Vaccine Heart Attack Prevention: চিকিৎসা জগতে তোলপাড় ফেলা সাফল্য। একটা ভ্যাকসিনেই মিলছে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে আট বছরের সুরক্ষা। এই ভ্যাকসিনের সাফল্যে রীতিমতো খুশির হাওয়া চিকিৎসা মহলে।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, শিংলস ভ্যাকসিন কেবল ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধেই কার্যকর নয়, এটি হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্য হারে কমায়। দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়াং হি ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ মেডিসিনের গবেষকরা ১২ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য বিমার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
আরও পড়ুন- শিশুদের নতুন জেনেটিক ডায়াবেটিস, শঙ্কিত চিকিৎসক মহল
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যক্তি শিংলস ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে হৃদরোগের সামগ্রিক ঝুঁকি ২৩% কমেছে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২২% এবং হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি ২৬% কমেছে। এই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী— সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া গিয়েছে ভ্যাকসিন নেওয়ার ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে এবং এর প্রভাব স্থায়ী হয়েছে প্রায় ৮ বছর।
আরও পড়ুন- ক্রনিক ব্যাক পেইন থেকে মুক্তি, চমকপ্রদ চিকিৎসায় চোখধাঁধানো সাফল্য, কাজ করছে ম্যাজিকের মত
শিংলস কী এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?
শিংলস হল এক ধরনের ভাইরাল ইনফেকশন যা শরীরের একপাশে দাগ বা ফুসকুড়ি তৈরি করে। এটি চিকেনপক্স ভাইরাস (varicella-zoster) দ্বারা সৃষ্টি হয়। যাঁরা ছোটবেলায় চিকেনপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের শরীরে এই ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং পরে জীবনের কোনও এক সময়ে পুনরায় সক্রিয় হয়ে শিংলস তৈরি করে।
আরও পড়ুন- শরীর ভালো রাখতে বাদাম, আখরোট, কাজু তো খাচ্ছেন! জানেন আপনার কোন ড্রাই ফ্রুটস খাওয়া উচিত?
৫০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের মধ্যে এই ভাইরাস পুনরায় সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে, বিশেষ করে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল।
হৃদরোগ প্রতিরোধে কীভাবে কাজ করে ভ্যাকসিন?
যদিও পুরোপুরি বোঝা যায়নি কীভাবে এই ভ্যাকসিন হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে, গবেষকদের মতে শিংলস সংক্রমণ নিজেই হৃদযন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শিংলস ইনফেকশনের ফলে শরীরে প্রদাহ, রক্তনালীর ক্ষতি এবং রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুন- ওষুধেই দফারফা! ঘুমোনোর ওষুধ খেতে গিয়ে এই ভুলগুলো করছেন না তো?
ভ্যাকসিন এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করে বলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পুরুষদের এবং যাঁরা কমবয়সি ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন না— তাঁদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনের প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
ভারতের প্রেক্ষাপটে কী জানা জরুরি?
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দুটি ধরনের শিংলস ভ্যাকসিন অনুমোদিত — একটি লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড (live-attenuated) ভ্যাকসিন এবং অপরটি রিকম্বিন্যান্ট (recombinant) প্রযুক্তিতে তৈরি। উভয় ভ্যাকসিনই ভারতে পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির— বিশেষ করে যাঁদের ইমিউনিটি দুর্বল— তাঁদের শিংলস ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। তবে, গবেষণাটি শুধুমাত্র পুরাতন লাইভ ভ্যাকসিনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, ফলে রিকম্বিন্যান্ট ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে হৃদরোগ প্রতিরোধের দিক থেকে আরও গবেষণা দরকার।
শিংলস ভ্যাকসিন শুধু ভাইরাস প্রতিরোধেই নয়, বরং হৃদরোগ প্রতিরোধেও একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে। এটি আমাদের দেশে ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য একটি অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিচ্ছে। যাঁরা এখনও ভ্যাকসিন নেননি, তাঁদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে বিবেচনা করা। এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ।