Voice Cloning Technology: আজকের দিনে প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি সেই প্রযুক্তিই এখন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় বিপদের উৎস। বিশেষ করে AI-ভিত্তিক ভয়েস ক্লোনিং এখন প্রতারকদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এমনকী, বলিউডের অমিতাভ বচ্চনও ভয় পেয়েছিলেন যখন তিনি নিজেই শুনলেন নিজের নকল গলায় মেসেজ পাঠানো হয়েছে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য।
গলার নকল ভয়েস দিয়ে টাকা আদায়: বাস্তব কাহিনি
মধ্য কলকাতার এক শিল্পপতির হিসেবরক্ষক সম্প্রতি এমনই এক ভয়ানক ফাঁদে পড়েন। প্রতারকরা শিল্পপতির গলা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ক্লোন করে হিসেবরক্ষককে টাকা পাঠাতে বলেন। তিনি সন্দেহ না করে ১০ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন।
ছত্তিশগড়ে ঘটে যাওয়া আরেক ঘটনায়, এক মহিলা ফোনে নিজের ভাইয়ের গলার মতো স্বর শুনে বিশ্বাস করে পাঁচ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে বুঝতে পারেন, এটি ছিল AI ভয়েস ক্লোন।
আরও পড়ুন- না সাইকেল না বাইক! নয়া দ্বিচক্রযানে বড় চমক
কীভাবে কাজ করে ভয়েস ক্লোনিং?
ভয়েস ক্লোনিং-এর প্রক্রিয়া খুবই রীতিমতো বিস্ময়কর। এই কায়দায় কোনও মানুষের মাত্র কয়েক মিনিটের অডিও ক্লিপ থাকলেই একটি সফটওয়্যার তাঁর গলা নকল করতে পারে।
এই AI-চালিত সফটওয়্যার শুধু কণ্ঠস্বর নয়, সেই ব্যক্তির বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ, অ্যাকসেন্ট, শ্বাস নেওয়ার ধরন পর্যন্ত হুবহু নকল করতে পারে। ফলে আপনি নিজেই যদি শোনেন, বুঝতেই পারবেন না যে ওই গলা আসল না নকল!
আরও পড়ুন- বর্ষায় গাড়িতে দুর্গন্ধ? ঘরোয়া উপায়ে চটজলদি মেটান সমস্যা
কীভাবে আপনার ভয়েস চুরি হয়?
আপনার WhatsApp ভয়েস মেসেজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া ভিডিও ক্লিপ বা কোনও ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমেই আপনার গলা সহজেই নকল করে নেয় প্রতারকরা। তারা AI টুল দিয়ে সেটি নকল করে ফোন কলের মাধ্যমে অপরজনকে বিভ্রান্ত করে টাকা আদায় করে।
আরও পড়ুন- খুচরো পয়সায় এবার কিনুন প্রিমিয়াম এসি! বছরের সবচেয়ে বড় অফার
এ প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকও আছে
Voice cloning প্রযুক্তি আসলে তৈরি হয়েছিল অডিও বুক, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডিভাইস ট্রেনিং-এর উদ্দেশ্যে। কিন্তু এখন তা জালিয়াতি, অপহরণ, এমনকী খুনের পরিকল্পনাতেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ইন্টারনেটে এমন অনেক টুলস আছে যেগুলো সম্পূর্ণ ফ্রি এবং সাধারণ ব্যবহারকারীরাও যার সাহায্যে সহজেই ভয়েস ক্লোন করতে পারেন।
আরও পড়ুন- সুনামি গতিতে ছড়াচ্ছে 'মামোনা'ভাইরাস! এখুনি সাবধান হোন
কীভাবে নিজেকে বাঁচাবেন?
-
কখনও কোনও ফোন কলের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর আগে পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে অন্য মাধ্যমে (ভিডিও কল বা ইন-পার্সন) যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন এটা প্রতারণা নয়তো?
-
হোয়াটসঅ্যাপ ভয়েস মেসেজ কিংবা সামাজিক মাধ্যমে আপনার ভয়েস ক্লিপ প্রকাশ না করাই ভালো।
-
সন্দেহজনক ফোন পেলে কল রেকর্ড করে পুলিশের কাছে পাঠান।
-
আপনার কণ্ঠস্বর AI দিয়ে ক্লোন হয়েছে, এমনটা সন্দেহ হলে CERT-In বা সাইবার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ভবিষ্যৎ কি আরও ভয়াবহ?
এই প্রযুক্তি দিনে দিনে আরও উন্নত হচ্ছে। ভয়েস ক্লোনিং এখন শুধু অপরাধ নয়, এক ধরনের ডিজিটাল অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের তরফ থেকে এই ধরণের প্রতারণা ঠেকাতে এখন প্রয়োজন আইনি পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। আজকাল শুধু অপরিচিত নম্বর নয়, পরিচিত গলার আওয়াজকেও বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। ভয়েস ক্লোনিং প্রতারণা আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তির টোপ থেকে বাঁচতে তাই এখনই সতর্ক হোন।