দেবীর পুজো এই কদিন স্থগিত রাখা হয়, শাস্ত্রমতে তিন চারদিন যেকোনও দেবীর মন্দিরকে পর্দা দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়। বন্ধ থাকে পুজোর সব আচার নিয়ম - একে অম্বুবাচী তিথি বলা হয় থাকে। এই কদিন ধরিত্রী রজস্বলা হন। হাজারো নিয়ম থাকে এই সময়। বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত অথবা বিধবা যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়।
বিশেষ করে এই কদিন কামাখ্যা মন্দিরে থাকে জোরদার আয়োজন। কথিত রয়েছে কামাখ্যা মন্দিরে দেবী অর্থাৎ সতীর গর্ভ এবং যোনিমুদ্রা পড়ে। এই কারণেই অম্বুবাচী উপলক্ষে এখানে যোগ্য-তন্ত্র আচার নিয়ম হয়ে থাকে। মেলা বসলেও মন্দির থাকে বন্ধ। নাট মন্দির চত্বরে নামগান হয়ে থাকে। বেশ কিছু অতীতের মাহাত্ম্য রয়েছে এই ক্ষেত্রে। অসমের বাসিন্দা, নিলাক্ষি বর্মন বলছেন, বহুদিন আগে নাকি এই সময় মন্দিরের দরজা নিজে থেকে বন্ধ হত আবার তিথি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই খুলে যেত। এমনকি এও শোনা যেত, তিথির শুরুর দিকে দেবীকে নতুন বস্ত্র দেওয়া হত। তিনদিন পর সেই বস্ত্রের পূর্ব রং আর থাকত না। সেটি লাল রং ধারণ করতো। তবে এখন সব অতীত। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বদল এসেছে।
- অম্বুবাচী তিথি চলাকালীন শুধু দেবী মন্দির নয়, বরং বাড়িতে কিংবা মঠ - যেকোনও কোথাও এই নিয়ম মানতেই হবে। বেশ কিছু কাজ এই কদিন করতে নেই।
- প্রথম গাছে হাত দেওয়া, নতুন গাছ লাগানো এবং কৃষিকাজ না করলেই ভাল। এইসময় হাল ধরতে নেই। বিশেষ করে অবিবাহিত মেয়েদের গাছে ফুল তোলা নিষিদ্ধ।
- এই সময় বাড়িতে কাঠের সহযোগে আগুন জ্বালানো একেবারেই উচিত নয়। খোলা আকাশের নিচে এই কাজ করবেন না।
- নতুন বস্ত্র পরিধান করাও ঠিক নয়। সার্টিন কাপড় একদমই পড়বেন না। নখ কিংবা চুল কাটবেন না।
- নদীতে স্নান করা, কিংবা খোলা জলাশয়ে স্নান করা উচিত নয়।
- পুজোর আসনে বসবেন না। তবে যদি গুরুমন্ত্র থাকে কিংবা শক্তির মন্ত্র থাকে সেটি আরও বেশি করে জপ করবেন। শুধু জপের আসনে বসবেন না।
- এই কদিন ব্রহ্মচর্য পালন করতে পারেন। আহারে নিরামিষ অনেকেই খান। তবে সধবাদের ক্ষেত্রে একটু আমিষ পদ খাওয়া ভাল।
- ঠাকুরের মুখ লাল কাপড়ে ঢেকে রাখা উচিত। শঙ্খ বাজানো কিংবা কাসর ঘণ্টা একেবারেই বাজাবেন না।
- মাটি খুঁড়ে কোনও কাজ করবেন না। লোহা পেটাই কিংবা লোহার জিনিস আনবেন না।
তিনদিনের নিয়ম কিংবা তিথি কেটে গেলে, তারপর বাড়ির সমস্ত কিছু পরিষ্কার করা, ঘরে গঙ্গাজল ছেটনো একেবারেই দরকার। তবে যেদিন তিথি ছাড়বে সেইদিক কোনও অবিবাহিত মেয়ে কিংবা সধবাদের সাবান শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়।
ঠাকুরের জায়গা সম্পূর্ন পরিষ্কার করুন। তাঁর কাপড় বদলান, আসনের কাপড় বদলান। এই কদিনের পর মঙ্গল ঘট বসাতে পারেন। পুজোর আগে তিনবার শঙ্খ বাজিয়ে নেওয়া ভাল।
গত দুবছর ধরে করোনা কালীন সময়ে একেবারেই মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এবছর আসামের বন্যায় পাহাড়ের একদিন ভেঙে পরাতেই ঘটেছে বিপত্তি। মেলার অনুমতি মিললেও তাঁর পরিসর অনেকটা কম। সূত্রের খবর, গতকাল মন্দির বন্ধ হয়েছে রাত ৮টা বেজে ৮ মিনিটে।