Orange Juice Gut Health: সকালের শুরুটা যদি হালকা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য বা পানীয় দিয়ে হয়, তাহলে সারা দিনটা অনেকেরই ভালো কাটে। অনেকে সকালে খালি পেটে একগ্লাস কমলার রস পান করার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। এটি যেমন শরীরকে সতেজ করে, তেমনই পুষ্টির দিক দিয়েও ভালো। তবে, এই অভ্যাসটি স্বাস্থ্যকর না কি ক্ষতিকর— তা অনেকটাই নির্ভর করছে আপনার দেহের গঠন, লাইফস্টাইল এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপর।
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বৈজ্ঞানিক তথ্য জানলে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ হয়। চলুন দেখে নিই, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কমলার রস খাওয়ার ফলে আমাদের অন্ত্র এবং শরীর কীভাবে প্রভাবিত হয়।
আরও পড়ুন- সরষের তেলের এই ৯ বৈজ্ঞানিক উপকারিতা, শুনলে চমকে উঠবেন!
পুষ্টিগুণে ভরপুর কমলার রস
কমলার রস হল ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এই উপাদানগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়, কোষের জ্বালাপোড়া কমায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সহায়তা করে। সকালে প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে একগ্লাস কমলার রস খেলে শরীর আয়রনের মত গুরুত্বপূর্ণ খনিজে ভরপুর থাকে। দিনভর শরীরের আয়রনের অভাব হয় না।
আরও পড়ুন- সাপ কীভাবে খায়? জানুন, সাপের খাওয়া নিয়ে এই ৮ চমকে যাওয়ার মত তথ্য!
খালি পেটে খেলে কী সমস্যা হতে পারে?
মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই অম্বানি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সোনালি গৌতম জানিয়েছেন, কমলার রস অ্যাসিডিক প্রকৃতির। এর pH প্রায় ৩.৫। তাই যাঁদের গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের প্রবণতা আছে, তাঁদের জন্য সকালে খালি পেটে কমলার রস ক্ষতিকর হতে পারে।
অ্যাসিডিটি ছাড়াও, কমলার রসে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশ বেশি। যা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। একটি সাধারণ গ্লাস কমলার রসে ২০-২৫ গ্রাম চিনি থাকতে পারে। যেহেতু রসে ফাইবার থাকে না, তাই এই চিনি রক্তে দ্রুত শোষিত হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। সময় গেলে এটি ইনসুলিন প্রতিক্রিয়াকে দুর্বল করে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুন- ভাজা পেঁয়াজের সঙ্গে নারকেল, বানিয়ে ফেলুন ডিমের দুর্দান্ত ঝাল এগ মলি!
দাঁতের ক্ষতি: আরেকটি অজানা বিপদ
কমলার রসের অ্যাসিড এবং প্রাকৃতিক চিনির সংমিশ্রণ দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি দাঁতের ক্ষয়, ক্যাভিটি এবং সংবেদনশীলতা তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রস খাওয়ার পরে দ্রুত মুখ ধুয়ে নেওয়া উচিত। এতে স্ট্র ব্যবহার করলে দাঁতের ওপর প্রভাব কম পড়ে।
আরও পড়ুন- রাখী বন্ধনে বাড়িতেই বানান এই ৩ মিষ্টি, রেসিপিটা খুবই সহজ
ফাইবার নেই, অন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
যখন আপনি গোটা কমলা খান, তখন আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ঢোকে। যা অন্ত্রের চলাচল সুষ্ঠু রাখতে সাহায্য করে। ফাইবার অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা সামগ্রিক হজম প্রক্রিয়া ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কিন্তু কমলার রস তৈরি করার সময় এই ফাইবার বাদ চলে যায়, যার ফলে রসটি তেমন কাজে লাগে না। বরং, এই রস বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্যকর কায়দায় কীভাবে কমলার রস খাওয়া যেতে পারে?
সঠিক নিয়ম মেনে খেলে কমলার রস অবশ্যই উপকারী হতে পারে। নীচে কিছু টিপস দেওয়া হল:
- মাত্রা বজায় রাখুন: প্রতিদিন এক গ্লাস বা ১৫০ মিলিলিটারের বেশি কমলার রস না খাওয়াই ভালো।
-
খাঁটি রস বেছে নিন: যে কোনওভাবে ফ্লেভার দেওয়া বা সংরক্ষিত জুস না খেয়ে তাজা রস খান।
-
চিনি মেশাবেন না: স্বাভাবিক মিষ্টতাই যথেষ্ট।
-
ফাইবার-প্রোটিন যুক্ত নাশতার সঙ্গে খান: ওটস, ডালিয়া, গোটা শস্যের টোস্ট ইত্যাদির সঙ্গে কমলার রস পান করলে হজম এবং পুষ্টির শোষণ ভালো হয়।
-
খালি পেটে না খাওয়াই ভালো: সকালে একেবারে খালি পেটে খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। একটু খাবার খাওয়ার পর কমলার রস খেলে অ্য়াসিডিটির সমস্যা কম হয়।
-
আস্ত কমলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন: রসের পাশাপাশি আস্ত কমলায় ফাইবারও পাওয়া যায় যা হজমের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
মোদ্দা কথাটা হল, কমলার রস উপকারী নাকি অপকারী তা নির্ভর করছে আপনি কবে, কীভাবে এবং কতটা পান করছেন তার ওপর। খালিপেটে বেশি পরিমাণে রস খেলে অ্যাসিডিটি, দাঁতের ক্ষয় এবং রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু পরিমিত মাত্রায়, ফাইবার ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে খেলে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। হজম এবং পুষ্টি শোষণে সহায়তা করতে পারে। আপনার যদি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই কমলার রস পান করা উচিত।