/indian-express-bangla/media/media_files/2025/03/29/WCMalnCYxfPWXBUQQXgR.jpg)
Digha Jagannath Temple: দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন শীঘ্রই।
All the rules of the Puri temple will be followed at the Jagannath temple in Digha: পুরীর (Puri) জগন্নাথ মন্দির বিশ্বখ্যাত। সেই মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি নিমকাঠ দিয়ে তৈরি। দিঘায় নব নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি কী দিয়ে তৈরি তা জানার আগ্রহ বিস্তর। এছাড়াও দিঘার (Digha) জগন্নাথ মন্দিরে আর কী কী ব্যবস্থা থাকবে তাও জানার বিপুল আগ্রহ রয়েছে সাধারণ মানুষের। দিঘায় নির্মীয়মাণ জগন্নাথ দেবের মন্দিরের (Jagannath Temple) নানা তথ্য নিয়েই বিশেষ এই প্রতিবেদন।
জানা গিয়েছে, মন্দিরের গঠনশৈলী থেকে শুরু করে মূর্তি পুজো,ভোগ, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সব কিছুই হচ্ছে পুরীর মন্দিরের অনুকরণে। পুরীর মন্দিরের উচ্চতায় কলিঙ্গ স্থাপত্ব ও নাগর শৈলীতে তৈরি হয়েছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। যার কারণে পুরীর মন্দিরের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে দিঘার এই মন্দিরের।
মন্দিরের প্রধান দ্বার বা গেট গিয়ে ভেতরে ঢুকলেই প্রথমে পড়বে তিনটি দীপস্তম্ভ। পুরীর মন্দিরের মতো দিঘার মূল মন্দিরে প্রবেশের জন্যে রয়েছে ৪টি দ্বার। পুরীর মন্দিরের মতো উত্তরে হস্তীদ্বার,দক্ষিণে অশ্বদ্বার, পূর্বদিকে সিংহদ্বার ও পশ্চিমে ব্যাঘ্রদ্বার। শুধু তাই নয়, পুরীর মন্দিরের মতো দিঘার মন্দিরেও থাকবে রত্নভাণ্ডার। প্রধান ফটক দিয়ে মন্দির চত্বরে ঢোকার পর পুরীর মন্দিরের মতো দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদ্বার বা মন্দিরের প্রবেশদ্বারের সামনে রয়েছে কালো রঙের অরুণ স্তম্ভ বা অরুণা স্তম্ভ। অরুণ স্তম্ভ হচ্ছে সূর্য স্তম্ভ। বৈদিক যুগে সূর্য ও নারায়ণকে অভিন্ন দেবতা বলে মনে করা হতো।
পুরীর মন্দিরের আদলে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রবেশ দ্বারের সামনে কালো পাথরে তৈরি ৩৪ ফুট লম্বা ১৬ মুখী অরুণা স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। আর এই স্তম্ভের মাথায় রয়েছে অরুণার মূর্তি। অরুণা স্তম্ভের সামনের সিংহদ্বারে ঢুকলেই পুরীর মতো সোজাসুজি জগন্নাথের মূর্তি দেখতে পাবেন ভক্তরা।
পুরীর মন্দিরের মতো দিঘার মন্দিরের প্রথমে রয়েছে ভোগ মণ্ডপ । ভোগ মণ্ডপের ৪টি দরজা। ভোগ মণ্ডপের পর রয়েছে নাট মন্দির। ১৬টি স্তম্ভের ওপর এই নাট মন্দির তৈরি করা হয়েছে। এই নাট মন্দিরে রয়েছে দুটি বড় ও দুটি ছোট দরজা। নাট মন্দিরের পর রয়েছে জগমোহন। এই জগমোহন ৪টি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। জগমোহনের পর রয়েছে গর্ভ গৃহ বা মূল মন্দির যেখনে সিংহাসনের ওপর জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তির পুজো হবে। ভোগ মণ্ডপ ও নাট মন্দিরের মাঝে রয়েছে গড়ুর স্তম্ভ। নাট মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে কালো পাথরে তৈরি ছোট ছোট দশাবতার মূর্তি। শুধু তাই নয়, মন্দিরের পাথরের দেওয়াল-জুড়ে রয়েছে পাথরের কারুকাজ।
আরও পড়ুন- Kanthi News: সমবায় ভোট ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা কাঁথিতে, পুলিশের সামনেই হাতাহাতিতে জড়াল BJP-তৃণমূল
২০১৮ সালে নিউ দিঘার ভোগীব্রহ্মপুর মৌজায় ২৫ একর জায়গার ওপর ২০০কোটি টাকা ব্যায়ে জগন্নাথ ধাম ও কালচারাল সেন্টার তৈরির কাজ শুরু হয়। হিডকো মন্দির, ভোগ কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির কাজের দায়িত্বে রয়েছে।
জানা গিয়েছে, পুরীর মন্দিরের মতো দিঘার মন্দিরেও থাকছে লক্ষ্মী মন্দির, জগন্নাথের ভোগ রান্নার জন্যে আলাদা ভোগশালা। তবে পুরীতে ভোগশালাতে রান্না পাহাড়ের ঝর্ণার জল বা গঙ্গার জলে করা হলেও দিঘাতে বা দিঘার আশপাশে পাহাড় না থাকায় রান্নার জন্য বিকল্প জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে পুরীতে যেভাবে ভোগ রান্না হয় এখনেও সেভাবে ভোগ রান্না করা হবে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন মন্দিরের চূড়ায় ধ্বজা পরিবর্তনও করা হবে নিয়ম মেনে। আর এই কাজ করবেন পুরীর মন্দির থেকে আসা দক্ষ লোকজন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দিঘার মন্দির পরিদর্শনে এসেছিলেন পুরীর দ্বৈতাপতি। তিনি জানিয়েছিলেন নিম কাঠের মূর্তিতে পুজিত হবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। পুরীর নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট দিনে হবে বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা।
আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে মন্দির প্রতিষ্ঠার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। তবে সময়সূচি এখন জানানো হয়নি প্রশাসনিকভাবে।জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো মন্দির ও মন্দিরের আশেপাশের পরিবেশ, রাস্তাঘাট সমস্ত কিছু সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নিয়ম মেনেই মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। তবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে যেমন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার নিমকাঠের মূর্তি রয়েছে তেমনই এখনেও থাকবে। তবে এখানে শ্বেতপাথরের জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি থাকবে।"
আরও পড়ুন- Dilip Ghosh: 'এত ছোট মন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে হতে পারেন?', ফের দিলীপের নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী
পুরীতে যেমন রথ যাত্রা হয় তেমনই এখানেও তিনটি রথ সহযোগে রথযাত্রা হবে। সেই রথের পরিকাঠামোও তৈরি হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দির পরিদর্শন করতে এসে ঘোষণা করেছিলেন, রথ টানার আগে সোনার ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিস্কার করতে হয়। আর সেই সোনার ঝাড়ু তৈরির টাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের উপার্জিত অর্থ থেকে দেবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এই বছর রথযাত্রায় দিঘাতেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
২০২২ সালে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এই মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। আর ২০২৫-এর অক্ষয় তৃতীয়ায় বাঙালির 'দ্বিতীয় পুরীর মন্দির'-এর দরজা খুলে দেওয়া হবে সকলের জন্যে। মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আর মাত্র এক মাস বাকি। তাই এখন দিঘা জুড়ে শুধুই ব্যস্ততা।