Google Search: আপনি কি জানেন গুগলে কিছু নির্দিষ্ট শব্দ সার্চ করলেই রাশিয়াতে দিতে হতে পারে লক্ষ লক্ষ টাকার জরিমানা? ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রতিদিন আমরা অসংখ্য শব্দ খুঁজে দেখি। কিন্তু কিছু দেশে এটি এখন শুধুই 'সার্চ' নয়, বরং আইনভঙ্গের পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
আজকের দিনে গুগল যেন আমাদের মস্তিষ্কের এক্সটেনশন। কোন খাবারে কত ক্যালোরি আছে, কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, কিংবা কোনও দেশের ইতিহাস—সবই মিলছে এক ক্লিকে। কিন্তু রাশিয়া এবার এই স্বাধীনতায় ইতি টানছে। এমন কিছু শব্দ ও কনটেন্ট রয়েছে, যা সার্চ করলেই রাশিয়ায় আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন আপনিও।
রাশিয়ার আইন অনুযায়ী
রাশিয়ার নতুন ইন্টারনেট আইন অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট শব্দ গুগলে সার্চ করলেই আপনাকে গুনতে হতে পারে মোটা অঙ্কের জরিমানা। যেমন: LGBTQ+ সংক্রান্ত বিষয়, চরমপন্থী গোষ্ঠী যেমন আয় কায়দা (আল-কায়েদা), নারীবাদ বা ফেমিনিজম সংশ্লিষ্ট থিম, উগ্র রাজনৈতিক মতাদর্শ বা সরকারবিরোধী শব্দ, স্ট্রীমিস্ট (streamist) – যা রাশিয়ান ভাষায় LGBTQ+ আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়
আরও পড়ুন- ঘরে বসেই পান আধার, প্যান, পাসপোর্ট ,ড্রাইভিং লাইসেন্স! এভাবে আবেদন করুন
The Washington Post-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন প্রায় ৫,৫০০ এর বেশি শব্দ ও বিষয় রাশিয়ার সরকারের তালিকায় রয়েছে যা সার্চ করলে আইনত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে জরিমানা হতে পারে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২ লক্ষ টাকার বেশি)। যদি কোনও সংস্থা এই নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে জরিমানার অঙ্ক পৌঁছতে পারে ১৩,০০০ মার্কিন ডলারেরও (১০.৮ লক্ষ টাকা) বেশি অঙ্কে। এই জরিমানা শুধু সার্চ করলেই নয়, ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করে ব্লকড কনটেন্ট দেখলেও এই শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন ব্যবহারকারী।
আরও পড়ুন- গরুর 'আমিষ' দুধ নিয়ে এবার তুঙ্গে বিতর্ক! ব্যাপারটা কী
অনেকেই মনে করেন VPN ব্যবহার করলে সবকিছু গোপন থাকে। কিন্তু রাশিয়ার নতুন আইন অনুযায়ী, VPN দিয়ে সরকারি নিষিদ্ধ কনটেন্টে প্রবেশ করাও অপরাধ। এমনকি VPN অ্যাপ ব্যবহারের জন্যও নজরদারির আওতায় পড়তে পারেন ব্যবহারকারী।
আরও পড়ুন- মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে ঝড়! Vivo Y400 Pro 5G বনাম Nothing Phone 3a, পারফর্মেন্সে এগিয়ে কে?
রাশিয়ার দাবি, এই আইন প্রণয়নের পিছনে রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা, তথ্য যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা। যুদ্ধ পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইউক্রেন সংঘাতের পরে রাশিয়ার সরকার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে আরও কঠোর হয়েছে। তাদের মতে, 'বিদেশি প্রভাব' প্রতিরোধ করাই এই আইনের মূল উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন- জন্মের পর শিশুদের মনে কী চলে? জানলে চমকে যাবেন, নয়া তথ্য উঠে এল গবেষণায়
মানবাধিকার কর্মী ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইন শুধু 'উগ্র কনটেন্ট' ঠেকাতেই কাজে লাগানো হচ্ছে না। বরং, ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল অধিকার দমন করতেও মস্কো কাজে লাগাচ্ছে। এটি কার্যত ইন্টারনেট সেন্সরশিপের নতুন রূপ, গুগল সার্চের মত একটি নিরীহ কাজকে অপরাধে পরিণত করা হচ্ছে রাশিয়ায়। যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের তথ্য জানার অধিকার হরণ করা হচ্ছে।
তাই বলা যায়, রাশিয়ায় ইন্টারনেট এখন আর আগের মত খোলা জায়গা নয়। গুগল সার্চ করতে গেলেও মাথায় রাখতে হবে আপনি কী টাইপ করছেন। এক ভুল শব্দ সার্চ করলে পড়তে পারেন বহুদিনের জটিলতায়, এমনকী কারাদণ্ডের মুখোমুখিও হতে পারেন।
এখন প্রশ্ন উঠছে—গুগল সার্চ কি আর তাহলে নিরাপদ নয়? রাশিয়ার মত যেসব দেশে কঠোর সেন্সরশিপ আছে, সেখানে তো নয়ই। তাই যদি ভিপিএন ব্যবহার করে রাশিয়ান কনটেন্ট অ্যাক্সেস করেন, তবে আপনাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এমনিতে তথ্যের স্বাধীনতা রক্ষা করা যেমন জরুরি, তেমনই দেশভেদে আইন মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ। এক ক্লিকেই আজ হাজার টাকার জরিমানা হতে পারে—সেই বাস্তবতাই আজকের ডিজিটাল পৃথিবীর কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ।