২০২২-এ রাজ্যে একাধিক জ্বলন্ত ইস্যু, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মন্ত্রী-নেতা গ্রেফতার, আবাস যোজনায় ভুরি ভুরি অভিযোগ। তবে এই ইস্যুগুলির কোনওটারই সুরাহা হয়নি চলতি বছরে। ২০২৩-এ আদৌ কি এই সমস্ত বিষয়ের কিনারা ঘটবে? কোনও ফয়সালা হবে? সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে বাংলার আমজনতা।
ঘটনার ঘনঘটায় বাংলা কেঁপেছে ২০২২। রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই নানা ইস্যু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ২০০৬ এ বামফ্রন্ট বিপুল আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসার পরেই নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল রাজ্য সরকারের। ২০২২-এ বছর শুরুর পরই আনিস হত্যা, বগটুই গণহত্যা, হাঁসখালি গণধর্ষণ ইস্যু নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়েছে। প্রতিবাদে পথে নেমে পড়ে বিরোধীরা। এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হয়েছেন। বছরের শেষ দিনেও এসএসসিতে নিয়োগের দাবিতে একদল চাকরিপ্রার্থী অবস্থানে বসে রয়েছেন মেয়োরোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। অন্যদিকে গরুপাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন দোর্দন্ডপ্রতাপশালী বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। বছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। আন্দোলন-অভিযোগ-তদন্ত-গ্রেফতারেই সীমাবদ্ধ থাকল ২০২২। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, ২০২৩-এও কি অপেক্ষাই সার হবে?
আরও পড়ুন- মমতাকে দেখে জয় শ্রীরাম স্লোগানে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মোদী? বিরক্ত বিজেপির শীর্ষ নেতারাও?
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রনেতা আমতার আনিস হত্যা, মার্চে বীরভূমের বগটুই গণহত্যা, এপ্রিলে নদিয়ার হাঁসখালি গণধর্ষণ। পরপর তিন মাসে তিন তিনটে ঘটনায় সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য-রাজনীতি। আনিস হত্যার সিবিআই তদন্ত না দিলেও বগটুই ও হাঁসখালির ঘটনায় আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত চলছে। আনিসের তদন্তের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত তদন্ত শেষ করে শাস্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন। তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। বগটুই গণহত্যাকাণ্ডে বছরের শেষের দিকে মূল অভিযুক্ত লালন শেখ গ্রেফতার হলেও রহস্যজনক ভাবে সিবিআই হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। হাঁসখালির ঘটনার এখনও তদন্ত চলছে। সিবিআই তদন্তে রাজনৈতিক দলের একাংশের কখনও আস্থা থাকে না। সিবিআইয়ের অধিকাংশ তদন্তই আধখাপছা থাকে বলে অভিযোগ করেন বিরোধিরা। কিন্তু বগটুই ও হাঁসখালির ক্ষেত্রে ২০২৩-এ কোনও সমাধানে সিবিআই পৌঁছাতে পারে কিনা সেদিকে নজর রাজ্যবাসীর।
আরও পড়ুন- ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর প্রতি সুবিচার করাই লক্ষ্য’, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে বার্তা মমতার
২০২২-এ সারা বছর শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্টের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও একাধিক কর্তা গ্রেফতার হয়েছেন। যুগান্তকারী রায় ও নির্দেশ দিয়ে সারাবছর চর্চায় থেকেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিমধ্যে কয়েকশো শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। এই তালিকা বাড়তে পারে বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মন্ডলের পালানোর কোনও পথ নেই। সিবিআই তদন্ত শেষ করে ২০২৩-এ শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি ও গরুপাচার কাণ্ডে দাঁড়ি টানতে পারে কিনা সেটাই দেখার। তবে চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তে গতি দেখে বিরোধীরা ভরসা পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ওপর।