২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। মাস দু'য়েক আগে আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংকল্প সভার মাধ্যমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বঙ্গ BJP। পরবর্তীতে রাজ্যে দলের নয়া সভাপতি করা হয়েছে। ধীরে ধীরে ঘর গোছাতে শুরু করেছে পদ্ম শিবির। ২০২৬ নির্বাচন জিততে কৌশলের পরিবর্তনও করেছে বিজেপি। তবে পুরনো নেতা-কর্মীদের দল গুরুত্ব দিয়ে নয়া বার্তাও দিয়েছে গেরুয়া শিবির। পাশাপাশি রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্যের ক্ষেত্রেও নয়া কৌশল লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ বসে গিয়েছে। বিগত দিনে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁদের দেখা যায়নি। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে মোদী-শাহর দল বড় ধাক্কা খেয়েছে। লোকসভার আসন তো ধরে রাখতে পারেইনি, বরং ৬টি আসন কমে ১২-তে গিয়ে ঠেকেছে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে টনক নড়েছে গেরুয়া শিবিরের। দলের রাজ্য সভাপতি পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রথম ধাপে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে দল পুরনোদের গুরুত্ব দিচ্ছে। পুরনোদের দূরে সরিয়ে রাখলে ভোট-লড়াইতে প্রথম ধাপেই পিছিয়ে যাবে বলে মনে করছে দলের বড় অংশ।
সুকান্ত মজুমদারের পর সভাপতি পদে বসেছেন শমীক ভট্টাচার্য। দল গঠনের প্রথম দিন থেকে বিজেপি করে আসছেন রাজ্যসভার এই সাংসদ। অল্প বয়সে করেছেন R S S। শমীক ভট্টাচার্য প্রথম বক্তব্যেই সংখ্যালঘুদের নিয়ে নরম মনোভাব পোষণ করেন। পরবর্তীতেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বক্তব্য ব্যক্তিগত বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। স্পষ্ট ভাবে দু'জনের বক্তব্যে দুই ধারা দেখতে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। একজন ক্রিজে দাঁড়িয়ে চার-ছক্কা মেরে চলেছেন, আরেকজন টুক টুক করে এক রান-দু'রানের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। এই ছকেই ২০২৬- লড়াই করতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি, মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live Updates: ছত্তিশগড়েও বাঙালি নিপীড়ন! পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রেফতারিতে সোচ্চার মহুয়া
এদিকে শমীক ভট্টাচার্যকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি করে থেমে থাকেনি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অসীম ঘোষকে হরিয়ানার রাজ্যপাল করা হয়েছে। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে বঙ্গ বিজেপির অধিকাংশ নেতার তোপের মুখে পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলতে শুরু করছিলেন বঙ্গ বিজেপি তাঁকে পাত্তা দিচ্ছিল না। তাঁকে মঞ্চে বসার চেয়ারও দেয়নি দল। বহু কর্মসূচিতে ডাকাও হয়নি দিলীপ ঘোষকে। মোদ্দা কথা, দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা প্রকাশ্যেই বলেছেন দিলীপ ঘোষ। দলের পুরনো সঙ্গীদের নিয়ো সোচ্চার হয়েছেন তিনি। আগামী ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির ওই জনসভায় হাজির থাকার কথা রয়েছে দিলীপ ঘোষের।
আরও পড়ুন- Dilip ghosh:'ওখানে ডিম ভাত খেয়ে এখানে এসেছেন', দিলীপের চাঁচাছোলা নিশানায় কারা?
রাজ্য সভাপতি থেকে রাজ্যপাল, দিলীপ ঘোষের হাজিরা নানা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দলের পুরনোদের প্রতি বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনে আদি বিজেপির বসে যাওয়া নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি। এঁরা বসে গেলেও দলবদল করেননি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এরপর তৈরি হওয়া কমিটিতেও ভিড় বাড়বে আদিদের। মোদ্দা কথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব টের পেয়েছে পুরনো নেতা-কর্মীদের কাছে না টানলে মূলত দলেরই বিপদ। এমনকী বিধানসভার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও ২০২১-এর মত হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয় কিনা সেদিকে লক্ষ্য রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।