ভারত কি ২০৩৬ বা তার পরে অলিম্পিক আয়োজন করতে পারে? সেই খবরেই আপাতত সরগরম ক্রীড়ামহল। অলিম্পিক আয়োজক দেশ হিসাবে উঠে আসবে ভারতের নাম? জল্পনা ছিলই, তবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি থমাস বাখের এক বিবৃতি সেই জল্পনাতেই সিলমোহর দিল। কি বলেছেন আইওসি প্রেসিডেন্ট? আইওসি সভাপতি থমাস বাখ সাংবাদিক সম্মেলনে সম্প্রতি বলেছেন, ভারত সহ তৃতীয় বিশ্বের একাধিক দেশ অলিম্পিক আয়োজন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কবে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে পারে বিশ্ব অলিম্পিক?
সেব্যাপারে এখনই নিশ্চিত করে তিনি কিছু না জানালেও আইওসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন ২০৩৬ অথবা ২০৪০ সালের অলিম্পিক গেমসের আয়োজক দেশ হিসাবে উঠে আসতেই পারে ভারতের নাম! এত দেরি কেন এই বিষয়ে বাখ বলেন আগামী তিনটি অলিম্পিকের আয়োজক দেশের নাম ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বনগাঁর তনয় এবার টি২০ বিশ্বকাপে! রোহিত-কোহলিদের সামনেই অগ্নিপরীক্ষা দিনমজুরের ছেলের
২০২৪ সালের অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে প্যারিসে। লস এঞ্জেলেস ২০২৮ সালের অলিম্পিক হোস্ট করবে এবং ২০৩২ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজক শহর হিসাবে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের নাম। তাহলে কি ২০৩৬ অলিম্পিক গেমস ভারতে হবে? সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু না বললেও বাখের কথাতে এমনই এক জল্পনা উঠে এসেছে। বৈশিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং অনান্য নানাবিধ কারনে অনেক দেশই অলিম্পিকের মত গেমস আয়োজনে পিছিয়ে আসছে। এমন জল্পনাও জোরালো হয়েছে। যদিও এই তথ্যকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি থমাস বাখ।
কী বলেছেন আইওসি সভাপতি থমাস বাখ?
টোকিও অলিম্পিক চলাকালীন এক সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেদের ভালো অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বাখ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ আগামীদিনে অলিম্পিক ইভেন্ট আয়োজনে আগ্রহী। সেই তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে ভারতের নাম। ভারত ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি এবং কাতারও তাদের দেশের মাটিতে এই গেমসের আয়োজন করতে বিশেষ ভাবে আগ্রহী। তিনি জানিয়েছেন, “এই বিষয়গুলিই থেকেই আমরা বলতে পারি আমরা সত্যিই খুব ভালো দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানে রয়েছি।"
আরও পড়ুন: জুভেন্তাস-রোনাল্ডো বিচ্ছেদ! কেরিয়ারের শেষবেলার মহাতারকাকে নিয়ে ঝুঁকিই নিল ইউনাইটেড
গেমস আয়োজনে আগ্রহী কোন দেশগুলো?
বাখ যে ভারত সহ যে ৪ টি দেশের কথা জানিয়েছেন তার মধ্যে তিনটি দেশ এর আগে কখনই অলিম্পিকের মত ইভেন্ট আয়োজন করেনি। জার্মানি সর্বশেষ প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে গেমসটি আয়োজন করেছিল।
ভারতের তরফে অলিম্পিকের আয়োজনের ইচ্ছার কথা এর আগেও অনেকবার শোনা গেলেও কখনই তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (আইওএ) এর আগে জানিয়েছিল যে, তারা আগামী দেড় দশকে এশিয়ান গেমস, যুব অলিম্পিক এবং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর।
আইওএ সভাপতি রাজীব মেহতার গলাতেও একই সুর ধরা পড়েছে। তবে এবিষয়ে দিল্লি সরকার জানিয়েছে, স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ২০৪৮ সালে অলিম্পিক গেমস আয়োজনের লক্ষ্য রয়েছে ভারতের।
আরও পড়ুন: অবসর জল্পনা উস্কে মাঠেই ‘ইঙ্গিত’ রোনাল্ডোর! হতাশায় একী করলেন মহাতারকা
আগামী বছর কাতারে আয়োজিত হতে চলেছে ফিফা বিশ্বকাপ। এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে ক্রীড়াবিশ্বে নিজেদের এগিয়ে রাখার দৌড়ে পা রাখতে চলেছে উপসাগরীয় এই ক্ষুদ্র দেশ। অভিজাত ক্রীড়াবিদদের নিজের দেশের নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে ক্রীড়া বিশ্বে তার পদচিহ্ন প্রসারিত করার চেষ্টা করছে কাতার। স্বাভাবিক ভাবেই অলিম্পিক ইভেন্ট আয়োজন সেইসবেরই সম্প্রসারণ বলেই মনে করছেন ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসের আয়োজন করে সমগ্র বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া। অলিম্পিকের মত গেমসের আয়োজক দেশ হিসাবে অদূর ভবিষ্যতে উঠে আসতেই পারে ইন্দোনেশিয়ার নাম। জার্মানি ইউরোপের অন্যতম ধনী এবং বড় দেশ। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স যারা এর আগে এই গেমসের আয়োজন করেছিল তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আয়োজক দেশ হিসাবে উঠে আসতেই পারে জার্মানির নামও।
আরো পড়ুন: ইউরোর সেরা দলে বাদ রোনাল্ডো! বাছাই দল নিয়েই উঠে গেল প্ৰশ্ন
অলিম্পিকের আয়োজনে কিছু মহলে অনীহা কেন?
সাম্প্রতিক টোকিও অলিম্পিক বিশ্ব অলিপিকের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল গেমস ছিল। করোনা অতিমারির কারনে এক বছর এই গেমস পিছোতেও হয়েছিল, অনেকক্ষেত্রে গেমসের কিছু বিষয় বাজেটকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। করোনা মহামারী এবং বিপুল পরিমান বাজেট হ্রাসের কথা মাথায় রেখে এবারের টোকিও অলিম্পিক মঞ্চ প্রায় দর্শক শুন্য রাখা হয়েছিল। একই সঙ্গে বিদেশি দর্শকদের প্রবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল।
জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে এর আগে অলিম্পিক গেমস আয়োজন করেছিল গ্রীস। তারপরে তারা জানিয়েছিল যে, ২০০৪ সালে সেদেশে অলিম্পিক আয়োজনে যে বিপুল খরচ হয়েছিল সেই ক্ষত আজও তারা বয়ে বেড়াচ্ছে। তবে এবারের টোকিও অলিম্পিক নিয়েও বিতর্ক কিছু কম ছিল না। মহামারী পরিস্থিতিতে এই গেমসের আয়োজন দেশে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রশ্নে উত্তাল হয়েছিল জাপানি জনগণ। অলিম্পিক আয়োজনের দরপত্র এবং অলিম্পিক পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা কপালে ভাঁজ ফেলেছে অনেক দেশেরই। একই সঙ্গে অলিম্পিকের মত গেমসের উপযুক্ত পরিকাঠামো এখনও অনেক দেশেই গড়ে ওঠেনি। সেক্ষেত্রে সেই সব দেশের পক্ষে অলিম্পিক ইভেন্ট আয়োজন দিবাস্বপ্নের সামিল।
কোন দেশগুলি গেমস আয়োজনে আরও উৎসাহী হতে পারে?
যেসকল দেশ অর্থনৈতিক ভাবে যথেষ্টভাবেই শক্তিশালী এবং যেসব দেশের খেলাধুলার পরিকাঠামো উন্নত সেইসমস্ত দেশ অনায়াসেই আয়োজন করতে পারে অলিম্পিকের মত ইভেন্ট। এপ্রসঙ্গে ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক এক অন্যতম দৃষ্টান্ত। এই ইভেন্টের মাধ্যমে চিন সমগ্র বিশ্বের কাছে তাদের বৈশ্বিক শক্তি, মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল। যা তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তামাম বিশ্বকে।
ভারতও এমন ধারণা পোষণ করতে পারে। বিশ্ব দরবারে নিজেরদের বিকাশের এক মঞ্চ হিসাবে হাতিয়ার করতে পারে অলিম্পিক ইভেন্টকে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ভারতের খেলাধুলার মান যথেষ্ট উন্নত। সেই সঙ্গে এই মান উন্নয়নের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে।
অন্যান্য দেশের মধ্যে, উদাহরণস্বরূপ ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া যেসব দেশে ইতিমধ্যেই খেলাধুলার পরিকাঠামো অনেক উন্নত একই সঙ্গে দেশগুলি অর্থনৈতিক ভাবেই যথেষ্ট স্বাবলম্বী, সেই সকল দেশ তাদের মান আরও উন্নত করতে এবং বিশ্বের কাছে নজির স্থাপন করতে অলিম্পিকের মত গেমসের আয়োজন করতেই পারে।
অন্যান্য প্রধান ইভেন্টগুলির সঙ্গে অলিম্পিকের তুলনা:
অলিম্পিক ছাড়াও, এশিয়ান গেমস এবং কমনওয়েলথ গেমসও ব্যায়বহুল গেমসগুলির তালিকায় রয়েছে। ভিয়েতনাম অর্থনৈতিক মন্দা এবং পরিকাঠামোগত ত্রুটির কারনে ২০১৮ সালে এশিয়াডের মঞ্চে নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছিল। ২০২২ সালে গেমসের আয়োজক দেশ হিসাবে উঠে এসেছে মাত্র একটি নাম, সেটি চীন। চীনের হাংজু শহরে ২০২২ সালে এই গেমস অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ঠিক একইভাবে ২০২৬ সালে এই গেমস অনুষ্ঠিত হবে আইচি-নাগোয়া শহরে (জাপান)। দোহা এবং রিয়াধ ২০৩০ এবং ২০৩৪ সালের গেম হোস্ট করতে চলেছে।
কমনওয়েলথ গেমসও একই রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ডারবানকে ২০২২ সালে ইভেন্টের জন্য হোস্টিং অধিকার দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আর্থিক অক্ষমতার কথা জানিয়ে পিছিয়ে আসে ডারবান। বার্মিংহামের অনুমোদন পাওয়ার আগে অনেক দেশ এই ইভেন্ট হোস্ট করতে আগ্রহ দেখালেও শেষমেশ তারা পিছিয়ে আসে। ২০২৬ সালের কমনওয়েলথ গেমস আয়োজক দেশের নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
কী উপায় হতে পারে?
আইওসির তরফেও চেষ্টা করা হচ্ছে অলিম্পিকের ব্যায়ভার কমানোর। এবিষয়ে একটি দেশের পরিবর্তে একাধিক দেশ সম্মিলিত ভাবে ইভেন্ট হোস্ট করতে পারে তাতে আর্থিক ব্যায়ভার কারুর একার ওপর সেভাবে চাপবে না। এপ্রসঙ্গে ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের উদাহরন আনা যেতে পারে। বিপুল ব্যায়ভার কমাতে একাধিক দেশ একত্রে ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করেছে। এই ব্যাপারেও ভাবনা চিন্তা জারি রেখেছে আইওসি। এবং আলোচনার পথও খোলা রেখেছে তারা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন