Purba Bardhaman News: ঘণ্টা তিনেকেই নৃশংস খুনের কিনারা করে ফেলল পুলিশ। নিঃসন্তান মাসি ও মেসোমোশাইকে খুনের অভিযোগে শ্রীঘরে ঠাঁই সম্পর্কে বোনঝি ও তাঁর দুই ছেলের। বৃদ্ধ মাসি ও মেসোমোশাইয়ের সম্পত্তিতে নজর পড়েছিল তাঁদেরই এক আত্মীয়ার মেয়ের। নিঃসন্তান দম্পতির টাকা-পয়সা হাতাতে দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ঢোকে ওই মহিলা। বৃদ্ধ মাসি ও মেসোমোশাইকে খুন করে টাকা-পয়সা লুঠ করে চম্পট দিয়েছিল তারা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। নৃশংস এই ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের রবীন্দ্রপল্লী এলাকার।
বৃদ্ধ দম্পতির বাড়ির সদর দরজার গেটের বাইরের দিকে লাগানো ছিল তালা। তা দেখে কারও বোঝারই উপায় ছিল না ওই বাড়ির ভিতরে ঘটে গিয়েছে ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড। সেটাই সামনে চলে মঙ্গলবার বিকেলে। বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। আত্মীয়দের কথা মেনে পুলিশ পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের রবীন্দ্রপল্লী এলাকার ওই বাড়ির সদর দরজায় লাগানো থাকা তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে। ভিতরে ঢুকতেই চোখ কপালে ওঠে পুলিশের। লণ্ডভণ্ড হয়ে থাকা আলাদা-আলাদা ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় নিঃসন্তান বৃদ্ধ দম্পতির রক্তাত মৃতদেহ।
এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হতেই রবীন্দ্রপল্লীতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘর থেকে পুলিশ ৭৫ বছর বয়সী অভিজিৎ যশ এবং ৬৫ বছর বয়সী ছবি যশের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার তদন্তে সিট তৈরি করে জেলা পুলিশ। দ্রুত শুরু হয় তদন্তের কাজ।
জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাস নিজে গত সন্ধ্যায় পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। একই সময়ে ’স্নিফার ডগ’ নিয়ে ওই বাড়িতে পৌঁছে যায় পুলিশের তদন্তকারী দল। বাড়ির ভিতরের সবিস্তার খতিয়ে দেখার পর সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বাইরে থেকে ওই বাড়ির দরজায় তালা লাগানো ছিল। পুলিশ তালা ভেঙে ওই বাড়ির ভিতরে ঢোকে। বাড়ির ভিতর আলাদা আলাদা ঘর থেকে নিঃসন্তান বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। দু’জনেরই শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
ঘরের মধ্যে থাকা দুটি আলমারি খোলা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। সেখানে জিনিসপত্র সব ছাড়ানো অবস্থায় ছিল। অন্য ঘরের জিনিসপত্রও তছনছ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। দম্পতিকে খুন করা হয়েছে বলেই অনুমান পুলিশের। মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন- Malda News: মালদায় নজর চিনের, হাসি চওড়া ব্যবসায়ীদের, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশবিদরা
নিহত বৃদ্ধের আত্মীয়দের কথা অনুযায়ী, অভিজিৎ যশ পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হওয়ায় এলাকার সব মানুষ এক ডাকে তাকে চিনত। অভিজিৎবাবুর শ্বশুরবাড়ি ভাতারের রবীন্দ্রপল্লী সংলগ্ন পালাড় গ্রামে। দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। আগে ভাতার বাজারের কদমতলায় বাড়ি ছিল অভিজিৎ যশের। বাড়ির নিচের তলায় ছিল তাঁর দোকান। বছর দুয়েক আগে কদমতলার বাড়ি বিক্রি করে রবীন্দ্রপল্লীতে নতুন বাড়ি তৈরি করে সেখানেই স্ত্রী ছবিদেবীকে সঙ্গে নিয়ে অভিজিৎবাবু বসবাস করছিলেন। বয়সের কারণে ব্যবসাও বন্ধ করে দেন তিনি। নিরীহ স্বভাবের ওই দম্পতির সঙ্গে আশপাশের বাসিন্দাদের যথেষ্ট সুসম্পর্ক ছিল। সারাটা দিন বাড়ির ভিতরেই তাঁরা কাটাতেন। তবে মিশুকে অভিজিৎবাবু দু’বেলা বাজারহাট করতে বেরিয়ে পরিচিতদের সঙ্গে গল্প-গুজব করতেন। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গেও অভিজিৎ যশের সুসম্পর্ক ছিল।
আভিজিৎ যশের শালিকা শ্যামলী কোঙার এবং তাঁর মেয়ে তনুশ্রী কোঙাররা জানান, গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে তাঁরা অভিজিৎবাবু ও তাঁর স্ত্রী ছবিদেবীর কোনও সাড়া পাচ্ছিলেন না। বাড়ির সদর দরজাতেও তালা ঝোলানো ছিল। পাড়া-প্রতিবেশীরা মনে করছিলেন অভিজিৎ যশ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও হয়তো বেড়াতে গিয়েছেন।
শ্যামলী কোঙার জানান, অভিজিৎ যশ সম্পর্কে তাঁর দাদু হন। দাদুর বাড়ির মোবাইল ফোনটি দু'দিন ধরে সুইচ অফ বলছিল। সন্দেহ হওয়ায় মঙ্গলবার ছবি যশের ছোট বোনের নাতি দাদুর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতে যায়। সে দেখে বাড়ির সদর দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগানো রয়েছে। বিষয়টি ভালো মনে না হওয়ার তারা ভাতার থানার পুলিশকে ঘটনার কথা জানান।
আরও পড়ুন- Tarapith Temple: তারাপীঠ মন্দিরে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢোকা যাবে না, চালু আরও একগুচ্ছ নিয়ম
পুলিশ এসে গেটের তালা ভেঙে বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এদিকে, তনুশ্রী কোঙার ও শ্যামলী কোঙার দু’জনেই দাবি করেন, এটা ডাকাতির ঘটনা নয়। তারা সন্দেহ করছেন, সম্পত্তি ও টাকা পয়সার লোভে ঘনিষ্ঠ কেউ বা কারা ছবি যশ ও তাঁর স্বামী অভিজিৎ যশকে খুন করেছে।
শ্যামলী কোঙার ও তনুশ্রী কোঙারের এই দাবিই শেষ পর্যন্ত সত্যি প্রমাণিত হয়। ঘটনা সামনে আসার তিন ঘন্টার মধ্যে খুনের কিনারা করে ফেলে পুলিশ। ভাতার থানায় সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ সুপার সায়ক দাস বলেন, "অভিজিৎ যশ ও ছবি যশকে খুনের ঘটনায়, অভিজিৎ যশের সেজ শ্যালিকার মেয়ে মহুয়া সামন্ত ওরফে কেয়া এবং তার দুই ছেলে অরিত্র সামন্ত ও অনিকেত সামন্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেরায় ধৃতরা বৃদ্ধ দম্পতিকে খুনের কথা স্বীকারও করে নিয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, "অভিজিৎ যশ ও ছবি যশে’র সঙ্গে কিছুতেই যোগাযোগ করতে না পেরে সুপর্ণা চৌধুরী নামে একজন মঙ্গলবার বিকেলে ভাতার থানায় জানান। সুপর্ণা পুলিশকে জানায়, অভিজিৎ যশ ও ছবি যশ সম্পর্কে তাঁর মেসো ও মাসি হয়। বৃদ্ধ মেসো ও মাসির মৃতদেহ উদ্ধারের পর অভিজিৎ যশের সেজ শ্যালিকার মেয়ে মহুয়া সামন্তর উপর সুপর্ণার সন্দেহ জাগে। সেই সন্দেহের কথা সুপর্ণা পুলিশকে জানায়। এরপর পুলিশ মৃত দম্পতির অন্য আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, বিভিন্ন সময়ে মহুয়া প্রৌঢ় দম্পতির কাছে গিয়ে টাকা-পয়সা দাবি করতো। এরপরেই পুলিশ মহুয়া সামন্তকে গ্রেপ্তার করে জেরা শুরে করে। জেরায় মহুয়া স্বীকার করে নেয় সে তাঁর দুই ছেলে অরিত্র ও অনিকেতকে সঙ্গে নিয়ে প্রৌঢ় অভিজিৎ যশ ও ছবি যশকে খুন করেছে।