Snake Venom Antidote: সাপের কামড় মানেই মৃত্যুর আশঙ্কা। ভারতে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সাপের বিষে মারা যান। অথচ, একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে—এক ফোঁটা উটের চোখের জল ২৬টি বিষধর সাপের বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে, সেই সব সাপের বিষকে, যেগুলো প্রাণঘাতী!
এই গবেষণাকে বৈজ্ঞানিক মহল বলছে 'game-changer in tropical medicine.'
আরও পড়ুন- বর্ষায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা এখন অতীত,বাজেটের মধ্যেই বেছে নিন বাজারের Top 10 ইনভার্টার
কোথায় হয়েছে এই গবেষণা?
বিকানেরের ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন ক্যামেল (NRCC) এই গবেষণা চালাচ্ছে। তারা উটের চোখের জল সংগ্রহ করে তাতে থাকা বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডিকে বিশ্লেষণ করেছে। এরপর দেখা গিয়েছে, এই অ্যান্টিবডিগুলি Saw-scaled viper, Russell’s viper, cobra, krait-সহ ২৬টি সাপের বিষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
আরও পড়ুন- বৃষ্টির দিনে গরম মুখরোচক এই ৭টি রান্না ট্রাই করুন, প্রশংসায় ভরাবে পরিবার!
উটের চোখের জলে কী আছে?
-
লাইসোজাইম: প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক, এটি ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস ধ্বংসে সাহায্য করে
-
ন্যানোবডি (Nanobody): ছোট কিন্তু শক্তিশালী অ্যান্টিবডি, যা বিষের প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে
-
প্রাকৃতিক প্রতিষেধক প্রোটিন: উটের কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এই প্রোটিন প্রয়োজনীয়
এই উপাদানগুলোর মিলে উটের কান্নার রূপ হয়ে উঠেছে। তৈরি হয়েছে এক প্রাকৃতিক মেডিসিনের সম্ভাব্য উৎস।
আরও পড়ুন- বর্ষাকালে ঘুরে আসুন ভারতের এই ৫ জায়গায়, মেঘ-বৃষ্টি আর চায়ের মজায় মনে হবে স্বর্গে আছেন
গবেষণার বাস্তব প্রয়োগ কীভাবে?
NRCC-এর বিজ্ঞানীরা প্রথমে ল্যাবরেটরিতে saw-scaled viper-এর বিষে আক্রান্ত কোষের ওপর উটের অশ্রুর প্রভাব দেখেন। তাতে দেখা যায়— কোষগুলো বেঁচে আছে। বিষের সক্রিয় উপাদান নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। এসবই ভবিষ্যতে অ্যান্টিভেনম তৈরির নতুন দিকনির্দেশ করতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন- রোগ দূরে রাখতে চান? বর্ষাকালে খালি পেটে খান এই মশলার রাজাকে
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সাপের কামড়কে 'neglected tropical disease' হিসেবে ঘোষণা করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং অ্যান্টিভেনম সহজে মেলে না। এমন পরিস্থিতিতে উটের চোখের জল থেকে তৈরি প্রতিষেধক হতে পারে সস্তা, কার্যকর, সহজে প্রস্তুত এবং সংরক্ষণযোগ্য।
উটের কান্নার দাম কত?
এই গবেষণার পর উটের চোখের জলের চাহিদা বেড়েছে। এর দাম এখন প্রতি মিলিলিটার ৭,০০০–১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। কারণ এটি শুধু সাপের বিষের প্রতিষেধক নয়, এতে আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মত একাধিক আয়ুর্বেদিক উপাদান।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
Bioengineered antidote উটের অশ্রু-ভিত্তিক ওষুধ তৈরি হবে। সাপের কামড়ের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি হবে। ভবিষ্যতে ফার্স্ট এইড কিটে উটের অশ্রুর নির্যাস থাকতে পারে!
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষকরা বলেছেন, উটের অশ্রুর অ্যান্টিবডিগুলো বিষের নিউরোটক্সিনকে খুব দ্রুত ব্লক করতে সক্ষম, যা প্রচলিত অ্যান্টিভেনমের চেয়েও অনেক দ্রুত কার্যকর।
উটের কান্না এতদিন ছিল শুধু মরুভূমির প্রতীক। কিন্তু এখন এটি হতে চলেছে মানবজীবন রক্ষার হাতিয়ার। ভবিষ্যতে হয়তো এক ফোঁটা উটের চোখের জল দিয়েই প্রতিদিন সাপের বিষে মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমানো যাবে। এমন অগ্রগতি আমাদের বিজ্ঞান ও প্রাণিকুলের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে তোলে—যেখানে উটের মত নীরব প্রাণীও একদিন আমাদের প্রাণরক্ষাকারী হতে পারে!