Nature Thermometer Cricket: ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক গ্রামের সঙ্গে পরিচিত বেশিরভাগ মানুষেরই চেনা। একটানা চলা এই পোকার আওয়াজ সাহিত্যে নানাভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু, অনেকেই জানেন না যে ঝিঁঝিঁ পোকা আবহাওয়ার সূচক হিসেবে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ইতিমধ্যেই স্থান পেয়েছে। আর, সেটা আজ থেকে নয়। ১৮৯৭ সালের আগে থেকেই। ১৮৯৭ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী আমোস ডলবেয়ার তাঁর গবেষণায় ঝিঁঝিঁ পোকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন। যার উল্লেখ রয়েছে 'Reconnect With Nature' ওয়েবসাইটেও।
ডলবেয়ারের সূত্র
ডলবেয়ার তাঁর 'The Cricket as a Thermometer' প্রবন্ধে জানিয়েছেন যে ঝিঁঝিঁপোকার শব্দ তৈরির জন্য ব্যবহৃত পেশীগুলি ঠান্ডা আবহাওয়ার তুলনায় উষ্ণ আবহাওয়ায় আরও সহজে সক্রিয় থাকে। আবহাওয়ার সঙ্গে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ তৈরির এই সম্পর্ককে ঘিরে তিনি একটি সূত্র তৈরি করেছিলেন। যা ডলবিয়ারের সূত্র নামে পরিচিত। তাঁর এই সূত্র গোটা বিশ্ব মেনে নিয়েছে।
আরও পড়ুন- কারিপাতার সঙ্গে চুল পড়া ঠেকানোর কোনও সম্পর্কই নেই, এমনটাই দাবি চিকিৎসকের
ডলবেয়ারের সূত্রের গণিত
জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসনের মতে, ডলবিয়ারের সূত্র অনুসারে, ফারেনহাইটের তাপমাত্রা যা তা ১৫ সেকেন্ডে ঝিঁঝিঁর ডাকের সংখ্যাকে ৪০ দ্বারা যোগ করলে যা হয়, প্রায় তার সমান। অর্থাৎ, যদি ১৫ সেকেন্ডে ঝিঁঝি পোকা ২২ বার শব্দ করে, তবে বুঝতে হবে যে ওই অঞ্চলের তাপমাত্র ৬২ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কারণ, ২২+৪০= ৬২। আর, যদি ১৫ সেকেন্ডে ২২ এর বদলে ৩৫ বার শব্দ করে, তবে বুঝতে হবে যে ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কারণ, ৩৫+৪০= ৭৫।
আরও পড়ুন- নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে লাগান এই রস, দাদ দূর হবে তিন দিনের মধ্যে
কেন ঝিঁঝিঁ প্রকৃতির থার্মোমিটার?
'রিকানেক্ট উইথ নেচার' ওয়েবসাইট অনুসারে, ডলবিয়ার একটি তুষারাবৃত গাছ থেকে ডেকে চলা ঝিঁঝিঁপোকা অর্থাৎ যার ইংরেজি নাম ক্রিকেট, সেই পোকার ডাক শুনছিলেন। তিনি সিদ্ধান্তে এসেছিলেন, তাপমাত্রার সঙ্গে ঝিঁঝিঁপোকার ডাকের হার পরিবর্তিত হয়। তার কারণ হল, ঠান্ডা বা শীতলতা অর্থাৎ এন্ডোথার্ম অর্থাৎ ঝিঁঝিঁ পোকার শরীরের তাপমাত্রা বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে বদলায়। কিচিরমিচির করার জন্য ঝিঁঝিঁর পেশীগুলিকে সংকুচিত করতে হয়। এই পেশী সংকোচনের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক বিক্রিয়া কত দ্রুত ঘটতে পারে, সেটা নির্ভর করে তাপমাত্রা। উষ্ণ তাপমাত্রায় ঝিঁঝিঁর পেশীগুলি দ্রুত সংকুচিত হয়, যার ফলে তারা আরও বেশি করে কিচিরমিচির করতে পারে।
আরও পড়ুন- গমের না জোয়ারের রুটি, ডেইলি ডায়েটে কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর? জানুন পুষ্টিবিদদের মতামত
কীভাবে এবং কেন ঝিঁঝিঁ শব্দ করে?
ঝিঁঝিঁ পোকার এই শব্দ করার কায়দাটিকে স্ট্রিডুলেশন বলা হয়। যেখানে ঝিঁঝিঁ তার ডানা ঘষে এই শব্দ তৈরি করে। যখন তারা শব্দ করতে চায়, তখন তারা তাদের ডানা উঁচু করে এবং ডানার স্ক্র্যাপার নামে একটি অংশ অন্য ডানার ফাইল নামে একটি অংশের সঙ্গে ঘষা খায়। যা অনেকটা সূক্ষ্ম দাঁতযুক্ত চিরুনির দাঁতের ওপর আঙুল চালানোর মত ব্যাপার। আর, তার থেকেই শব্দ হয়।
আরও পড়ুন- বর্ষাকালে চালে তাড়াতাড়ি পোকা ধরে, এই কায়দায় মিলবে দ্রুত মুক্তি!
নেব্রাস্কা-লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, ঝিঁঝিঁর এই ডাক তার খিদে, বয়স, মিলনের সাফল্য এবং অন্যান্য পুরুষ ঝিঁঝিঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, ঝিঁঝিঁপোকা সাধারণত ৫৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নীচে এবং ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রায় ডাকে না।