দল একদিকে, তিনি আরেক দিকে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ঘিরে নীতীশ কুমারের জেডিইউ-এর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব যেমন ক্রমশ বাড়ছে, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের অবস্থানের আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন তিনি। এমনকী, কৌশল রটনা করে ২০১৪ সালে দিল্লির মসনদে যাঁকে বসতে তিনি বিশেষ সাহায্য করেছিলেন, সেই নরেন্দ্র মোদীর ক্যাবের বিরুদ্ধে চরম তোপ দাগলেন প্রশান্ত কিশোর। সংযুক্ত জনতা দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা অধুনা তৃণমূলের ভোটকুশলী বুধবারই নিজের দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ঘিরে বৃহস্পতিবারও ফের নিজের দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে সরব হলেন পিকে। আর এরপরই নীতীশ কুমারের সঙ্গ ছেড়ে পিকের ক্রমশ মমতা-বৃত্তে ঢুকে পড়ার বিষয়ে জল্পনার জল গড়াচ্ছে। পিকের এহেন রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এখন রীতিমতো চর্চা করছে দেশের রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: ক্যাব-এনআরসি নিয়ে গণ আন্দোলনের ডাক মমতার, রবিবার থেকে রাজ্যজুড়ে পথে তৃণমূল
While supporting #CAB, the JDU leadership should spare a moment for all those who reposed their faith and trust in it in 2015.
We must not forget that but for the victory of 2015, the party and its managers wouldn’t have been left with much to cut any deal with anyone.
— Prashant Kishor (@PrashantKishor) December 11, 2019
আরও পড়ুন: নিজের দলের সমালোচনা করে মমতার অবস্থানকেই সমর্থন, বদলাচ্ছে পিকের রাজনৈতিক কেরিয়ার?
২০১৫ সালে বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের ফলের প্রসঙ্গ টেনে এদিন জেডিইউ নেতৃত্বের উদ্দেশে পিকের টুইট বার্তা, ‘‘ক্যাব সমর্থনের সময় তাঁদের কথা ভাবা উচিত ছিল জেডিইউ নেতৃত্বের, যাঁরা ২০১৫ সালে দলের উপর নিজেদের আস্থা, বিশ্বাস আরও অটুট করেছিলেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ২০১৫ সালে আমরা কারও সঙ্গে আঁতাঁত করে জিতিনি’’। উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব বিলকে সমর্থন জানানো নিয়ে নীতীশ নেতৃত্বের উপর আগেও ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন পিকে। এরপরই জানা যায়, দলের অন্দরে ক্যাব সমর্থনের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছে স্বয়ং নীতীশ কুমারকে। কিন্তু লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও ফের ক্যাব ইস্যুতে অবস্থান বদল না করায় জেডিইউ নেতৃত্বের উপর আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করে যে টুইট করলেন পিকে, তা রাজনৈতিকভাবে বার্তাবহী বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
We are told that #CAB is bill to grant citizenship and not to take it from anyone. But the truth is together with #NRC, it could turn into a lethal combo in the hands of Government to systematically discriminate and even prosecute people based on religion.#NotGivingUp
— Prashant Kishor (@PrashantKishor) December 12, 2019
আরও পড়ুন: হাইকোর্টে ফের ধাক্কা মুকুল রায়ের, বসতে হবে কণ্ঠস্বর পরীক্ষায়
অন্যদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং এনআরসি ইস্যুতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই খড়গহস্ত মমতা, ইদানীং আরও আক্রমণাত্মক হয়েছেন পিকের পরামর্শেই। রাজ্যসভায় ক্যাব পাসের পর তৃণমূলের বিরোধিতার সুরেই মোদী বাহিনীকে ঠুকে টুইটারে প্রশান্ত কিশোর লিখেছেন, ‘‘আমাদের বলা হচ্ছে ক্যাব নাগরিকত্ব দেবে। কিন্তু বাস্তব হল, এনআরসি আর ক্যাব সরকারের জোড়া প্রাণঘাতী হাতিয়ার, যা দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে’’।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, ক্যাব ইস্যুতে এনডিএ শরিক জেডিইউ-এর অবস্থানের বিরুদ্ধে যেভাবে সোচ্চার হচ্ছেন পিকে, তাতে নীতীশ কুমারের দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব যেমন প্রকট হচ্ছে, তেমনই এ ইস্যুতে যেভাবে সরকার বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন প্রশান্ত কিশোর, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের প্রতিই ক্রমশ ঝুঁকছেন তিনি। অন্যদিকে, পিকের পরামর্শ মেনেই এনআরসি-ক্যাব ইস্যুকে হাতিয়ার করে সদ্য সমাপ্ত বাংলার তিন উপনির্বাচনে জয়ের হাসি হেসেছে ঘাসফুল শিবির। এমনটাই ব্যাখ্যা রাজনীতির কারবারীদের একাংশের। সেই প্রেক্ষাপটে এ ইস্যুতে পিকের রাজনৈতিক অভিমত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।