Neem bhog story Jagannath: উল্টোরথে গুন্ডিচা মন্দির থেকে নিজের মন্দিরে ফিরেছেন জগন্নাথস্বামী। ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ওডিশার পুরীতে আয়োজিত এই রথযাত্রায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত অংশগ্রহণ করেন। ২০২৫ সালে রথযাত্রা শুরু হয়েছে ২৭ জুন থেকে। এই মহাযাত্রায় জগন্নাথদেব, বলভদ্র এবং সুভদ্রা দেবী স্বর্ণরথে চড়ে শ্রীমন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দিরে যান।
রথযাত্রা যেমন এক মহান আধ্যাত্মিক অনুশীলন, তেমনই এই উৎসব ঘিরে রয়েছে বহু পুরনো ও মনস্পর্শী রীতি ও কাহিনি। এরই একটি হল—ভগবান জগন্নাথকে নিমপাতা বা নিমের চূর্ণ ভোগ হিসেবে অর্পণ করার প্রথা। যেখানে তাঁকে ৫৬ রকমের সুস্বাদু ভোগ দেওয়া হয়, সেখানে এমন তেতো নিমপাতা কেন?
আরও পড়ুন- মাসির বাড়ি থেকে ফিরছেন জগন্নাথস্বামী! কে এই মাসি? কী তাঁর মাহাত্ম্য
এর পিছনের লোককথা
কথিত আছে, পুরী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় এক বৃদ্ধা মহিলা থাকতেন। তিনি ভগবান জগন্নাথকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। প্রতিদিন দেখতেন ভগবানকে ৫৬ রকমের ভোজ্য অর্পিত হচ্ছে। তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে—এত ভারী ভোজনের পর যদি তাঁর 'ছেলে'র পেটব্যথা হয়? মা যেমন চিন্তা করেন সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে, তেমনি তিনিও ভাবলেন ভগবানের স্বাস্থ্য সম্পর্কে।
তিনি জানতেন নিমপাতা একটি উপকারী ভেষজ, যা হজমের সমস্যা ও পেটের অসুখে আরাম দেয়। তাই তিনি স্নেহভরে নিমপাতা শুকিয়ে তার চূর্ণ তৈরি করলেন এবং তা ভগবানকে ভোগ হিসেবে দিতে রওনা দিলেন মন্দিরে।
আরও পড়ুন- মাসির বাড়ি থেকে কখন ফিরবেন জগন্নাথদেব? জানুন উল্টোরথের সূচি!
কিন্তু হলেন অপমান
মন্দিরে যাওয়ার পর সেই বৃদ্ধা মহিলাকে প্রহরীরা মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, তাঁর হাত থেকে নিমপাতার ভোগ কেড়ে নিয়ে তাঁরা ফেলে দিয়েছিল। এই ঘটনায় তিনি চরম দুঃখিত ও অপমানিত হন। তিনি ভাবলেন, মা হয়ে সন্তানের জন্য তিনি যা এনেছিলেন, তা-ও দিতে পারলেন না।
আরও পড়ুন- অবিবাহিত দম্পতিরা কেন পুরীর মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না?
স্বপ্নে নির্দেশ ভগবানের
সেই রাতেই ভগবান জগন্নাথ পুরীর রাজাকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে জানান, তাঁর এক প্রকৃত ভক্তকে মন্দিরের দ্বারে অপমান করা হয়েছে এবং তা তিনি সহ্য করতে পারছেন না। রাজাকে নির্দেশ দেন সেই বৃদ্ধার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে এবং তাঁর হাত দিয়ে পুনরায় নিমপাতার চূর্ণ প্রস্তুত করে এনে ভোগ অর্পণ করতে।
আরও পড়ুন- জগন্নাথকে আহমেদাবাদে প্রথমবার গার্ড অফ অনার, রথযাত্রায় পুরী, দিঘা জমজমাট
রাজার ক্ষমা প্রার্থনা ও প্রথার সূচনা
পরদিন রাজা নিজে বৃদ্ধার কাছে যান, ক্ষমা চান এবং তাঁর হাত দিয়ে আবার চূর্ণ তৈরি করান। সেই চূর্ণ ভগবানকে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়, এবং তিনি তা গ্রহণ করেন আনন্দভরে। সেই থেকে এই বিশেষ প্রথার সূচনা—৫৬ ভোগের পর নিমপাতার চূর্ণ অর্পণ।
শিক্ষণীয় বার্তা
এই কাহিনি শুধুই একটি পুরাণ নয়, বরং ভক্তি ও বিশ্বাসের এক অনন্য উদাহরণ। এতে প্রমাণ হয়, ভগবানের কাছে কোনও কিছু পাওয়া বা সুস্বাদু খাবারের চেয়েও বেশি মূল্য রাখে একটি বিশুদ্ধ হৃদয়, একটি নিষ্পাপ ইচ্ছা। আজও, বহু শতাব্দী পরও সেই প্রথা চলছে পুরীধামে। এটি আমাদের শেখায়—ভগবানের কাছে মুখের স্বাদ নয়, হৃদয়ই সবচেয়ে বড়।