট্রসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, চিকিৎসাক্ষেত্রে বিংশ শতাব্দীর আর কোনও আবিষ্কার এত দ্রুত এবং এত সস্তায় এত মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারেনি। ডা. দিলীপ মহলানবিশ জন্মেছিলেন ১২ নভেম্বর, ১৯৩৪ সালে অবিভক্ত বাংলার কিশোরগঞ্জে। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন— প্রথমে বরাহনগর, পরে শ্রীরামপুরে।
আরও পড়ুন- কলকাতার ধর্মতলায় শহিদ মিনার, জানেন সৌধটির এইসব বিস্ময়কর তথ্য?
তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডায়েরিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন। পরে বাংলাদেশে International Centre for Diarrhoeal Disease Research-এর ক্লিনিক্যাল সায়েন্স বিভাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-এর সদস্য নির্বাচিত হন। জীবনের শেষপর্যন্ত তিনি ছিলেন বিনয়ী, প্রচারবিমুখ, অথচ অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী। ১৬ অক্টোবর, ২০২২ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়।