Bengal Assembly Election 2026: সামনেই ২০২৬, বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। লোকসভা ভোটে এরাজ্যে বিপর্যয়ের পর এখনও সংগঠন মজবুত করতে পারেনি বিজেপি। সাংগঠনিক শক্তি হিসাবে বাম ও কংগ্রেস এখনও নতুন করে শুরু করার জায়গায়। রাজ্যে টানা ৩ বারের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ঘর গোছাতে পারেনি। তবে ঘর সামলে সাংগঠনিক কৌশল নিয়ে ব্যস্ত তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
সম্প্রতি ভাঙড়ে আরাবুল ইসলাম ও সওকত মোল্লার গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। একজন অন্যকে তৃণমূল মানতেও নারাজ। শেষমেশ সাসপেন্ড করা হয়েছে আরাবুল ইসলামকে। এদিকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের পর থেকে লাগাতার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ডা. শান্তনু সেন। মনে করা হচ্ছে তার পুরস্কার স্বরূপ শান্তনু সেনকেও একই সঙ্গে সাসপেন্ড করেছে দল। আগামী ১৮ জানুয়ারি আরজি কর মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিতি শান্তনু সেনের। দলের অন্য নেতাদের চমকে তাঁকে কাউন্সিলর থেকে একেবারে রাজ্যসভার সাংসদ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। চিকিৎসক সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি হয়েছেন। দলের মুখপাত্র হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁর স্ত্রী কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। কয়েকদিন আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসকদের কনভেনশনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। তারপরেও দল তাঁকে সাসপেন্ড করল। এই সাসপেনশনের পিছনেও কৌশল দেখছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল কংগ্রেসে কখন যে সাসপেনশন উঠে তা বোঝাও যায় না বলে সমালোচকদের বক্তব্য।
সব থেকে মজার বিষয় এই সাসপেন্ডের বক্তব্য ঘোষণা করেছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। কংগ্রেস থেকে ভায়া পদ্মবাগান ঘুরে তিনি ঘাসফুল শিবিরে ভিড়েছেন। নদীয়ার করিমপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। ভোটের দিন জনৈকের লাথিতে কচুবনে ছিটকে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভয়ানক সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছিলেন জয়প্রকাশ। শান্তনু সেনের খেদোক্তি তৃণমূল কংগ্রেস আমাকে যা যা দায়িত্ব দিয়েছে তা আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে এসেছি। দীর্ঘদিনের দুই তৃণমূল নেতাকে সাসপেন্ডের কথা জয়প্রকাশ মজুমদার ঘোষণা করাতেও বিশেষ বার্তা দেখছে বিরোধীরা।
সাসপেনশন নিয়ে যখন উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি ঠিক তখন কেরলের এক বিধায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কেরলের কোন বিধায়ক বা সাংসদ ভাঙিয়ে সেখানে তৃণমূলের কোনও রাজনৈতিক ফায়দা হবে না তা হলপ করে বলতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এখন সেবাশ্রয় নিয়েও চরম ব্যস্ত অভিষেক।
গত বছর ২১জুলাই ঘোষণা হয়েছিল দলের সাংগঠনিক পরিবর্তন হবে। নির্বাচনে যে যেমন পারফরমেন্স করেছে সেভাবে তাঁকে দলে দায়িত্ব দেওয়া হবে, বারে বারে ঘোষণা করেছেন অভিষেক। মাসখানেক আগে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সাংগঠনিক পরিবর্তনের তালিকাও পেশ করেছেন দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। এমনকি পঞ্চায়েত থেকে পুরসভার পদাধিকারী পরিবর্তনের কথাও চাউর হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেননি। বরং ভাঙড়ের আরাবুল ও অভিষেক ঘনিষ্ঠ শান্তনুকে দল সাসপেন্ড করল।
এসবের মধ্যে মাসখানেক ধরে বাংলার রাজনীতিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে নয়া রাজনৈতিক দলের সূচনা হবে বলে। তবে প্রকাশ্যে কেউ কোনও ঘোষণা না করলেও রাজনৈতিক মহলে নয়া দল নিয়ে চর্চা অব্যাহত। তবে এটাও আরেক ধরনের চাপের খেলা বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। এরই মধ্যে দুই সক্রিয় তৃণমূল নেতা সাসপেন্ড। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই খেলা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেদিকে নজর রাজনৈতিক মহলের। অন্যদিকে বিজেপি বাংলাদেশ ইস্যুকে সামনে রেখে গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে।