৬ জন বিধায়ক, ১ জন লোকসভার সাংসদকে কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এছাড়া বিদায়ী ৮৭ জন কাউন্সিলরের নামও প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে ঘাসফুল শিবির। রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ 'এক ব্যক্তি এক পদ' নিয়ে বিতর্কে মশগুল হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে জয়ের পর মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া বা অন্য পদ থেকে ইস্তফা দিলে সেই বিতর্ক উবে যাবে। তবে এই প্রার্থী তালিকার পিছনে বড়সড় রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। সেখানে 'এক ব্যক্তি এক পদ' বিতর্ক অত্যন্ত গৌণ বিষয় বলেই তাঁদের অভিমত।
তৃণমূল কংগ্রেসে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতিতে ব্যতিক্রম সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি নিজেও সেই কারণ জানিয়েছেন প্রকাশ্যে। মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও দলের নেতৃত্ব তাঁকে সভানেত্রী পদ থেকে ছাড়ছে না। অগত্যা! তবে নানা ক্ষেত্রেই তৃণমূল কংগ্রেস 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি নিয়েই চলছে। মন্ত্রীদের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বিদায়ী কাউন্সিলর হওয়া সত্বেও পুরসভায় প্রশাসক মন্ডলীতে জায়গা পাননি স্থানীয় বিধায়ক। কলকাতা পুরনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণায় দল উল্টো পথে হাঁটল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে প্রার্থী হিসাবে যে তালিকাই প্রকাশ করা হোক পরবর্তীতে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতির সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আরও পড়ুন- নেতা-মন্ত্রীদের ছেলে-মেয়েরা প্রার্থী, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় চমক
এদিকে কলকাতা পুর এলাকার বিধায়কদের অনেকেই কাউন্সিলর হতে চেয়েছেন। সূত্রের খবর, কোনও ক্ষেত্রে সেই আবেদনকে মান্যতা দিয়েই তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রেখে কাজ করতে তাঁরা আগ্রহী! একাধিক বিদায়ী বর্ষীয়ান কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক-সাংসদকে দল প্রার্থী করেছে। পারিবারিক সূত্রেও অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এলেও যুবদের একেবারে সামনের সারিতে নিয়ে এসে পুরনোদের সরিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেয়নি দল। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মুখে শীর্ষ নেতৃত্ব যাই ঘোষণা করুক না কেন বাস্তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক বাধ্যবাধকতা থেকেই যায়। প্রার্থী তালিকায় সেটাই স্পষ্ট।
আরও পড়ুন- কলকাতা পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ ৩৯ বিদায়ী কাউন্সিলর, লড়াইয়ে ৬ বিধায়ক-১ সাংসদ
অভিজ্ঞ মহলের মনে করে, কলকাতায় প্রার্থী তালিকার ক্ষেত্রে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি নিয়ে যে সমালোচনাই হোক না কার্যত দলের অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতৃত্বেই আস্থা রাখল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরেই কলকাতা পুরসভার খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অবগত তাঁদের প্রায় সকলকেই প্রার্থী করেছে ঘাসফুল শিবির। বয়স সেখানে কোনও ফ্যাক্টর হয়নি। তারওপর পারিবারিক সূত্রে প্রার্থী তো রয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, স্থানীয় নির্বাচনে এই বর্ষীয়ান নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখাই শ্রেয় বলে মনে করেছে তৃণমূল। রাজনৈতিক জমি পোক্ত রাখতে প্রবীণ কাউন্সিলরদের এতদিনের জনসংযোগ বা জনভিত্তিকেই হাতিয়ার করতে চায় দলীয় নেতৃত্ব। সদ্য় বিপুল আসন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে পা বাড়াল না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কলকাতা পুর নির্বাচনে অনেকটা গতানুগতিক পথেই হাঁটছে দল।
আরও পড়ুন- প্রশ্নের মুখে তৃণমূলের ‘এক ব্যক্তি-এক পদ’ নীতি, পুরযুদ্ধে ফিরহাদ-অতীন-দেবাশিস-মালাতেই আস্থা মমতার
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন