Dashahara-Mansa Puja Lifestyle: দশহরার দিনেই কেন মনসা পুজো করা হয়? এর পিছনে রয়েছে পুরাণের এক বিরাট কাহিনি! এই দশহরা শব্দটি আমরা পেয়েছি সংস্কৃত ভাষা থেকে। যেখানে ব্যাকরণ অনুযায়ী, দশ+অহ= দশারহ থেকে এসেছে দশহরা শব্দ। এর মধ্যে 'অহ' শব্দের অর্থ হল দিন।
বিজয়া দশমী
দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের বিজয়োত্সবকে হিন্দু সমাজ দশহারা বা দশেরা বলে জানে। বাঙালিদের কাছে যা বিজয়া দশমী। এই দশেরা হল আশ্বিন মাসে দেবীপক্ষের দশম দিন বা নবরাত্রির দশম দিন। ওই দিন লঙ্কায় দশানন রাবণকে হারিয়ে শ্রীরামচন্দ্র যুদ্ধ জিতে সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন। স্থানীয় ভাষায় দশহরা শব্দের অর্থও সেটাই বোঝাতে চায়।
আরও পড়ুন- মাছি চলে আসছে! ভনভনে বিরক্ত? চোখের নিমেষে তাড়ান পুদিনা পাতা দিয়ে, রইল ৫ দুর্দান্ত টিপস
দেবী বিন্ধ্যবাসিনী
যেখানে দশ মানে দশানন রাবণ। আর হরা মানে তাঁর হার বা পরাজয়। তবে জৈষ্ঠ্যমাসের শুক্লা দশমীর দশহারাও কিন্তু হিন্দু সমাজের কাছে বিজয়া দশমী। কারণ, দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কথা শুম্ভ ও নিশুম্ভ জানতে পারার পর তাঁরা দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে বিন্ধ্যাচলে গিয়েছিলেন। সেখানে দেবী বিন্ধ্যবাসিনী রূপে তাঁদের বধ করেছিলেন। এই যোগমায়া বিন্ধ্যবাসিনী দেবী দুর্গা নাকি মহিষাসুর বধের পর দেবী দুর্গার তেজ থেকে আবির্ভূতা হয়েছিলেন বিন্ধ্যাচলের পর্বত শিখরে। স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী এই দেবী বিন্ধ্যবাসিনী বধ করেছিলেন দুর্গাসুরকেও। আর, সেই কারণেই অরণ্য ষষ্ঠীর দিনে দেবী বিন্ধ্যবাসিনী দুর্গার পুজোর পরে এই দশহরা।
আরও পড়ুন- ফের বাড়ছে করোনা! কী সাবধানবাণী শোনালেন চিকিৎসক অরুণ কুমার? জানুন বিশদে
এই তিথির তাৎপর্য
শাস্ত্রমতে দশহরা তিথি পূর্ব দশ জন্মে করা পাপ এবং এ জন্মের ১০টি পাপ হরণ করে থাকে। গঙ্গাপুজোর সঙ্গে এই দিন মনসামঙ্গলের গান করার রীতি বাংলায় চালু আছে। এই দিন প্রধান ধর্মীয় কাজ হল গঙ্গাস্নান। আর, ১০টি ফুল, ১০টি ফল এবং ১০টি প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবী গঙ্গার পুজো করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। দশহরার এই গঙ্গাস্নানে গত ১০ জন্মে অর্জন করা যাবতীয় পাপ ক্ষয় হয়। আর, অযুত (হাজার) অশ্বমেধ যজ্ঞের ফললাভও হয়। এই যোগ ভগীরথ দশহরা নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন- গ্যাসের চুলায় মাটির পাত্রে রান্না করলে হাঁড়িতে ফাটল ধরছে? এই সহজ টিপসগুলি জানলে আর কোনও ভয় নেই!
দশহরায় গঙ্গা পুজো
স্মার্ত মতে, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে গঙ্গাস্নানে এই ১০ রকম পাপের নাশ ঘটে। আর পুরাণ মতে, এই দিনই ভগীরথ মহাদেবের জটাবন্দি দেবী গঙ্গা মর্ত্যে আগমন করেছিলেন। তাই এই দিন তিনি আরাধ্যা। কৃষি প্রধান ভারতে কৃষি–সহ সভ্যতার বিকাশে মানুষ প্রবহমান জলধারাকে খাল কেটে বারবার লোকালয়ে নিয়ে এসেছে। সেই সব ঘটনা এই পৌরাণিক কাহিনির মাধ্যমে বর্ষার ঠিক আগে দশহরা পালনের মধ্যে দিয়ে যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যাতে প্রমাণ হয় যে, নদীর সঙ্গে এদেশের মানুষের সম্পর্ক ঠিক কতটা অচ্ছেদ্য।
আরও পড়ুন- পাকা চুল পড়া বন্ধ করবে এবং শিশুর মতো চুল গজাবে, বাড়িতে তৈরি করুন ডা. নিত্যার বিশেষ ভেষজ তেল
দশহরার সঙ্গে দেবী মনসার সম্পর্ক
প্রশ্ন হল, দশহরার সঙ্গে দেবী মনসা জড়ালেন কী করে? আসলে জল আর জঙ্গল দিয়ে ঘেরা রাঢ়বঙ্গের জনপ্রিয় লৌকিক দেবী মনসা। যিনি একাধারে সর্পদেবী। অন্যদিকে সন্তানসন্ততির এবং সৌভাগ্যকামনারও তিনিই দেবী। মনসামঙ্গল অনুযায়ী, দেবী মনসা শিবের মানসকন্যা। তিনি নাগরাজ বাসুকির ভগিনী। বছরের নানা সময়ে বিভিন্ন জায়গায় মনসাপুজোর চল থাকলেও জৈষ্ঠ্যমাসের শুক্লা দশমীতে দশহরার দিনই মা মনসার বছরের প্রথম স্নানযাত্রা শুরু হয়। মনে করা হয়, বর্ষার আগে সর্পকুলের বাড়বাড়ন্ত হয় এই দিন থেকেই। তাই দশহরার দিনে মা মনসার পুজো করে দেবীকে সন্তুষ্ট রাখা হয়। মূলত, আর পাঁচটি ব্রতের মতই আত্মকল্যাণের সঙ্গে পারিবারিক কল্যাণে এই পুজোর আয়োজন।
আরও পড়ুন- হার্পিকের দরকার নেই! দই আর শ্যাম্পু দিয়েই পান দাগমুক্ত ঝলমলে বাথরুম আর রান্নাঘর
সেন রাজবংশের আমলে দশহরা
বাংলায় সেন রাজাদের আমলে গঙ্গা তীরবর্তী রাজধানী ছিল নবদ্বীপ। সেখানকার গঙ্গার ঘাট সেই সময়ের আর্থ–সামাজিক এবং ধর্মীয় মেলবন্ধনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল। সেন রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই সময় দশহরা তিথিতে নবদ্বীপে সাড়ম্বরে গঙ্গা পুজো হত। বড় বাণিজ্যতরী নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বণিকেরা পৌঁছতেন নবদ্বীপে। দেবী গঙ্গার মূর্তির পুজো হত তাঁদের নৌকোতেই।
বাংলায় দশহরার প্রচলন
সেই সময় ঘাটের ধারে ভোর থেকে বসত জমজমাট মেলা। সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলত দান–ধ্যান, ভুরিভোজের আয়োজন। সেন রাজারা নিজেরা উপস্থিত থাকতেন এই মেলায়। বণিকরা রাজাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। তাঁদের মধ্যে মত বিনিময় হত। ইতিহাসবিদদের মতে, বাংলার হিন্দু সংস্কৃতির অনেক কিছুর মতই সেন রাজাদের আমলে দশহরা তিথিতে দেশের প্রধান জলবাণিজ্য পথ গঙ্গা নদীর পুজো বঙ্গে শুরু হয়েছিল।
২০২৫ সালে দশহরা তিথি
দশমী তিথি শুরু হয়: ৪ জুন ২০২৫, বুধবার রাত ১টা ৫৫ থেকে।
দশমী তিথি শেষ হবে: ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার রাত ৩টে ২৩ এ।