/indian-express-bangla/media/media_files/2025/07/19/dl-roy-2025-07-19-12-25-15.jpg)
Dwijendralal Roy: জাতীয়তাবাদী কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।
১৭২ বছর আগে শুরু হয় রেলের পথ চলা। এই সুদীর্ঘ সময়ে ভারতীয় রেল মনীষীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ ও মর্যাদাও দিয়েছে। কবি, নাট্যকার, গীতিকার, গায়ক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পরিবার রেলকে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিল। সেই জমি গ্রহণও করে রেল। সোমবার ৪ শ্রাবণ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ১৬৩ তম জন্মদিবস পালিত হয়।
রেলের পক্ষ থেকে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সংরক্ষণ বা তাঁকে প্রাপ্য সম্মানটুকু আজ পর্যন্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কৃষ্ণনগর তথা নদীয়াবাসীর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ রয়েছে। ব্রিটিশদের থেকে দেশকে মুক্ত করতে পরাধীন ভারতবর্ষে তাঁর গান স্বদেশীদের উদ্ধুদ্ধ করেছিল। রেলসূত্রে জানাযায়, বোলপুরে রবি ঠাকুরের শেষ রেলযাত্রার সেলুনকার সংরক্ষণ আছে। লিলুয়াতে রেলের ভিজিটর বুকে শরৎচন্দ্রের স্বাক্ষর ও বজবজ স্টেশনে স্বামী বিবেকানন্দের বসার চেয়ারটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। গোমো স্টেশনে নেতাজীর অন্তর্ধান যাত্রার স্মৃতিস্মারকও করা হয়েছে। ডুরান্ড ও ব্রাউন ইনস্টিটিউটের নাম বিবেকানন্দ ও ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের নামে করা হয়েছে। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মেট্রো রেলের বিভিন্ন স্টেশনের নাম বদল করে মনীষীদের নামে রেখে ছিলেন। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ক্ষেত্রে কিছুই সংরক্ষণ করা হয়নি।
১৮৫৩ সালে রেলের পথ চলা শুরু হয়। ১৯০৫ সালে রানাঘাট লালগোলা সেকশানে কৃষ্ণনগরে রেলপথ শুরু হয়। তখন বাদশাহি সড়ক থানা রোডের উপর রেলপথ তৈরি হয়। কৃষ্ণনগর শহর থেকে স্টেশনে যাওয়ার কোন রাস্তা ছিল না। এই সময় নাট্যকারের বাড়ির প্রবেশ পথের মূল গেট ও বাগানের অনেকটা জায়গা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে রেলকে দেওয়া হয়েছিল। এই বাগানের ওপর দিয়ে স্টেশন অ্যাপ্রোচ রোড হয়। বেলেডাঙা রেলগেটের পাশে নর্থ কেবিনটিও কবির পরিবারের দেওয়া জায়গার উপর হয়েছে।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দাদা হরেন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী মোহিনীদেবী ১৩২১ সালে সাধনা পত্রিকায় লিখেছিলেন, 'দ্বিজেন্দ্রলালের গাড়ি আসিয়া গেটের ভেতর ঢুকিল, তখন গেট ছিল। সেই গেট রেলস্টেশনের পথের জন্য রেল কোম্পানি লইয়াছে।' তারপরও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ক্ষেত্রে কিছুই সংরক্ষণ করা হয়নি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ সালের ৪ শ্রাবণ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯১৩ সালের ১৭ মে। এই ৪৯ বছরের মধ্যে তিনি প্রায় ৫০০ গান রচনা করেন।
আরও পড়ুন- AI education: 'রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় AI প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় এসে গেছে', বললেন মুখ্যমন্ত্রী
তাঁর গান বাংলা সংগীত জগতে দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত। গীতিকারের বিখ্যাত গান "ধনধান্যে পুষ্পে ভরা", "বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ" গানগুলি এখনও মানুষ শোনেন। তিনি নাট্যকার হিসেবেও বিখ্যাত। চন্দ্রগুপ্ত, মেবার-পতন,, রাণা প্রতাপসিংহ, সিংহল-বিজয়, সাজাহান নাটক নিয়ে আজও চর্চা হয়। এই অল্প সময়ে তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। অথচ তাঁর জন্মভিটাতে তিনি উপেক্ষিত। প্রয়াত বিধায়ক শিবদাস মুখার্জ্জী কৃষ্ণনগরের মানুষের দাবি বিধানসভায় তুলেছিলেন। তবে রেলের পক্ষ থেকে কোন ভূমিকা না নেওয়ায় নদীয়াবাসী ক্ষুব্ধ । বেলেডাঙা রেলগেটের পাশে নর্থ কেবিনটিও কবির পরিবারের দেওয়া জায়গার উপর হয়েছে। তবে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম শতবর্ষে মূল পিলার দুটি কিছু উৎসাহী মানুষ সংরক্ষণ করেন। তবে আজও গীতিকারের স্মৃতিস্তম্ভে সারা বছর মদ জুয়ার আসর বসে। অবৈধ দখলদারির দাপাদাপি চলে। প্রতি বছর দ্বিজেন্দ্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি, দ্বিজেন্দ্র পাঠাগার বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে দিনটি পালন করে।
দ্বিজেন্দ্র পাঠাগারের সম্পাদক স্বপন মৈত্র বলেন,' কৃষ্ণনগর রেল স্টেশন অ্যাপ্রোচ রোডটাকে ভালো করে সাজিয়ে তোলা হোক। এই রোডের নাম দ্বিজেন্দ্র সরণী করা হলে রেলের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানান হবে। জায়গাটাও ভালো হবে। আমরাও চাই এটা হোক। ' কৃষ্ণনগর কালিনারায়ণপুর রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক প্রীতম ভৌমিক বলেন, 'দ্বিজেন্দ্র লাল রায় দেশের গর্ব। তাঁর গান বিপ্লবীদের উদ্ধুদ্ধ করতো। তাকে সম্মান জানান উচিত। তাই স্টেশন অ্যাপ্রোচ রোডের নাম দ্বিজেন্দ্র সরণী করা হোক। তাতে তাকে সম্মান জানান হবে।'