Book Fair: আর কয়েক মাস পরেই ফের একটা লোকসভা নির্বাচন। তার আগে 'ধর্মই' যেন ভারতীয় রাজনীতির 'চালিকাশক্তি' হয়ে উঠেছে। মোদী-গড়ে 'রাম মন্দির' (Ram Mandir), দিদি-গড়ে 'জগন্নাথ মন্দির' (Jagannath Temple Digha) মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। আর এই আবহে সাধারণ মানুষের একাংশ ধর্মগ্রন্থ 'গীতা'য় (Gita) আস্থাশীল হয়ে পড়ছেন। সেই আস্থার প্রকাশও ঘটেছে এই জেলার বইমেলায় (Book Fair)।
রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর হাত ধরে উদ্বোধন হওয়া এবছরের পূর্ব বর্ধমান (Burdwan book fair) জেলা বইমেলায় দেদার বিক্রি 'ভগবদগীতা'র (Bhagavad Gita)। এই বইমেলায় অন্য বইয়ের চেয়ে 'গীতা' বেশি বিক্রি হওয়ার কথা অকপটে স্বীকারও করে নেন মেলায় স্টল খুলে বসা বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার লোকজন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের (WB Govt) জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিষেবা বিভাগের উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরে পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে । সপ্তম বর্ষের সেই বইমেলা (Book Fair) এবছর অনুষ্ঠিত হয় জেলার জামালপুর ব্লকে। রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী (Siddiqullah Chowdhury) ১১ জানুয়ারি সাত দিনের ওই বইমেলার উদ্বোধন করেন। মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার মোট ৪৭ টি বইয়ের স্টল ছাড়াও ১৭ টি খাবারের স্টল এবং কুটির শিল্পের ৪ টি স্টল ছিল।
বইমেলার উদ্বোধনে এসে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বইয়ের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি ওই দিন বলেন, "বই বিবেককে খুলে দেয়। তাই বই আমাদের সম্পদ"। এদিকে, সামনেই লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election 2024) । তার আগে কবি-সাহিত্যিকদের বই অপেক্ষা ধর্মগ্রন্থ গীতার চাহিদা এমন বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়ায় চর্চা বাড়ছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা বই মেলায় গীতা বিক্রি রেকর্ড ছুঁয়ে গিয়েছে বলে ধারণা করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন- Travel: ভুবনভোলানো প্রাকৃতিক শোভা! উত্তরবঙ্গ ঘেঁষা অপরূপ এই পাহাড়ি গ্রামে প্রাণের স্বস্তি
এই বইমেলায় নামী দামী বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা স্টল খুলেছিল। বইমেলায় বই বিক্রি নিয়ে একটি প্রকাশনা সংস্থার স্টলের কর্মী বিজয় সাহা বলেন, “পুরুলিয়ার বই মেলার চেয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা বইমেলায় বই কম বিক্রি হয়। তবে এবারের পূর্ব বর্ধমান জেলা বইমেলায় তুলনামূলকভাবে আমাদের স্টল থেকে গীতা ভালোই বিক্রি হয়েছে। পাশের গীতা প্রকাশনী থেকে হয়তো আমাদের থেকেও বেশি গীতা বিক্রি হয়ে থাকবে। অন্যান্য বইয়ের বিক্রি তেমন নেই বললেই চলে"।
বইমেলায় ’ইসকন’ পাবলিকেশনও বইয়ের স্টল বসিয়েছিল। সেই স্টলে ইসকন (ISKCON) সংস্থার পক্ষে বিনো তারন বলেন, “এখন মানুষের গীতা পাঠে আগ্রহ বেশ বেড়ে গিয়েছে। তাই আমাদের স্টল থেকে গীতা ভালোই বিক্রি হয়েছে।'' অপর আরও একটি প্রকাশনা সংস্থার স্টলে থাকা তরুণ দাস জানান, তাঁদের স্টল থেকেও গীতা, রামায়ণ (Ramayan) ও মহাভারত (Mahabharat) ভালোই বিক্রি হয়েছে।
বইমেলায় গীতার এমন চাহিদা বেড়েছে জেনে যারপরনাই খুশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS)
কার্যকর্তারা। সংঘের জেলা কার্যকর্তা শান্তি মাল বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অশান্ত পশ্চিমবঙ্গ। চুরি, রাহাজানি, মারপিট, খুনোখুনি, বোমাবাজি, এ সব বাংলায় লেগেই বয়েছে।এই প্রেক্ষাপটে শান্তি পেতে গীতা পাঠ যে খুবই জরুরি, সেটা বাংলার মানুষ উপলব্ধি করেছেন।"
জামালপুরের (Jamalpur) তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) আলোক মাঝি (Alok Majhi) বলেন, “বইমেলা প্রাঙ্গনে বইয়ের স্টল গুলি থেকে বই বিক্রি কম হয়েছে, একথা ঠিক নয়। গীতা হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ। সব হিন্দু (Hindu) পরিবারেই গীতা, রামায়ন, মহাভারত থাকে। আমার বাড়িতেও আছে। যাঁদের নেই, তাঁরা তা বইমেলা বা অন্য কোনও বইয়ের দোকান থেকে কিনে নেন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক আগেও ছিল না, এখনও নেই।"
একদিকে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উন্মাদনা, তার আগে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠ কর্মসূচি হয়েছে। কলেজ স্ট্রিটের বইয়ের দোকানেও ভাগবত গীতা কিনতে ভিড় করছেন লোকজন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দক্ষিণবঙ্গের মিডিয়া ইনচার্জ সৌরীশ মুখোপাধ্যায় বলেন, 'গীতা জীবন দর্শনের একটা পথ। সারা বিশ্ব এটা মেনে নিয়েছে। মানুষ জীবনে মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছে গীতায়। এই কারণে মানুষ এটা পড়ছে। জীবনে চলার পথে অন্যতম সঙ্গী এই ভাগবত গীতা। পাশাপাশি হিন্দুত্বের জাগরণ হচ্ছে।'