বিজেপি বিরোধী জোটের প্রার্থী হলেন সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহসভাপতি যশবন্ত সিনহা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে বিরোধী নেতৃত্বকে একজোট করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন-তিনজন প্রার্থী হতে না চাওয়ায় কপাল খোলে প্রবীণ রাজনীতিক যশবন্ত সিনহার। সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল নেতা রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ায় আখেড়ে ঘাসফুল দলের কী লাভ, কী ক্ষতি সেটাই এখন বড় বিষয়।
প্রথম বৈঠকে হাজির ছিলেন না আপ, টিআরএস, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, বিজু জনতা দলের প্রতিনিধিরা। তবে বিজেপি বিরোধী ১৭ দলের প্রতিনিধি সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন। শরদ পাওয়ার রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। পরবর্তীতে ফারুক আবদুল্লা ও গোপালকৃষ্ণ গান্ধীকে প্রার্থী হতে প্রস্তাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরাও প্রার্থী হতে রাজি হননি। শেষমেশ শিকে ছিঁড়ল বিজেপি থেকে আসা প্রাক্তন তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিনহার। প্রথমবার প্রস্তুতি বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বৈঠকে হাজির ছিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- আদিবাসী মুখেই আস্থা পদ্মের, NDA-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মূর্মু
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২২ অবিজেপি দলকে বৈঠকে ডাকেন। সাধারণত বিজেপি বিরোধীদের নেতৃত্বে থাকে কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, এবার হঠাৎ তৃণমূল কংগ্রেস সেই বৈঠক ডেকে দেওয়ায় বিরোধী নেতৃত্বের দায়িত্ব থেকে কংগ্রেসকে কিছুটা পিছনে ফেলে দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় কংগ্রেস না ডাকলেও বৈঠকে হাজির ছিল না আপ, ওয়াইআরএস কংগ্রেস, বিজেডি, টিআরএসের মতো নানা রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধি। এদিন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঘোষণার বৈঠকেও এই দলগুলির কোনও প্রতিনিধি হাজির ছিলেন না।
২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বাংলার রাজ্যপালের দায়িত্বে থাকা গোপালকৃষ্ণ গান্ধি ২০১৭ সালে উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিরোধীদের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। হেরে গিয়েছিলেন বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কাছে। তবে এবারও যা পরিস্থিত তাতে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অবিজেপি প্রার্থী হলেও রাজনৈতিক দল হিসাবে যশবন্ত সিনহার গায়ে এখন তৃণমূল কংগ্রেসের ট্যাগ লেগে গিয়েছে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, যশবন্ত সিনহা হেরে গেলেও তৃণমূল কংগ্রেস জল মেপে নিতে পারবে, কারা তাঁদের সঙ্গে রইল। কারা আগামিদিনে বিজেপি বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূল কংগ্রেসকে সাঙ্গ দেবে তা আন্দাজ করতে পারবে মমতার দল। এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের কাছেই এটাই মূল প্রাপ্তি। আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে দিল্লি দখলের লড়াই করবে তৃণমূল। বিরোধী জোটের ছোট্ট পরীক্ষা হয়ে যাবে এই নির্বাচনে।
আরও পড়ুন- যশবন্তেই সিলমোহর, বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকেই সমর্থন AAP-TRS-AIMIM-র
প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সময় প্রথম দিকে বিরোধিতায় নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। শেষ লগ্নে অবশ্য প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই সময় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিল সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিশ্চয় ভোলেনি দলীয় নেতৃত্ব। এবারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠকে থাকেনি বন্ধু দল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপও। বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর নীরব। টিআরএস ও আপ যশবন্ত সিনহাকে সমর্থন করবে বলে দাবি করেছেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের শেষলগ্নে পাশা খেলার চাল কীভাবে উলটে যাবে তা বোঝাই দুষ্কর।