/indian-express-bangla/media/media_files/2024/12/21/DtbWdEzv1Udvo9uApMqa.jpg)
Royal Bengal Tiger: প্রতীকী ছবি।
An experienced forester explains reason behind frequent entry of tigers into locality: সুন্দরবনের গ্রামাঞ্চল থেকে রাজ্যের পশ্চিমের জঙ্গলমহল। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (Royal Bengal Tiger) আনাগোনা বেড়েই চলেছে বাংলার জনপদে। সুন্দরবনের (Sundarban) জঙ্গলের দক্ষিণরায় প্রায়ই ঢুকে পড়ছে লাগোয়া লোকালয়ে। অন্যদিকে, আবার ভিনরাজ্যের বাঘও ঢুকে পড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জঙ্গলে। কেন লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার? বাঘের আচরণ কেমন? কতটা বুদ্ধি ধরে 'বনের রাজা'? এসব নিয়েই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সহ সম্পাদকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলেন অবসরপ্রাপ্ত বনবিভাগের কর্মী আমিরচাঁদ মণ্ডল।
কেন সুন্দরবনের গভীর অরণ্যের রাজা গ্রামে চলে আসছে? রয়েল বেঙ্গল টাইগার জনপদে এলেই ছুটে যেতে হত আমিরচাঁদ মণ্ডলকে। তিনি বলেন, "জনপদে বাঘের আসার একাধিক কারণ আছে। তবে শুধু খাবারের সন্ধানে বাঘ গ্রামে আসে না। সুন্দরবনে খাবারের অভাব নেই। শীতের সময় বাঘ বেশি আসে। এখানে ছোট-ছোট দ্বীপ আছে। কুয়াশার জন্য ওরা এপাশে জঙ্গল ভেবে চলে আসে। বুনো শুয়োর ধান ক্ষেতে আসে। বাঘ ওই খাদ্যের টানেও কখনও কখনও আসে। আবার যখন জঙ্গলে দুই বাঘের মধ্যে লড়াই হয়, তখন দুর্বল বাঘটি পালিয়ে গ্রামে চলে আসে। তবে বাঘ চট করে মানুষের ক্ষতি করে না।"
কুলতলির মৈপীঠের বাসিন্দা আমিরচাঁদ মণ্ডল দীর্ঘ ৩৮ বছর বনদপ্তরে কাজ করেছেন। বাঘের আচরণ নিয়ে রীতিমতো গবেষণাও করেছেন। জনপদে বাঘ এলেই ডাক পরতো আমিরচাঁদের। তিনি বলেন, "সুন্দরবনেই কেটে গিয়েছে চাকরি জীবন। খাল-বিল, বাঘ নিয়ে কেটেছে জীবনটা। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি বাঘ যে রুটে আসে সেই পথে চলে যায়। বাঘ লোকালয়ে ঘুরে ফিরে যায়। অনেক সময় কেউ জানতেও পারে না। শুধু পায়ের ছাপ পরে থাকে। সেই পায়ের ছাপ জানান দেয় বাঘ এসেছিল। নিজেকে আড়াল করতে বাঘের জুড়ি মেলা ভার।" তাঁর অভিজ্ঞতা, "একবার তো একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার ঝড়খালি পার হয়ে গরানমোশ, তারপর মালদা নদী পার হয়ে পিয়ালি এসেছিল। তারপর মথুরাপুর স্টেশনে রান্নাঘরে ঢুকেছিল। সেখানে গিয়ে গ্রামের লোকজন মিলে বাঘটাকে মেরে দিয়েছে। এতটা রাস্তা সে গিয়েছে কারও সামনে পরেনি। বাঘ খুব সন্তর্পণে যাতায়াত করে।"
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: ফের অগ্নিকাণ্ড কলকাতায়, হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটের আবাসনে আগুন
বাঘ নিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি একেবারে ভরে গিয়েছে আমিরচাঁদ মণ্ডলের। শোনালেন বাঘের খেজুর গাছের মাথা থেকে নামানোর কাহিনীও। তিনি বলেন, "একবার কি কাণ্ড খেজুর গাছে বাঘ উঠে বসে আছে। গরু চড়াতে গিয়ে গ্রামের মানুষ দেখেছে। ওরা প্রথমে ভেবেছে বড় প্যাঁচা খেজুর গাছে বসে আছে। ২৬ ফুট খেজুর গাছের মাথায় বাঘ বসেছিল। তখন গান ছিল একটা। ওই বাঘকে অজ্ঞান করে জঙ্গলে ফেরানো হয়েছে। ওপরে থাকা অবস্থায় ওই বাঘের পায়ে দড়ি বাঁধা হয়। নীচে জাল পাতা হয়েছিল। তা না হলে ওপর থেকে নামাতে গেলে বাঘটার ক্ষতি হতে পারতো। নীচে নামিয়ে দেখা গেল বাঘটা পুরো অজ্ঞান হয়নি। আবার অজ্ঞান করা হল। আবার তাকে জঙ্গলে ফেরানো হল। বাঘের ওষুধ তৈরি করা খুব শক্ত। বুঝতে হবে কত এমএলের ওষুধ দিতে হবে। বাঘের ওজন বিবেচনা করতে হবে।" নানা কারণেই বাঘকে দিনের বেলা ট্রাঙ্কুলাইজ করা হয়। রাতে করা হয় না। হাতে-কলমে কাজ করা এই বিশেষজ্ঞ বলেন, "রাতে সে আদৌ অজ্ঞান হয়েছি কি হয়নি তা বোঝা যায় না। তারপর আজ্ঞান না হলে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।"
আরও পড়ুন- Tiger Attack: ফের বাঘের হানায় মৃত্যু মৎস্যজীবীর, শোকের ছায়া কুলতলিতে
রয়েল বেঙ্গল টাইগার অত্যন্ত বুদ্ধি ধরে। কাজ করতে গিয়ে বাঘের চালাকিও দেখেছেন তিনি। বাঘ শিকারের সময় অদ্ভুত কায়দায় নিজের দেহ আড়ালে রাখে। আবার ধরা পড়ার ভয়ে লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখতেও জানে। লালগড়ে বাঘ ধরতে গিয়ে ৪০ দিন কাটিয়ে এসেছেন আমিরচাঁদ। সেই অভিজ্ঞতা রোমন্থন করে তিনি বলেন, "একবার ক্যামেরা ট্র্যাপিং করা ছিল। দেখা গেল ক্যানেলে হাতি এসে জল খায়, আবার বাঘটা এসে জল খেয়েছে। বাঘ কখন আসে দেখেছি। তারপর খাঁচায় ছাগল রেখে আমরা মাচায় অপেক্ষা করছি। খাঁচায় যদি কোনও বাঘ একবার ঢোকে আর সেই বাঘ সহজে খাঁচায় ঢুকতে চাইবে না। খাঁচার আশেপাশে থাকবে কিন্তু খাঁচায় ঢুকবে না। যাই হোক, লালগড়ের বাঘটা প্রতিদিন বিকেল ৩-৪টার সময় আসে জল খেতে। আমরা দেখছি বাঘটা একটা গাছের আড়াল থেকে উঁকি মেরে একবার খাঁচার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার মাচার দিকে তাকাচ্ছে। খাঁচায় না ঢুকলে আমরা ট্রাঙ্কুলাইজ করব, এটাই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাঘ এতো চালাক আড়ালে দেখে চলে গেল। আমরাও ওর চোখ ছাড়া কিছুই দেখতে পাইনি। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে। এবার হাতিও নেমে পড়বে। সন্ধ্যের পর ট্রাঙ্কুলাইজ করা হয় না। তখন আমরা চলে আসি। ফিরে গিয়ে ট্র্যাপ ক্যামেরায় দেখতে পাই আমরা চলে আসার ১০ মিনিট পর ওই বাঘটাই দিব্যি জল খেয়ে চলে গিয়েছে।" লালগড়ের বাঘটাকে মাথায় বল্লম মেরে, পিটিয়ে গ্রামবাসীরা মেরে ফেলে।
আরও পড়ুন- Haldia: '২০১১-এর পর একটার পর একটা কারখানা বন্ধ হলদিয়ায়', বিরোধীদের অভিযোগ ওড়াল তৃণমূল
আমিরচাঁদ যে কতবার বাঘের সামনা সামনি হয়েছেন আর কতবার বেঁচেছেন তার হিসেব নেই। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "শুধু সতর্কতার জন্য বেঁচে গিয়েছি। মাথার ওপর থেকে জাম্প করেছে রয়েল বেঙ্গেল। সেনাবাহিনীর মতো আমরাও তখন জীবনের জন্য মায়া করি না। কাজটা করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে অবসর নিয়েছি। তারপর কিছু দিন কাজ করেছিলাম। এখনও এলাকায় বাঘ এলেই ছুটে যাই। এটাই আমার নেশা। আমাকে ডাকুক বা না ডাকুক আমি চলে যাই। উদ্ধারকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করি। পয়সার জন্য করি না। এখনও পেনশন পাই।" মৈপীঠে বাঘ ঢোকার সময়ও ছুটে গিয়েছেন আমিরচাঁদ মণ্ডল। রয়েল বেঙ্গলের আকর্ষণই যে আলাদা।