Bangladeshi school teachers name on Indian voter list: বাংলাদেশের শিক্ষক। বসবাস করেন বাংলাদেশেই অথচ ভারতের ভোটার তালিকায় জ্বলজ্বল করছে ওই বাংলাদেশি ওই শিক্ষকের নাম। ভোটার তালিকায় এমন 'ভূতুড়ে ভোটারে'র সন্ধান মিলতেই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। এই ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এমন ভূতুড়ে ভোটারদেরই খুঁজে বার করার কথা বলেছেন। সেই মত ভোটার তালিকা ধরে ছানবিন চালানো শুরু হতেই খোঁজ মিলেছে ভিনদেশি ভূতুড়ে ভোটারের।" বাংলাদেশিদের নাম ভারতীয় ভোটার তালিকায় স্থান করে দেওয়ার নেপথ্যে কোনও চক্র কাজ করছে বলে বিধায়ক অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশের যে শিক্ষকের নাম ভারতের ভোটার তালিকায় মিলেছে তাঁর নাম ভৃগুরাম দাস। বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভৃগুরাম দাস বাংলাদেশেই থাকেন। সেখানেই শিক্ষকতা করেন। কিন্তু তাঁর পরিবার আবার পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভার অন্তর্গত কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েতের অধীন নন্দীগ্রামে বসবাস করেন। তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে তিনি কয়েকদিন যাবত দলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভোটার তালিকা ধরে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ছানবিন চালাচ্ছেন। একইরকম ভাবে শুক্রবার নন্দীগ্রামে বাড়ি বাড়ি ছানবিন চালানো শুরু করেন। তখনই বাংলাদেশের শিক্ষক ভৃগুরাম দাসের নাম পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার ভোটার তালিকায় থাকার বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। তারপর ভোটার তালিকার পাতা উল্টে তিনি ভৃগুরাম দাসের নামও দেখতে পান।
তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, বাংলাদেশের একজন বাসিন্দার নাম তিনি তাঁর বিধানসভা এলাকার ভোটার তালিকায় দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন।
এমন নাম ভূতুড়ে ভোটারের নাম আর কত আছে তা জানার জন্য ছানবিন কাজ আরও জোরদার ভাবে করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- বাংলার এই গ্রামের মন্দিরে ওঁদের ঢোকা নিষিদ্ধ, অধিকারের জন্য লড়াই ১৩০টি দলিত পরিবারের
বাংলাদেশি ভৃগুরাম দাসের নাম ভারতের ভোটার তালিকায় থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ভৃগুরামের স্ত্রী সুলেখা রাণী দাস। তবে তাঁর সাফাই, তাঁর স্বামী ৩ বছর আগে পূর্বস্থলীতে এসেছিলেন। ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও কোনও দিনই তাঁর স্বামী এখানে ভোট দেননি। যদিও সুলেখাদেবীর এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন তাঁরই আত্মীয়রা।তাঁরা বলেন, ভৃগুরামকে মাঝেমধ্যেই নন্দীগ্রামের বাড়িতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন- Women's Day 2025 Special Story: লোকাল ট্রেন যেন 'আস্ত মন্দির', পেটের তাগিদে ফেরি করেই স্বপ্ন বুনছেন এমএ, বিএড বৃষ্টি
এলাকাবাসী কথা অনুযায়ী,প্রায় দু'দশক আগে থেকে ভৃগুরাম দাসের পরিবার পূর্বস্থলীর নন্দীগ্রামে বসবাস করছে। তাদের একতলা পাকা বাড়ি সহ জমিজমাও এখানে রয়েছে। ভৃগুরামের এক পুত্র শিফন চন্দ্র দাস এখানেই টোটো চালায়। ভৃগুরামের স্ত্রী,পুত্র বউমা ও নাতনি সবাই নন্দীগ্রামের বাড়িতেই থাকে।
এলাকাবাসী এইসব কথা বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছে জানতে পরার পর ভোল বদলান ভৃগুরামের স্ত্রী সুলেখা দেবী।
পরে তিনি বলেন, “আমার স্বামী ভৃগুরাম দাস পূর্বস্থলীর নন্দীগ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। এই রাজ্যের ভোটারও হন। তবে আমাদের বিয়ে হয় বাংলাদেশে। তারপর বাংলাদেশের দাসকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার পর থেকে আমার স্বামী বাংলাদেশের ঘোলা জেলার চরপেশো এলাকায় থাকতে শুরু করেন। তখনই তিনি বাংলাদেশের ভোটার হন। তাই পশ্চিমবঙ্গে তিনি কোনওদিনই ভোট দেননি। স্বামী বর্তমানে অবসর নিয়েছেন। এখন গৃহশিক্ষকতা করেন বলে সুলেখাদেবী দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:সূত্রের খবরে দুরন্ত অভিযান, বাজেয়াপ্ত বিপুল পরিমাণে মাদক, পুলিশের জালে মহিলা
সুলেখাদেবী আরও বলেন, “প্রায় তিন বছর আগে আমার স্বামী বাংলাদেশ থেকে পূর্বস্থলীর বাড়িতে এসেছিলেন। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখি। ছেলে, বউমা ও নাতনিকে নিয়ে আমি এখানে থাকি। ছেলেই সংসার চালায়।” সুলেখাদেবী এও বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় আমার স্বামীর নাম থাকলে বাদ দিয়ে দেওয়া হোক।"
এই প্রসঙ্গে বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ভোটার তালিকা ধরে কয়েকদিন ছানবিন চলিয়ে এ টুকু বুঝে গিয়েছি, আমার বিধানসভা এলাকার
এমন ভুতুড়ে ,অদ্ভুতুড়ে ভোটার আরও আছে। তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া করাতে হবে।" ভারতের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম জায়গা করে নেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তপন বাবু বলেন , "এর নেপথ্যে কোনও চক্র কাজ করছে। ১৫-২০ হাজার টাকা করে নিয়ে তারঅ অনলাইন মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম তুলে দিচ্ছে।” বিধায়কের অভিযোগ, তাঁর এলাকার বাসিন্দা নয় এইরকম কয়েকশো জনের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। তা নিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।
এবার টাকার বিনিময়ে অনলাইনে ভূতুড়ে ভোটারের নাম তালিকায় তুলে দেওয়া চক্রের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান। বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের পর পূর্বস্থলী দক্ষিণের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বাংলার ভোটার তালিকায় বাংলাদেশির নাম থাকার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন। দুই বিধায়কের আনা এমন অভিযোগের কি নিস্পত্তি নির্বাচন কমিশন করে সেদিকেই এখন তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।