/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/16/kali-of-ramprasad-2025-10-16-03-38-33.jpg)
Shakta Saint Ramprasad: এই বিগ্রহ রামপ্রসাদের আরাধ্যা হিসেবে পরিচিত।
Shakta Saint of Bengal Ramprasad: বাংলা সাহিত্যে ও সংগীতে রামপ্রসাদ সেন এক অনন্য নাম। তিনি শুধু কবি বা গীতিকার নন, ছিলেন এক পরম শাক্ত সাধক, যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় দেবী আরাধনার সঙ্গে জড়িত।
কেরানি থেকে কবিরঞ্জন
বাবার মৃত্যুর পর সংসারের ভার এসে পড়ে রামপ্রসাদের কাঁধে। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে কলকাতার এক ধনী দুর্গাচরণ মিত্রের কাছারিতে কেরানির কাজ নেন। কিন্তু সংখ্যার হিসেবের খাতায় তাঁর মন বসেনি। হিসেবের জায়গায় লিখে ফেলতেন কালীমায়ের উদ্দেশে গান। সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি জানায় মালিককে। কিন্তু দুর্গাচরণ যখন সেই খাতা খুলে পড়েন, তখন সংখ্যার জায়গায় পেয়ে যান আধ্যাত্মিক প্রেমের বাণী। গানের ভাব ও ভাষায় মুগ্ধ হয়ে তিনি রামপ্রসাদকে বলেন, 'তুমি কেরানি নও, তুমি কবি।' এরপর মাসে ৩০ টাকা বেতনে রামপ্রসাদকে কাজে রেখে দেন। কিন্তু, কোনও কাজের বাধ্যবাধকতা আর তিনি রাখেননি। যেন দেবী নিজেই তাঁর জীবনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- ধনতেরসেই কেনা হয় কেন, শাস্ত্রমতে ঝাড়ু রাখার নিয়মটা কী?
রামপ্রসাদের গান গঙ্গার পাড়ে, মন্দিরে, এমনকি রাজসভাতেও ছড়িয়ে পড়ে। একদিন নবদ্বীপের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় গঙ্গাবক্ষে রামপ্রসাদের গান শুনে মুগ্ধ হন। সভায় উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু রামপ্রসাদ ছিলেন সংসার-ত্যাগী সাধক। রাজসভায় যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবু মহারাজ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিষ্কর একশো বিঘা জমি দান করেন। রামপ্রসাদ কৃতজ্ঞচিত্তে রাজাকে উপহার দেন নিজের রচিত ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য। যদিও ভাষা ও অলংকারে তা ভারতচন্দ্রের সমতুল ছিল না, তবে তার ভেতরে ছিল এক অপরূপ ভক্তিভাব।
আরও পড়ুন- দীপাবলি কবে, ২০ না ২১ অক্টোবর? পুজোর আগেই ঘরে আনুন এই ৫ মূর্তি!
এই সবের মধ্যেই চলছিল তাঁর তপস্যা। মাতৃদর্শনের আকাঙ্ক্ষা দিনে দিনে বেড়ে উঠছিল। ঠিক সেই সময় ঘটে তিনটি আশ্চর্য ঘটনা, যা আজ কিংবদন্তি হয়ে আছে। একদিন বাড়ির সামনে বেড়া বাঁধছিলেন রামপ্রসাদ। তাঁর ছোট মেয়ে হাতে দড়ি দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর মেয়ে চলে গেলে, তিনি খেয়াল না করেই দড়ি বাঁধতে থাকেন। পরে মেয়ে ফিরে এসে অবাক হয়ে বলে— 'বাবা, আমি তো অনেকক্ষণ আগে চলে গেছিলাম!' তখনই রামপ্রসাদ বুঝতে পারেন, মেয়ে সেজে তাঁকে দড়ি ধরিয়ে দেওয়া বালিকা মানুষ নয়, স্বয়ং মহামায়া তাঁর সামনে এসেছিলেন।
আরও পড়ুন- কালীপুজোর রাতে মহাসরস্বতীর পুজোয় মেতে ওঠে এই গ্রাম! জানেন কোথায়?
আরেকদিন তিনি গঙ্গাস্নানে যাচ্ছিলেন। পথে এক অপরূপা তরুণী এসে রামপ্রসাদকে বলেছিলেন, 'তোমার গান শুনব।' তিনি স্নান সেরে ফিরে এসে দেখেন তরুণী নেই, কিন্তু চণ্ডীমণ্ডপের দেওয়ালে লেখা, 'আমি অন্নপূর্ণা, তোমার গান শুনতে এসেছিলাম।' এর পর তিনি কাশীতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, দেবী স্বপ্নাদেশে বলেন, 'ত্রিবেণীর কাছে গান শুনিয়ে দাও।' রামপ্রসাদ তাই করেছিলেন। আর সেই মুহূর্তেই তাঁর অন্তরে মাতৃদর্শন ঘটেছিল।
আরও পড়ুন- কলকাতার উত্তর প্রান্তের প্রাচীন ‘সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির’, জানেন-এর অলৌকিক ইতিহাস?
আজও হালিশহরে তাঁর ভিটের কাছে একটি প্রাচীন কষ্টিপাথরের মা কালীর বিগ্রহ আছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই বিগ্রহের সামনেই প্রতিদিন পুজো দিতেন রামপ্রসাদ। দীপান্বিতা অমাবস্যায় এখানে এখনও বিশেষ শ্যামাপূজা হয়। রামপ্রসাদের জীবন ও গান বাংলাকে শুধু সংগীতের ক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ করেনি, দিয়েছে এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুভব। তাঁর রচিত 'মন মজিল শ্যামাপদ নীলকমলে', 'আমার হৃদয় যখনে মায়ের পায়ে রাখি'র মত অসংখ্য গান আজও কালীপূজার রাতে ভক্তদের হৃদয়ে অনুরণিত হয়।