/indian-express-bangla/media/media_files/2025/03/27/MiaNqWGpaWkmGSMo3xWp.jpg)
Fan touched Virat Kohli's feet: ছবির বাঁদিকে ইডেনে কোহলির পা ছুঁয়ে প্রণামের সেই মুহূর্ত, ডানদিকে জামালপুরের ঋতুপর্ণ পাখিরা।
Fan touched Virat Kohli's feet: ইডেনে IPL-এর ম্যাচ চলাকালীন মাঠে ঢুকে গিয়ে বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli) প্রণাম করে 'ধন্য' ঋতুপর্ণ পাখিরা। ভগবানের আসনে স্থান দেওয়া বিরাট কোহলিকে প্রণাম করা ও আলিঙ্গন করার সাধ পূর্ণ করতে পেরে ঋতুপর্ণ এখনও নস্টালজিয়ায় ভাসছে। তবে ছেলে নস্টালজিয়ায় ভাসলেও সেই পথের পথিক হতে পারেননি ঋতুপর্ণর বাবা ও দিদিরা। পুলিশের দায়ের করা মামলায় জামিন মিললেও আদালত পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ করবে, তা ভেবেই তাঁরা এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ঋতুপর্ণর ভবিষ্যৎতের কথা ভেবেও তারা চিন্তিত।
ঋতুপর্ণদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার অন্তর্গত পাড়াতলের বাগ-কালাপাহাড় গ্রামে। পরিবারটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। বাবা মহাদেব পাখিরা কিছু জমি চাষ করেন। এরই পাশাপাশি এলাকায় তাঁর একটি ফলের দোকান রয়েছে। ইটের দেওয়ালের দু’কামরার নির্মীয়মান বাড়ির মধ্যেই মা, বাবা ও কলেজ পড়ুয়া দুই দিদির সঙ্গেই থাকে ঋতুপর্ণ। তাঁদের বাড়িতে অভাবের ছাপ স্পষ্ট।
ঋতুপর্ণর মা কাকলিদেবী একজন আশাকর্মী। তিনি বলেন, “ছেলে স্থানীয় পর্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ঋতুপর্ণ ছোট বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী হয়ে পড়ে। প্রথম জামালপুরের নেতাজী অ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠে গিয়ে এক প্রশিক্ষকের কাছে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে। বর্তমানে কলকাতার বেলেঘাটা স্পোর্টিং ক্লাবে ক্রিকেটের কোচিং নিচ্ছে। আমার ছেলে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির একনিষ্ট ভক্ত। বিরাট কোহলি আমার ছেলের কাছে ভগবানতুল্য।"
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:আজ অক্সফোর্ডে ভাষণ মমতার, উঠতে পারে আরজি কর প্রসঙ্গও
কাকলিদেবী আরও বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গত শনিবার আমার ছেলে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ দেখতে ইডেনে যায়। ওই দিন বিরাট কোহলিকে মাঠে স্বচক্ষে দেখে আমার ছেলে ঋতুপর্ণ আর আবেগ চেপে রাখতে পারেনি। দর্শকাসন ছেড়ে তারের ঘেরাটোপ টপকে আমার ছেলে সোজা খেলার মাঠে ঢুকে পড়ে। ছুটে গিয়ে বিরাট কোহলির কাছে পৌঁছে গিয়ে তাঁর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে ঋতুপর্ণ প্রণাম করে। প্রণাম সেরেই আমার ছেলে বিরাট কোহলিকে বুকে জড়িয়ে ধরে।"
এই ঘটনা বিরাট কোহলির ভক্ত মহলে ঋতুপর্ণকে বেশ জনপ্রিয়তা পাইয়ে দিয়েছে ঠিকই। তবে ঋতুপর্ণর পরিবারে গ্রাস করেছে দুশ্চিন্তা। এ নিয়ে তার মা ও দিদি রীতু পাখিরা জানান, খেলা চলাকালীন ঋতুপর্ণর এভাবে মাঠে ঢুকে পড়াটা পুলিশ ভালোভাবে নেয়নি। তাই কলকাতার ময়দান থানার পুলিশ ’ক্রিমিনাল ট্রেস পাসিং’ ধারায় মামলা রুজু করে ঋতুপর্ণকে গ্রেফতার করে। ওকে থানার লকআপে দু’রাত কাটাতে হয়। পরে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত শর্তশাপেক্ষে ঋতুপর্ণর জামিন মঞ্জুর করে।
আরও পড়ুন- Bhatpara Shootout: ঘরে অনুগামীদের সঙ্গে কথা অর্জুনের, বাইরে পরপর গুলি, এলোপাথাড়ি বোমা
আদালত জামিন মঞ্জুর করার পর ঋতুপর্ণ সোমবার রাতে বাড়ি ফেরে। বুধবার নিজের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাকলিদেবী এবং তাঁর মেয়ে রীতু বলেন, “জামিন মিললেও মামলা এখনও ঋতুপর্ণর ঘাড়ে ঝুলে রয়েছে। এই বিষয়টি খুব দিশ্চিন্তায় রেখেছে। মামলা কতদিন চলবে, পুলিশ বা আদালত, এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে কঠিন কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা, এটা ভেবেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পুলিশ ও আদালতের কাছে ঋতুপর্ণর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।" এই দুশ্চিন্তার বিষয় নিয়ে ঋতুপর্ণর বাবা মহাদেব পাখিরা ক্যামেরার মুখোমুখি হয়ে কিছু বলতে চাননি।
এদিকে পুলিশের দায়ের করা মামলা নিয়ে বাবা, মা ও দিদিরা চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেও গত শনিবারের ঘটনা নিয়ে এখনও নস্টালজিয়ার ভাসছে ঋতুপর্ণ। তাঁর ভগবান বিরাট কোহলিকে প্রণাম করা ও জড়িয়ে ধরতে পারার সাধ পূর্ণ হওয়ায় ঋতুপর্ণ নিজেকে ধন্য মনে করছে। ভগবানকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারার উচ্ছাস সে এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এলাকার ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ঋতুপর্ণ এখন যেন সেলিব্রিটি বনে গিয়েছে। অনেকেই তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলছে। এমনকী তাঁর বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের যাতায়াতও বেড়ে গিয়েছে।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/03/27/v8DsQMuYylE6ignwQOJ3.jpg)
পায়ে প্যাড ও গ্লাভস পরা হাতে ব্যাট ও বল নিয়ে বুধবার বিকালে বাড়ির উঠোনে একাকী নিজের মনে প্র্যাক্টিস করে যাচ্ছিল ঋতুপর্ণ। পরে তাঁর সঙ্গে সঙ্গত দেয় পাড়ার এক খুদে। প্র্যাক্টিসের সময়েও ঋতুপর্ণর পরণে ছিল সেই একই জমা-প্যান্ট। এর কারণ প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, “ভগবান বিরাট কোহলি স্যারকে আমি যখন বুকে জড়িয়ে ধরি তখন আমার পরনে ছিল হাল্কা আকাশি রঙের এই জামাটাই। আমার এই জামাটা আমার ভগবানের শরীরের স্পর্শ পেয়েছে।
তাই এই জামাটা আমার কাছে অগাধ মূল্যবান। কোনও বিত্তশালী ব্যক্তি কোটি কোটি টাকা দিয়ে আমার কাছ থেকে এই জামাটা নিতে চাইলেও দেব না। এই জামাটাকে আমি আজীবন আঁকড়ে থাকব।"
আরও পড়ুন- Kolkata Weather Today: সপ্তাহান্তে ঝেঁপে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তালিকায় কোন কোন জেলা?
বিরাট কোহলির কাছে কী আবেদন রাখবেন? উত্তরে ঋতুপর্ণ বলেন, “আমি ক্রিকেট খেলে অনেক বড় জায়গায় যেতে চাই। তার জন্য ভাল জায়গায় প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ যদি আমার ভগবান বিরাট কোহলি স্যার আমায় করে দেন তাহলে আমি
ধন্য হব।" খেলা চলাকালীন ইডেনের মাঠে অনধিকার প্রবেশ ঘটিয়ে বিরাট কোহলিকে প্রণাম করা ও জড়িয়ে ধরার জন্য পুলিশ তো মামলা রুজু করছে। জামিন মিললেও মামলা তো এখনও চলবে, আদালতের ধার্য করে দেওয়া দিনে
আদালতে গিয়ে হাজিরাও তো দিতে হবে। এসব নিয়ে তোমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে না? উত্তরে ঋতপর্ণ বলেন, “আমি কোনও অপরাধমূলক মানসিকতা নিয়ে শনিবার ইডেনের মাঠে ঢুকিনি। আমি ঢুকেছিলাম আমার ভগবান বিরাট কোহলি স্যারকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য। হ্যাঁ, আমি আবেগের বশে এমনটা করে ফেলেলেও আইনের চোখে সেটা অপরাধ। তবুও আমি আশাবাদী আমার ভগবান বিরাট কোহলি স্যার, পুলিশ ও বিচারক আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে মামলা থেকে নিস্পত্তি দেবেন।"