২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেও নন্দীগ্রামে হারতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নন্দীগ্রামের জয়ী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী সেদিন থেকে মাঝে মধ্যেই বলে থাকেন, "কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী, তাছাড়া যত দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকবেন ততদিন তাঁর কানের সামনে বাজবে আমি হেরেছি, হেরেছি, হেরেছি।" সম্প্রতি তিনি বলতে শুরু করেছেন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাবেন। এবার ভবানীপুর ইস্যুতে পাল্টা জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস।
নন্দীগ্রামে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল গণনা কেন্দ্রে লোডশেডিং করিয়ে, নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে জয় পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। একইসঙ্গে ওই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আদালতে মামলাও করে তৃণমূল কংগ্রেস। ১৯৫৬ ভোটে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয় পান তৃণমূল সুপ্রিমো। এবার তৃণমূল কংগ্রেস সুর চড়াতে শুরু করল ভবানীপুর কেন্দ্র নিয়ে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, "ভবানীপুরের দিকে কেউ যদি চোখ তুলে তাকায় চোখ ঝলসে যাবে। ভবানীপুরের চোখ ধাঁধানো আলো সহ্য হবে না বিরোধী দলনেতার। ভবানীপুরে বিরোধী দলনেতা লড়তে এলে জামানত জব্দ করে বাড়ি পাঠাব। অন্য কোথাও নয় ভবানীপুরে লড়বেন! তবে অন্য কোথাও দাঁড়ালেও হারাব।" তৃণমূলের দাবি, "ভবনীপুর থেকে জিতে চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় থাকবেন।"
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:'মৃত্যুকুম্ভ' বিতর্কে মমতার পাশে শংকরাচার্য, যোগী সরকারকে তুলোধনা
আদৌ কি ২০২১-এর নন্দীগ্রামের মতো মতো ২০২৬-এ ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর দ্বৈরথ দেখা যাবে? নাকি সবটাই রাজনীতির কথার কথা? তবে ভবানীপুরে দুই দলের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি লড়াইয়ে নামলে ২০২৬-এর ভোটের লড়াই জমে যাবে। শুভেন্দু সরাসরি নিজে দাঁড়ানোর কথা এখনও না বললেও, বারংবার দাবি করছেন এবার ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাব। অভিজ্ঞ মহলের মতে, কার্যত তৃণমূলকেও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ করতেই হলে ভবানীপুর কেন্দ্র নিয়ে।
২০১১ ও ২০২১ দু'বারই ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জয় পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমবার ২০১১-এ তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত বক্সীকে সরতে হয়েছিল। দ্বিতীয়বার নন্দীগ্রামে হারের পর এই কেন্দ্রের বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বিধায়ক পদ ছাড়তে হয়েছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি। তিনি দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন। বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বোস ছিলেন তৃতীয় স্থানে। এই নির্বাচনে কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থীর মিলিত ভোট তৃণমূলের থেকে বেশি ছিল। ২০২১ সালের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল অনেকটা পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থানে লড়াই শেষ করেছিলেন।
আরও পড়ুন- Big Fish: ফের জালে 'দানব মাছ', মুহূর্তেই জীবন গেল বদলে! লক্ষ লক্ষ টাকা মৎস্যজীবীর ঝুলিতে
ইতিমধ্যে বিধানসভা ও তার বাইরে তৃণমূল ও বিজেপির আচার-আচরণ বুঝিয়ে দিচ্ছে সামনেই ভোটের বাদ্যি বাজতে চলেছে। দুই দল এখনই প্রাথমিক স্তরে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে ধর্মীয় ভাবাবেগের টানাপোড়েন। ভবানীপুর কেন্দ্র নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কড়া প্রতিক্রিয়া ২০২৬-ভোট প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।