'সারা দেশে এনআরসি হবে ২০২৪ এর মধ্যে', স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুঙ্কারের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই কড়া জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, 'এনআরসি বিজেপির রাজনৈতিক অলঙ্কার। ভারতে এনআরসি অসম্ভব, বিজেপি রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে এনআরসি'র কথা বলে বেড়াচ্ছে। জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে তা লাগুর চেষ্টা হলে সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।'
প্রথম থেকেই এনআরসি লাগুর বিরোধিতা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যের আশ্বাস, 'বাংলায় এনআরসি করতে দেওয়া হবে না।' বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'এনআরসি জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে লাগু করা উচিত হবে না। এর ফলে দেশে উত্তেজনা বাড়বে। বিজেপির ভিত্তি বিভক্তিকরণের রাজনীতি। আমরা বাংলায় এনআরসি হতে দেব না।' গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করে তাঁর সংযোজন, 'বিজেপির রাজনৈতিক অলঙ্কার এনআরসি। তারা এনআরসিকে ব্যবহার করে ভোট রাজনীতি করছে। বাস্তবে, ভারতে এনআরসি অসম্ভব। বিজেপি রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে এইসব বলে বেড়াচ্ছে।' আগেই এনআরসি-কে ফাঁদ বলে নিন্দা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনও বললেন, 'জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণের ফাঁদে আমরা পা দেব না। যারা এদেশে দীর্ঘ দিন বসবাস করছেন, তারাই এদেশের নাগরিক। কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া যাবে না।'
মমতার প্রশ্ন, 'যারা এই দেশে দশকের পর দশক রয়েছেন হঠাৎ এক ঘোষণায় তাদের কীভাবে বিদেশি বলে দেওয়া সম্ভব। এই প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া যায় না।'
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহই তো ‘অভিবাসী’: অধীর চৌধুরী
সোমবারই ঝাড়খণ্ডে প্রচারে গিয়ে এনআরসির পক্ষে সওয়াল করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাঁর ঘোষণা, 'রাহুল বাবা (কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি) বলেছেন অনুপ্রবেশকারীদের বহিষ্কার করবেন না। কেননা তাঁরা কোথায় যাবেন, কী খাবেন? তবে আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে ২০২৪ সালে দেশের জাতীয় নির্বাচনের আগেই সমস্ত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করা হবে।'
অসমের এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম। এদের মধ্যে বেশির ভাগই বাঙালি। যার আঁচ এসে পড়ে বাংলায়। রাজ্যের বহু মানুষের মনে এনআরসি ভীতি দানা বেঁধেছে। পশ্চিমবঙ্গে ১০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। তাই এনআরসি বিরোধীতাকে আঁকড়েই আপাতত কেন্দ্রের মোদী সরকারের সমালোচনায় মখর তৃণমূল। ইতিমধ্যেই এনআরসি বিরোধী নানা কর্মসূচি পাল করেছে রাজ্যের শাসক দল।
সম্প্রতি রাজ্যের তিন উপনির্বাচনেও এনআরসি আতঙ্ক ছাপ ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কালিয়াগঞ্জের মত কেন্দ্রে হার হয়েছে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীর। লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রেই প্রায় ৫০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু, উপনির্বাচনে পদ্ম পাপড়ি নুয়ে পড়েছে। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও স্বীকার করেছেন 'এনআরসি-ই' তফাৎ গড়ে দিয়েছে। ২০২১ সালে বাংলা জয়ের যে স্বপ্ন বিজেপি দেখছে এনআরসি তাতে কাঁটা হবে না তো? আপাতত এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের। এই পরিস্থিতিতে এরআরসি ইস্যুতে সুর চড়িয়ে বিজেপি বিরোধিতা জারি রাখতে মরিয়া তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
Read the full story in English