/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/06/bengali-printing-history-2025-09-06-12-33-36.jpg)
Bengali Printing History: বাংলা মুদ্রণশিল্পের ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী এই সব যন্ত্রপাতি।
Bengali Printing Press: ১৭৭৮ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর, বাংলার ইতিহাসে এক বিশেষ দিন। এই দিনেই বাংলায় প্রথমবার মুদ্রিত হরফে ছাপা হয় বাংলা ভাষা। সে সময় ইংরেজ ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালেদ রচনা করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ, 'A Grammar of the Bengal Language'। আর সেটিই বাংলায় প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।
এই বই ছাপা হয়েছিল কলকাতার অ্যান্ড্রুজ প্রেস-এ। এই ছাপাখানাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অ্যান্ড্রুজ নামের এক ব্যক্তি। তবে এর প্রকৃত কৃতিত্ব দিতে হয় স্যার চার্লস উইলকিন্সকে। তিনি ধাতব হরফ কেটে প্রথম বাংলা বর্ণমালা তৈরি করেছিলেন।
আরও পড়ুন- পিতৃপক্ষে এই ৫ জিনিস দানে দারিদ্র্য হয় দূর, মেলে পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ
পঞ্চানন কর্মকার: প্রথম বাঙালি হরফ নির্মাতা
উইলকিন্সকে সহযোগিতা করেছিলেন বাংলার কৃতি শিল্পী পঞ্চানন কর্মকার। তিনি ছিলেন প্রথম বাঙালি যিনি ছেনি দিয়ে হরফ কেটে সেই প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৭৮৫ সালে তাঁর হরফেই ইম্পে কোড এবং ১৭৯৩ সালে কর্নওয়ালিস কোড মুদ্রিত হয়েছিল। ডানকানের গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ দিয়েই বাংলা গদ্যের সূচনা ঘটেছিল।
আরও পড়ুন- পরীক্ষায় সাফল্য, অর্থলাভ, পারিবারিক শান্তি চান? করুন এই প্রতিকার
বাংলার প্রথম প্রকাশক গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
১৭৯৩ সালে বাংলায় আসেন উইলিয়াম ক্যারে। ব্রিটিশ শাসিত কলকাতায় ছাপাখানা স্থাপনের অনুমতি না পেয়ে তিনি আশ্রয় নেন ড্যানিশ শাসিত শ্রীরামপুরে। সেখানেই ১৮০০ সালের ১০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক শ্রীরামপুর মিশন প্রেস। এই প্রেস থেকেই প্রথমবার বাংলায় নিউ টেস্টামেন্ট ছাপা হয়। এই উদ্যোগে পঞ্চানন কর্মকারের পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম প্রকাশক, যিনি পরে বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র, 'বাংলা গেজেট' প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন- বানিয়ে ফেলুন কাতলার রাজকীয় পদ, ভাত-পোলাওয়ের সঙ্গে জমে যাবে!
১৮০০ থেকে ১৮৩৪ সালের মধ্যে এই প্রেস থেকে প্রায় ৫০টি ভাষায় বাইবেল ছাপা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৫টি সংস্করণ ছিল বাংলায়। একই সময়ে বাংলা ভাষায় প্রথমবারের মত রামায়ণ, মহাভারত মুদ্রিত হয়। অর্থাৎ বিশ্বের মধ্যে প্রথমবার এই দুটি মহাকাব্য বাংলাতেই মুদ্রিত হরফে প্রকাশিত হয়। যদিও ১৭৭৫ সাল থেকে অর্থাভাবের কারণে এই ছাপাখানা একাধিকবার সংকটে পড়ে। তবুও ইংল্যান্ডের মিশনারি সংস্থার সহায়তায় মুদ্রণ চলতেই থাকে। ১৮৩৭ সালে একবার এই প্রেস বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার কিছুদিন পর চালু হয়। কিন্তু অবশেষে ১৮৫৫ সালে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- 'সতী'দাহ চক্রান্তের বলি! রূপ কানওয়ারকে দাহর আগে পরানো হয়েছিল ১৬ রকম অলংকার?
শ্রীরামপুর প্রেস বন্ধ হলেও এর অবদান আজও অমলিন। পঞ্চানন কর্মকারের হরফ থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ডিজিটাল ফন্ট (যেমন অভ্র, ইউনিজয়), সবই এই ঐতিহাসিক যাত্রার ধারাবাহিকতা। বাংলার প্রতিটি মুদ্রিত অক্ষরে আজও লুকিয়ে আছে উইলকিন্স, কর্মকার এবং ক্যারের নাম। আর, এই সব কারণেই ১৭৭৮ সালের এই দিনটি শুধু বাংলা নয়, ভারতবর্ষের ইতিহাসেরও এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রথম মুদ্রিত বাংলা হরফ থেকে শুরু করে আজকের ডিজিটাল বাংলা—এই দীর্ঘ যাত্রার সূচনা হয়েছিল অ্যান্ড্রুজ প্রেস ও শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে।