Rup Kanwar: 'সতী'দাহ চক্রান্তের বলি! রূপ কানওয়ারকে দাহর আগে পরানো হয়েছিল ১৬ রকম অলংকার?

Rup Kanwar: সচেতনতা দূর। আজও রূপ কানওয়ারকে সতী দেবী বলে মনে করেন সেখানকার বাসিন্দারা। বিপদে-আপদে সেই দেবীস্থানে নিয়মিত প্রণামও করতে যান গ্রামের লোকজন।

Rup Kanwar: সচেতনতা দূর। আজও রূপ কানওয়ারকে সতী দেবী বলে মনে করেন সেখানকার বাসিন্দারা। বিপদে-আপদে সেই দেবীস্থানে নিয়মিত প্রণামও করতে যান গ্রামের লোকজন।

author-image
IE Bangla Lifestyle Desk
New Update
Rup Kanwar

Rup Kanwar: স্বামীর সঙ্গে রূপ কানওয়ার (বামদিকে)। সেই স্থানে স্থানীয়দের যাতায়াত।

Rup Kanwar: ভারতের ইতিহাসে সতীদাহ প্রথা এক অন্ধকার অধ্যায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই অমানবিক প্রথার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন হিন্দু উচ্চবর্ণের অসংখ্য নারী। রামমোহন রায়দের চেষ্টায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আইন করে সতীদাহ নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু, সেটা শুধু কোম্পানির এলাকায়। তারপরও এর শিকার হয়েছেন উচ্চবর্ণের অসংখ্য হিন্দু নারী। এমনকী স্বাধীন ভারতে ১৯৮৭ সালে এর শিকার হন মাত্র ১৮ বছরের এক তরুণী—রূপ কানওয়ার। এই ঘটনার পর ভারতজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। 

সতীদাহর সাজা

Advertisment

রূপ কানওয়ারের ঘটনার পর সতীদাহ কমিশন (নিবারণ আইন, ১৯৮৭) চালু হয়। এই আইনটি সতীদাহ প্রথা এবং এর মহিমা ঘোষণা রোধ করার চেষ্টা করে চলেছে। সেই ধারা অনুযায়ী, সতীদাহ প্রথার মহিমা প্রকাশের (সতীদাহর পক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন, স্মারক তৈরি করা, অথবা সতীদাহকারী নারীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন) শাস্তি ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৩০,০০০ টাকা জরিমানা। আর, সতীদাহ করার চেষ্টার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। 

আরও পড়ুন- আমেরিকায় গ্রিন কার্ড হোল্ডাররা বেকায়দায়, নাগরিকত্ব নিয়ে শুরু টানাপোড়েন

Advertisment

সতীদাহ কাকে বলে? সতী বলতে বোঝায় স্বামীর মৃত্যুর পর কোনও বিধবাকে দেবী 'সতী'র তকমা দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা বা কবর দেওয়াকে। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী শিব ঠাকুরের নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেবী সতীর আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ধারণার সূত্রপাত। এই ধারণার সুযোগ নিয়ে বছরের পর বছর বহু নারীকে হত্যা করেছেন একশ্রেণির কুচক্রী। 

আরও পড়ুন- মানুষের মত এই প্রাণীরাও কথা বলতে পারে, জানেন তারা কারা?

অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের লুঠের হাত থেকে ঘরের নারীকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বিপদ বুঝে ১৫০০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষে হাজার হাজার উচ্চবর্ণের হিন্দু নারীকে সতী হিসেবে দাহ করা হয়েছিল। সেই সময় প্রচার করে দেওয়া হয়েছিল বিধবা নারীরা সামাজিকভাবে অশুভ। সেই প্রচারকে হাতিয়ার করেই নারীদের স্বামীর চিতায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা মারাত্মকরকম বেড়ে গিয়েছিল। 

আরও পড়ুন- কলকাতা স্টাইলে বানান চিকেন চপ, স্পেশাল রেসিপি তৈরি করুন বাড়িতেই

১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক আইন করে সতীদাহ বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন। সেই চেষ্টায় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত সমাজ সংস্কারকরা। তবে সেই আইন শুধু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরাসরি প্রভাবিত এলাকায় চালু ছিল। দেশীয় করদ রাজ্যগুলোয় সেই আইন চালু ছিল না।

আরও পড়ুন- ভাদ্রর শুক্লপক্ষে পরিবর্তিনী একাদশী, এই ব্রতকথা ছাড়া পালন অসম্পূর্ণ

১৯৬৯ সালে রাজস্থানের সিকার জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন রূপ কানওয়ার। ১৮ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ২৪ বছরের মাল সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে। বিয়ের মাত্র আট মাস পরেই মাল সিং শেখাওয়াতের মৃত্যু হয়। ১৯৮৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দেওরালা গ্রামে স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় রূপ কানওয়ারকে জোর করে সেই চিতায় বসানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, তাঁকে মারধর করা হয়েছিল। মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করে দেওয়া হয়েছিল। পরানো হয়েছিল ১৬ রকম অলংকার। তারপর স্বামীর দেহের ওপর ফেলে চিতার কাঠ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। শেষে চিতায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই নৃশংস ঘটনার সাক্ষী ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। তাঁরা ঘটনায় প্রতিবাদ করার বদলে রূপ কানওয়ারকে  'সতী মাতা' বলে পূজা করা শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ।

ঘটনার পর সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরই দেশজুড়ে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। নারীবাদী সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীরা আন্দোলনে নামেন। ১৯৮৮ সালে এই প্রথাকে মহিমান্বিত করার দায়ে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু, দীর্ঘ বিচার শেষে ২০০৪ সালে আদালত সব অভিযুক্তকে খালাস করে দেয়। এরপর সতীদাহ প্রথা আইনত বিলুপ্ত হলেও  রাজস্থানের গ্রামীণ সমাজে তার প্রভাব রয়ে গিয়েছে। রূপ কানওয়ারের গ্রামের লোকেরা এখনও তাকে 'সতী মা' হিসেবে পূজা করেন। আদালতের নির্দেশে সেখানে মন্দির নির্মাণ হয়নি, কিন্তু পূজা-অর্চনা নিয়মিত হয় বলেই অভিযোগ।

Rup Kanwar