টি২০ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও কোহলি জানিয়ে দিয়েছেন বাকি দুই ফরম্যাটে- ওয়ানডে এবং টেস্টে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাবেন তিনি। তবে এর মধ্যেই খবর ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকেও দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হতে পারে ক্যাপ্টেন কোহলিকে। বোর্ডের তরফে বলা হতে পারে স্রেফ টেস্টে নেতৃত্ব চালিয়ে যেতে।
এমই খবর এবার প্রকাশ্যে এল। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টকে টি২০ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ বললেও, পরিসংখ্যান সেই কথা বলছে না। ২০২৩ ক্রিকেট ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপ বাদ দিয়ে ভারতকে খেলতে হবে মাত্র ২০টা দ্বিপাক্ষিক টি২০। মাত্র ২০টা ম্যাচের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করতে পারবেন, এমন দুর্বল যুক্তি মানছে না বোর্ড।
আরও পড়ুন: রোহিতকে সরাতে বলেন কোহলি! কুৎসিত আবদারে ক্ষিপ্ত বোর্ডও, প্রকাশ্যে বিস্ফোরক রিপোর্ট
সংবাদসংস্থাকে বোর্ডের এক কর্তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, "বিরাট আগেই জানত, টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপে ভাল ফলাফল না হলে, সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্ব হারাচ্ছে ও। তাই ও আগেভাগেই সরে দাঁড়াল। তবে ও চলে যাওয়ায় ভালোই হয়েছে। ও এখন নিজের ওপর হালকা চাপ কমিয়ে রাখল। যাতে মনে হতে পারে ও নিজের ইচ্ছাতেই ক্যাপ্টেনশিপ ছেড়েছে। তবে দীর্ঘদিন টি২০ ক্রিকেটেও পারফর্ম না করতে পারলে ওয়ানডের নেতৃত্বও হাতছাড়া হবে ওঁর।"
ভারতীয় ক্রিকেটে বর্তমানে নাটকীয় পালাবদল চলছে। বিশ্বকাপের পরেই বদলে যাবে পুরো কোচিং স্টাফ। টি২০ নেতৃত্ব ছাড়ছেন বিরাট কোহলি। তবে বোর্ডের অন্দরের ব্যাখ্যা ওয়ানডেতেও বেশিদিন নেতা হিসেবে থাকতে পারবেন না তিনি। সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাটেই স্রেফ একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে থাকতে চলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: পারলে ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেখাও! সৌরভের বোর্ডকেই যেন সরাসরি চ্যালেঞ্জ কোহলির
এই মুহূর্তে সবথেকে সবথেকে দামি প্রশ্ন হল, কোহলির ওয়ানডে ক্যাপ্টেনশিপও কতটা সুরক্ষিত? রোহিত শর্মা যদি জাতীয় দলকে টি২০-তে নাগাড়ে ম্যাচ জিতিয়ে চলেন, তাহলে কোহলি কি ওয়ানডে নেতৃত্বও ধরে রাখতে পারবেন? টি২০ ক্যাপ্টেনশিপ ছাড়লেও ওয়ানডে নেতৃত্ব কেন ধরে রাখলেন কোহলি? প্রশ্ন উঠছে এই বিষয়েও। সম্ভবত ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপ পর্যন্ত ওয়ানডে নেতৃত্ব ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন কিং কোহলি।
বোর্ডের সেই কর্তা বলছিলেন, "সৌরভ এবং জয় শাহের বিবৃতি যদি খুঁটিয়ে দেখা যায়। তাহলে বোঝা যাবে, দুজনই কোহলিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কিন্তু ও-ই যে ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ওয়ানডের নেতা থাকবে, তা নিয়ে একটা শব্দও খরচ করা নেই।"
আরও পড়ুন: কোহলি মূল্যবান সম্পদ! নেতৃত্ব ছাড়ার বিরাট ঘোষণায় টুপি খোলা কুর্নিশ সৌরভের
বর্তমানে ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুম কোহলির পাশে নেই। এটা জলের মত পরিষ্কার। বোর্ডের তরফে বলা হচ্ছে এডিলেড টেস্ট পর্যন্ত দলের কর্তৃত্ব ছিল কোহলিরা হাতে। তবে ৩৬ অলআউট এবং তারপরে পিতৃত্বকালীন ছুটি- এই পর্বের পরে সতীর্থদের সমর্থন পুরোপুরি পাননি তিনি। বরং বোর্ডের তরফে বলা হচ্ছে, কোহলি ফিরে আসার পরই ভারত ঐক্যবদ্ধ হয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পারফর্ম করে বুঝিয়ে দিয়েছে, ক্যাপ্টেনকে ছাড়াও জেতা সম্ভব।
ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে জোড়া স্পিনার খেলানো, এবং তারপরে গোটা ইংল্যান্ড সিরিজে বিশ্বের একনম্বর স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বসিয়ে রাখা মোটেই ভালভাবে নেয়নি বোর্ড। তাছাড়া ২০১৯-এ ভারতের সেমিফাইনালে বিপর্যয়ের জন্যও দায়ী করা হচ্ছে তাঁকে। বলা হচ্ছে, বিশ্বকাপের আগে চার নম্বর পজিশনে কোনও ব্যাটসম্যানকে সেটল হতে দেননি তিনি।
আরও পড়ুন: কোহলির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পদত্যাগ করেন! সেই মহাতারকাকেই কোচ করে আনছেন সৌরভরা
কোহলির নেতৃত্বে খেলা এক প্রাক্তন সরাসরি তোপ দেগেছেন কোহলিকে। তিনি সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, “কোহলির মস্ত বড় সমস্যা ছিল যোগাযোগবিহীনতা। ধোনির ঘর ২৪ ঘন্টা খোলা থাকত নতুন, যুব, উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য। ধোনির ঘরে ঢুকে যেকোনও সময় নতুনরাও পিএস৪ দেখতে পারত, আড্ডা দিতে পারত। কোহলি বরাবর দলের সকলের সঙ্গে সমানভাবে মেশেন না।”
কোহলির ক্যাপ্টেনশিপ চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করা সেই প্রাক্তন তারকা সংবাদসংস্থাকে আরও জানিয়েছেন, “মাঠের বাইরে কোহলি কোনওরকম যোগাযোগ রাখতেন না সতীর্থদের সঙ্গে। রোহিতের নেতৃত্বের ধরণ অনেকটা ধোনির মত। বাইরে একসঙ্গে আউটিংয়ে যায় জুনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে। কঠিন মুহুর্তে সেই সমস্ত ক্রিকেটারদের পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে পাশে থাকার বার্তা দেয়। যুব ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা কীরকম হয়, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারে রোহিত।”
আরও পড়ুন: একতরফা কেন সিদ্ধান্ত! নেতৃত্ব ছাড়ায় কোহলিকে চাঁচাছোলা আক্রমণ কপিলের
সেই ক্রিকেটার আরও বলছিলেন, “কোহলির বিরুদ্ধে সবথেকে বড় অভিযোগ হল, জুনিয়র ক্রিকেটারদের কঠিন সময়ে কোনওভাবেই সমর্থন মেলে না কোহলির। ঋষভ পন্থ যখন ফর্মে ছিল না, কুলদীপ যাদব অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ উইকেট নেওয়ার পরে কার্যত হারিয়েই গেল। এমনকি উমেশ যাদবের মত সিনিয়র ক্রিকেটাররাও সরাসরি কখনও জবাব পাননি, কোনও সিমার চোট না পাওয়া পর্যন্ত কেন তাঁকে ভাবা হচ্ছে না! ও নিজে সাংবাদিক সম্মেলনে বারবার কমিউনিকেশনের কথা বলে। তবে ঘটনা হল, যে মুহূর্তে জুনিয়রদের ক্যাপ্টেনকে সবথেকে বেশি প্রয়োজন, সেই সময়ই ওঁকে পাওয়া যায়না।”
দলের, বোর্ডের সমর্থন হারিয়ে ক্রমশ একা হয়ে পড়ছিলেন কিং কোহলি। সরিয়ে দেওয়ার আগেই তাই কোহলি নিজেই সরে গেলেন। কোচ রবি শাস্ত্রীও টি২০ বিশ্বকাপের পরে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তাই কোহলিকে সরিয়ে দেওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। কালক্ষেপ না করে তাই নিজেই সরে গিয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন