Curcumin oxalate kidney risk: হলুদ—ভারতের রান্নাঘরের অতি পরিচিত একটি উপাদান। হাজার বছরের আয়ুর্বেদিক ঐতিহ্যে একে বলা হয় 'সোনালি ওষুধ'। প্রদাহ হ্রাস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধে এর ব্যবহার বহুদিন থেকেই প্রচলিত। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞের মত অনুযায়ী, হলুদের অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষ করে যাঁরা কিডনি পাথরের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
হলুদের উপকারিতা
হলুদের মূল উপাদান কারকিউমিন (Curcumin)। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এজেন্ট, যা কিডনির কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। কারকিউমিন কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করে, প্রদাহ কমায় এবং কিছু ক্ষেত্রে কিডনির রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুন- দিনে কতগুলি ডিম খাওয়া নিরাপদ? জেনে নিন, ঠিক কী বলছেন বিশেষজ্ঞ
সমস্যা কোথায় শুরু হয়?
ডায়েটিশিয়ান ও ডায়াবেটিস এডুকেটর কণিকা মালহোত্রা এই প্রসঙ্গে বলেছেন, 'কারকিউমিন প্রস্রাবে অক্সালেটের মাত্রা বাড়াতে পারে। যা সরাসরি কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়।' অক্সালেট হল এক ধরনের পদার্থ যা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত অক্সালেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন তৈরি করতে পারে— যা আসলে কিডনির পাথর।
আরও পড়ুন- রাসায়নিক ছাড়াই মাত্র ৫ মিনিটে পাকা করুন কালো, পান ঝলমলে চুল!
কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?
-
যাঁদের আগে কিডনিতে পাথরের ইতিহাস আছে
-
যাঁরা কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত নিচ্ছেন
-
যাঁরা জল কম খান
-
যাঁরা হাই অক্সালেট ডায়েট করছেন (যেমন পালং শাক, বিট, বাদাম ইত্যাদি খাচ্ছেন)
আরও পড়ুন- গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে দই খাওয়ার সেরা সময় কোনটা? কীভাবে মিলবে উপকার?
রক্ত পাতলা করা ওষুধ নেন? সতর্ক হোন
হলুদ, রক্ত পাতলা করায় প্রভাব ফেলে। ফলে যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ (যেমন ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন) খাচ্ছেন, তাঁদের জন্য হলুদ অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া, অপারেশন বা ডেন্টাল সার্জারির আগে কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া বন্ধ রাখার পরামর্শও দেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন- এই প্রাণীর সারা শরীরে শত শত চোখ! চেনেন এই প্রাণীকে?
তাহলে কতটা হলুদ খাওয়া নিরাপদ?
ডায়েটিশিয়ান কণিকা বলছেন, 'রান্নায় ব্যবহৃত স্বাভাবিক মাত্রা (প্রতি দিন ১-৩ গ্রাম হলুদ) নিরাপদ। সমস্যা হয় যখন কারকিউমিন পাউডার আকারে ২০০০-৩০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত খাওয়া হয়।'
নিরাপদ মাত্রা:
-
হলুদ গুঁড়া: দিনে ১-২ চা চামচ
-
কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট: দিনে ৫০০–২০০০ মিলিগ্রাম (ডাক্তারের পরামর্শে)
-
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে: ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া বেশি হলুদ না খাওয়াই ভালো
করণীয় কী?
-
কিডনির সমস্যার ইতিহাস থাকলে ডাক্তারকে জানান: কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার প্রবণতা থাকলে হলুদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন
-
হলুদ এড়িয়ে চলুন: বিশেষত যদি ডোজ কন্ট্রোল না থাকে
-
জল বেশি খান: শরীর থেকে অক্সালেট দ্রুত বের করতে সহায়ক জল
-
অক্সালেট-সমৃদ্ধ খাবারে নিয়ন্ত্রণ আনুন
-
লেবেল পড়ে বুঝে ব্যবহার করুন: যে কোনো সাপ্লিমেন্টের ক্ষেত্রেই
হলুদ নিঃসন্দেহে একটি আশ্চর্য উপকারী মশলা। তবে আপনি যদি কিডনির সমস্যায় ভোগেন, তাহলে হলুদের ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।