/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/15/nabadwip-lal-durga-2025-09-15-02-13-37.jpg)
Nabadwip Lal Durga: নবদ্বীপ লাল দুর্গা।
Durga Puja 2025: বাংলার বনেদি দুর্গাপুজোর তালিকায় বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে নদিয়ার নবদ্বীপের যোগনাথতলার ভট্টাচার্য বাড়ি। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরোনো এই পুজো আজও সমান ভক্তি ও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়। তবে এই পুজোকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয় এক অনন্য বৈশিষ্ট্য—দেবীর গাত্রবর্ণ টকটকে লাল। তাই এই দুর্গা সবার কাছে পরিচিত লালদুর্গা বা Red Goddess নামে।
যশোহর থেকে নবদ্বীপে
দেশভাগের বহু আগে অবিভক্ত বাংলাদেশের যশোহরের মিতরা গ্রাম থেকে নবদ্বীপে চলে আসে এই পুজো। সেই থেকেই যোগনাথতলায় ভট্টাচার্য পরিবার টানা ১২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। বর্তমানে এটি নবদ্বীপের এক বড় আকর্ষণ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
আরও পড়ুন- এবার দেবী দুর্গার কীসে আগমন, কীসেই বা গমন, জানুন বাহনের শুভাশুভ তাৎপর্য
লালদুর্গার প্রতিমা একচালা সাবেকি ধাঁচে গড়া। দেবী রাজরাজেশ্বরীর রূপে পূজিতা হন। বাহন সিংহও সাধারণ রূপে নয়, বরং নরসিংহ রূপে পূজিতা হন। অন্যদিকে দেবীর সন্তানদের অবস্থানও আলাদা—গণেশ থাকেন বাঁ দিকে, আর কার্তিক ডানদিকে। এই অনন্য রীতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
আরও পড়ুন- মহালয়া থেকে লক্ষ্মীপুজো, জানুন এবার কোন তিথি কখন শুরু আর শেষ!
সপ্তদশ শতকের এক নবমী তিথিতে ঘটে গিয়েছিল আশ্চর্য ঘটনা। তৎকালীন গৃহকর্তা রাঘবরাম ভট্টাচার্য নিজে চণ্ডীপাঠ করছিলেন। পাঠে সামান্য ভুল ধরিয়ে দেন তাঁর তৃতীয় পুত্র রামভদ্র। এতে রুষ্ট হয়ে রাঘবরাম পাঠ বন্ধ করে রামভদ্রকেই বসান মন্ত্রোচ্চারণে। ঠিক সেই সময়ই অলৌকিক দৃশ্যের সাক্ষী হয় ভট্টাচার্য পরিবার। দক্ষিণমুখী প্রতিমা ঘুরে দাঁড়ায় পশ্চিমমুখী হয়ে, সরাসরি রামভদ্রের দিকে। ধীরে ধীরে দেবীর গাত্রবর্ণ হলুদ থেকে রক্তবর্ণে রূপান্তরিত হয়। আর রামভদ্র ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে পড়েন। পাঠের শেষে তিনি দেবীর পায়ের কাছে মারা যান। দশমীতে বিসর্জনের সময় প্রতিমার সঙ্গে তাঁকেও নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন- বিশ্বকর্মা পুজো থেকে সুফল চান? এই নিয়মগুলি মানতে হবে কিন্তু!
সেই ঘটনার পর থেকে ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোয় আর কখনো চণ্ডীপাঠ হয় না। আজও দেবী পশ্চিমমুখী হয়েই পূজিতা হন। এই প্রথা একদিকে যেমন গভীর ভক্তির প্রতীক, তেমনই অজানা অলৌকিক শক্তির উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। আর, এই সব কারণেই নদিয়ার নবদ্বীপের এই লালদুর্গা শুধু ভট্টাচার্য পরিবারের নয়, সমগ্র এলাকার গর্ব। শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়েও এই পুজো সমান ভক্তি, শ্রদ্ধা আর কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। পুজোর দিনগুলিতে হাজারো ভক্ত এবং দর্শনার্থী এখানে ভিড় জমান দেবীকে দর্শনের জন্য।
আরও পড়ুন- পিতৃপক্ষে এই ৫ জিনিস দানে দারিদ্র্য হয় দূর, মেলে পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ
সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কারণে আজ লালদুর্গা পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। অনেক পর্যটক বিশেষভাবে এই ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখার জন্য নবদ্বীপে আসেন। লাল গাত্রবর্ণের দেবী তাঁদের কাছে এক রহস্যময় কাহিনি তুলে ধরে। ভট্টাচার্য বাড়ির লালদুর্গা পুজো একদিকে যেমন বাংলার বনেদি ঐতিহ্যের সাক্ষী, তেমনই এক অলৌকিক ঘটনার চিহ্ন বহন করে এই পুজো। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পশ্চিমমুখী প্রতিমা আর দেবীর টকটকে লাল রূপ সকলকে মুগ্ধ করে আসছে। আজও নবদ্বীপের বুকে দাঁড়িয়ে এই লাল দুর্গা (Red Goddess Durga Puja) বাঙালির গর্বের প্রতীক হয়ে রয়েছে।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us