BJP leaders arrested for opposing construction of reservoir at Tarapith Maha Samshan: বৈষ্ণবদের সমাধি ধ্বংস শ্মশানের মধ্যে নোংরা জল মজুতের বিরোধিতা করতে গিয়ে গ্রেফতার বীরভূম জেলা BJP সভাপতি ধ্রুব সাহা। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে গেরুয়া দলের একাধিক নেতা-কর্মীকে। দলীয় সভাপতি এবং নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে তারাপীঠ থানায় বিক্ষোভ বিজেপির। পরে অবশ্য সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, তারাপীঠের প্রধান রাস্তার দুই ধার এবং পাণ্ডা পাড়ার নোংরা জল মজুত করার জন্য তারাপীঠ শ্মশানে (Tarapith Maha Samshan) একটি রিজার্ভার নির্মাণ করছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। সেই জল পরিস্রুত করে দ্বারকা নদীতে ফেলার কথা। পরিবেশ আদালতের নির্দেশে ওই কাজ করা হচ্ছিল বলে জানান তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায়। এদিকে এই কাজের জেরে শ্মশানের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করে রিজার্ভার নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে বিজেপি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিজেপির পক্ষ থেকে শ্মশানে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মাটি ফেলে রিজার্ভারের গর্তও কিছুটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ওই দিন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা হুঁশিয়ারি দেন, "ফের কাজ শুরু হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে দল।" বিজেপির হুঁশিয়ারিতে আমল না দিয়ে দিন দু'য়েক পর একই জায়গায় ফের মাটি কাটার কাজ শুরু করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে বিধ্বংসী আগুন, পুড়ে ছারখার গাছপালা, বহু জীবজন্তুর ঝলসে মৃত্যুর আশঙ্কা
তারই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন ধ্রুব সাহা, জেলা সহ সভানেত্রী রূপা মণ্ডল, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মণ্ডল, বিজেপি মোর্চার জেলা সভানেত্রী রশ্মি দে। সবাই কোদাল ধরে শ্মশানে রিজার্ভারের গর্তে মাটি ভরাট করতে শুরু করেন। এরপরেই তারাপীঠ থানার পুলিশ গিয়ে ধ্রুব সাহা সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। বিজেপি থানাতেও বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের দাবি ধৃতদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। ঘণ্টাখানেক পর সকলকে ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- SFI: 'খেলা হলে আমরাও চালিয়েই খেলব', লক্ষ্য স্পষ্ট করে শাসক-শিবিরকে হুঁশিয়ারি SFI-এর
এদিকে বিজেপি নেতা কর্মীদের গ্রেফতারের পরেই শ্মশানের সাধু-সন্তরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে নিয়ে খনন কাজের কাছে জমায়েত হন। তারা বিজেপির পতাকা খুলে ফেলে দেন। ছিঁড়ে ফেলেন পোস্টার। সাধুদের দাবি, "নোংরা জলকে পরিস্রুত করে নদীতে ফেলার জন্য এই রিজার্ভার নির্মাণ হচ্ছে। এটা ভালোর জন্যই হচ্ছে। বিজেপি এখানে রাজনীতি করতে এসেছে। আমরা নোংরা রাজনীতিকে ধিক্কার জানাচ্ছি।” যদিও বিজেপি নেতা ধ্রুব সাহা বলেন, “সাধুদের আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। অধিকাংশ সাধু আমাদের সঙ্গে আছেন। কিছু সাধু তৃণমূলের কাছে সুবিধা পেয়ে এসব করছেন। তারা সাধু নন। সাধু হলে সনাতনী সমাধি ধ্বংসের প্রতিবাদে সোচ্চার হতেন”।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তৃণমূল আমাদের আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য দলীয় অফিসে মস্তান জমায়েত করেছিল। পুলিশ তাদের সরাতে না পেরে আমাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। কোনওমতে শ্মশানে নির্মাণ কাজ করতে দেব না।”
অন্যদিকে, শ্মশানে নোংরা জলের রিজার্ভার নির্মাণের প্রতিবাদ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বৈরাগী বৈষ্ণব সমিতির রাজ্য সম্পাদক শ্যামা পদ দাস। তিনি বলেন, “বিষয়টি খুব চিন্তার। এভাবে বৈষ্ণবদের সমাধি ধ্বংস করা উচিত নয়। আমরা এই নির্মাণের বিরোধিতা করছি”। তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই কাজ করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। পবিত্র মহাশ্মশানে এবং দ্বারকা নদীতে যাতে দূষিত জল না পরে সেই জন্য রিজার্ভার নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে জমা হওয়া জল পরিস্রুত করে দ্বারকা নদীতে ফেলা হবে। এর ফলে দ্বারকার জলে দূষণ হবে না। এই মুহূর্তে হোটেল-লজের নোংরা জল সরাসরি নদীতে পড়ছে। ফলে জল দূষিত হচ্ছে। তাছাড়া পরিবেশ আদালতের নির্দেশেই এই কাজ করা হচ্ছে। এই নির্মাণ করতে গিয়ে একটিও গাছ কাটা হবে না। ধ্বংস করা হবে না সমাধিও।”
আরও পড়ুন- Bratya Basu: হাইকোর্টের নির্দেশেই দুরন্ত তৎপরতা, ব্রাত্য বসুদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, মারধরের মামলা
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর জয়দীপ মুখোপাধ্যায় তারাপীঠের দূষণ সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১৮ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার রায়ে আদালত ৭০টি হোটেল–লজকে চিহ্নিত করে জরিমানা করে এবং সেই সঙ্গে দূষণ রোধে সরকারকে একাধিক নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ কার্যকর করতেই ওই নির্মাণ বলে জানান সুকুমার মুখোপাধ্যায়।