Dr. Nilratan Sircar: ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত চিকিৎসক, কে এই ডা. নীলরতন সরকার?

Dr. Nilratan Sircar: আজ ১ অক্টোবর প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. নীলরতন সরকার-এর জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায় সমবয়সি ছিলেন। কবিগুরু তাঁকে 'নীলু' বলে ডাকতেন।

Dr. Nilratan Sircar: আজ ১ অক্টোবর প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. নীলরতন সরকার-এর জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায় সমবয়সি ছিলেন। কবিগুরু তাঁকে 'নীলু' বলে ডাকতেন।

author-image
IE Bangla Lifestyle Desk
New Update
Nilratan Sarkar

Dr. Nilratan Sircar: ডা. নীলরতন সরকার।

Doctor Nilratan Sircar: বাংলার চিকিৎসা, শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নের ইতিহাসে ডা. নীলরতন সরকার (Dr. Nilratan Sircar) এক অমলিন নাম। চিকিৎসক হিসাবে যেমন তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তেমনই শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবেও তাঁর অবদান ছিল অনন্য।

Advertisment

১৮৬১ সালের ১ অক্টোবর দক্ষিণ ২৪ পরগনার নেতড়ায় নীলরতন সরকার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নন্দলাল সরকার ছিলেন যশোরের এক দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের মানুষ। বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক যোগীন্দ্রনাথ সরকার ছিলেন তাঁর ভাই। নীলরতনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় জয়নগরে। ১৮৭৬ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল থেকে ডাক্তারি পড়া শুরু করেন। পরবর্তীতে মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে এলএ ও বিএ এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৮৮৮ সালে এমবি, এরপর এমডি ডিগ্রি লাভ করেন।

আরও পড়ুন- দুর্গাপূজায় পঞ্চমী থেকেই এখন 'মহা' শব্দটা জুড়ে দেওয়ার চল, শাস্ত্র কী বলে?

Advertisment

কলকাতার মেয়ো নেটিভ হাসপাতালে হাউস সার্জেন হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। অল্প সময়েই তিনি জনপ্রিয় চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। দরিদ্র রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন, বিনামূল্যে ওষুধ ও খাবার বিতরণ করতেন। তাঁর পারিশ্রমিক প্রথমে মাত্র দুই টাকা থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ৬৪ টাকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। তারপরও, মানবিক সেবাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।

আরও পড়ুন- পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন কেরল, কমখরচে কীভাবে ঘুরবেন জেনে নিন!

শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান

ডা. নীলরতন সরকার শুধু চিকিৎসক নন, শিক্ষাক্ষেত্রেও ছিলেন এক পথপ্রদর্শক। ১৮৯৫ সালে তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেন, যা পরে কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ (বর্তমান আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) নামে পরিচিত হয়। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, সায়েন্স ও মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন এবং ১৯১৯-২১ সালে ভাইস-চ্যান্সেলর বা উপাচার্য পদে ছিলেন। তিনি বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল ও যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সম্পাদক হিসেবে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছিলেন।

আরও পড়ুন- দেবী দুর্গার কলাবউ! এর প্রতিটি পাতার আড়ালে লুকিয়ে আছে মহাশক্তির রহস্য?

শুধু চিকিৎসা এবং শিক্ষাই নয়, তিনি শিল্পক্ষেত্রেও ছিলেন অগ্রণী। রাঙামাটি চা কোম্পানি (পরে ইস্টার্ন টি কোম্পানি), ন্যাশনাল সোপ ফ্যাক্টরি, ন্যাশনাল ট্যানারি কোম্পানিতে তিনি পুঁজি বিনিয়োগ করেছিলেন। এছাড়াও যক্ষ্মা হাসপাতাল, বসু বিজ্ঞান মন্দির, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ভারতীয় যাদুঘরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৮৯০ থেকে ১৯১৯ পর্যন্ত তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা ও শিল্পের বিকাশ ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন- পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন ঝান্ডি, মোহময়ী দৃশ্য আর কাঞ্চনজঙ্ঘা মন ভরাবেই

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল। কবির ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন নীলরতন সরকার। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে স্নেহভরে 'নীলু' বলে ডাকতেন। কবি তাঁর 'সেঁজুতি' কাব্যগ্রন্থটি নীলরতন সরকারকে উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৪৩ সালের ১৮ মে গিরিডিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর দুই বছর আগে রবীন্দ্রনাথও প্রয়াত হন। আজ কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল তাঁর নাম ধরে রেখে এই মহান ব্যক্তিত্বের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। 

Nilratan Sircar Doctor