/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/04/mahua-moitra-reaction-on-bangla-insult-2025-08-04-14-47-45.jpg)
'বিস্ফোরক' তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র
TMC On Delhi Police: বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ! দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে 'বিস্ফোরক' তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি হেনস্থা নিয়ে যখন তৃণমূল গেরুয়া শিবিরকে নিশানা করেছে তখনই দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষার পরিচিতিকে খর্ব করে ভারতীয় নাগরিকদের ‘বহিরাগত’ হিসাবে চিহ্নিত করার ভয়ঙ্কর অভিযোগে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। এবিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তুমুল নিশানা করলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "আজ অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ সমস্ত সীমা ছাড়িয়েছে - বাংলার বঙ্গ ভবনকে লেখা একটি সরকারি পত্রে তারা বাংলা ভাষাকে “বাংলাদেশী ভাষা” বলে উল্লেখ করেছে। আমাদের মাতৃভাষা, ভারতের ২২টি অনুমোদিত সরকারি ভাষার একটি , ১১ টি ধ্রুপদী ভাষার একটি , ভারতের জাতীয় সংগীতের ভাষাকে আজকে বিদেশী তকমা দিয়ে অবৈধ প্রমাণ করার বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং দিল্লি পুলিশের এখুনি ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং এই চিঠি যে বা যারা লিখেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে"।
দিল্লি পুলিশের একটি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করায় 'বাঙালি আবেগে' ঝড় উঠল বাংলায়। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) কড়া ভাষায় কেন্দ্র ও দিল্লি পুলিশকে এনিয়ে আক্রমণ করেছে । মমতার অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার "বাঙালি ভাষাভাষী মানুষদের অপমান ও হেয় করার জন্য" সংবিধানবিরোধী ভাষা ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন- মোদী রাজ্যে বাঙালি হেনস্থার বিস্ফোরক অভিযোগে উত্তাল রাজ্য, বিজেপিকে এবার আগুনে হুঁশিয়ারি TMC-এর
দিল্লির লোধি কলোনি থানার একটি চিঠি সামনে এনে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তাতে বাঙলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ ভাষা বলা হয়েছে। সেই চিঠিটি লেখা হয়েছিল দিল্লির বঙ্গ ভবনের উদ্দেশে, যেখানে বলা হয়েছে— “Translation of documents containing text written in Bangladeshi language”।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “দিল্লি পুলিশের এই মন্তব্য শুধু লজ্জাজনক নয়, এটি একেবারে অপমানজনক, সংবিধান-বিরোধী এবং জাতিবিরোধী। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা। জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা বাংলা— সেই ভাষাকে এখন বলা হচ্ছে 'বাংলাদেশি'! এটা সমস্ত বাঙালিকে অপমান করার শামিল।”
তাঁর আরও দাবি, “কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি সরকার এই ভাষাবিদ্বেষী মনোভাব দিয়ে বাঙালিদের অসম্মান করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং দেশজুড়ে প্রতিবাদ চাই। এই সরকার বাংলা ভাষার মর্যাদা নষ্ট করতে চায়, যা আমরা মেনে নেব না।”
চিঠির অন্য একটি অংশে বলা হয়েছে, “The identification document contains texts written in Bangladeshi and are needed to be translated to Hindi and English...” — এই অংশটি হাইলাইট করেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- রাজ্যের DA মামলা নিয়ে বড় খবর! শুনানি পিছলেও কী জানাল সুপ্রিম কোর্ট?
ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি ভাষাভাষী মানুষদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এখন আবার বাংলা ভাষাকেই বাংলাদেশি ভাষা বলে অপমান করা হচ্ছে। এটা শুধু বাংলা নয়, সমগ্র জাতিগত ও ভাষাগত পরিচয়ের ওপর আক্রমণ।” তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, “এটা নিছক একটি ভুল নয়, এটা বিজেপির সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। বাংলা ও বাঙালিকে অবমূল্যায়ন করতে চাইছে কেন্দ্র।”
বিজেপির পালটা আক্রমণ
তৃণমূলের অভিযোগ খণ্ডন করে বিজেপি-র IT সেল প্রধান অমিত মালব্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য বাংলা ভাষাকে ভোটের আগে 'অস্ত্র'করতে চাইছেন। বেআইনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন। মমতার এই ধরনের মন্তব্য দুঃখজনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।”
বাংলা শিল্পী মহলে ক্ষোভ
এই ঘটনা ঘিরে টলিউডেও প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে। পরিচালক সৃজিত মুখার্জি লেখেন, “ওটা বাংলাদেশি ভাষা নয়, মুর্খেরা, ওটা বাংলা। জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা। ভারতের অন্যতম সরকার স্বীকৃত ভাষা।” গায়ক রূপম ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “বাংলা কি ভারতের ২২টি সরকার স্বীকৃত ভাষার মধ্যে নেই? তাহলে একে বাংলাদেশি ভাষা বলা হল কেন? এটা চরম মূর্খতা।” সুরজিত চ্যাটার্জিও মন্তব্য করেন, “এই অজ্ঞতা ও অপমানের প্রতিফলন আমাদের ভাবায় না, কারণ যারা করছে, তাদের থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না।” তৃণমূল নেতৃত্ব কেন্দ্র ও দিল্লি পুলিশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে। এখন দেখার, কেন্দ্রীয় সরকার এবং দিল্লি পুলিশ এই ইস্যুতে কী অবস্থান নেয়।
আরও পড়ুন-অগাস্টেই দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি! মাসজুড়ে ঠাসা পার্বণে বাংলায় উৎসবের মেজাজ...
উল্লেখ্য, মাত্র কয়েকদিন আগেই রাজধানী দিল্লিতে মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারকে চূড়ান্ত হেনস্থার অভিযোগে সরব হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে দিল্লি পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে। এরপরই মালদার সেই পরিবারকে নিয়ে পালটা সাংবাদিক বৈঠকে করে তৃণমূল। সাংবাদিক সম্মেলনে ওই পরিবারের সাজনু পারভিন দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তোলেন। মালদার সেই পরিবারের সদস্য সাজনু পারভিনের অভিযোগ, দিল্লিতে থাকাকালীন তাদের বাড়িতে চারজন এসেছিলেন। তারা নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। তার পরিবারকে বাংলাদেশি বলে তকমা দেওয়া হয়েছিল বলে তার দাবি। ওই মহিলা বলেছেন, "আমাকে বলা হয় জয় শ্রীরাম বলতে। আমি বলেছি আমি মুসলিম, ওটা বলতে পারব না। তারপর আমার থেকে ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়।"