Controversy over special queue for offering puja at Tarapith temple: তারাপীঠ মন্দিরের জটিলতা মেটাতে অফিসে ডেকে সেবায়েতকে হুমকির অভিযোগ উঠল রামপুরহাটের মহকুমা শাসকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারাপীঠ মন্দিরের সেবায়েতদের একাংশ। তাঁদের দাবি শাসক দলের নির্দেশে চলছেন মহকুমা শাসক। বিষয়টি নিয়ে পাল্টা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সেবায়েতদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন BJP-র বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা।
চারজন পুণ্যার্থীকে বিশেষ লাইনে ঢুকিয়ে পুজো করানো নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। সোমবার তারাপীঠ মন্দিরের পালাদার ছিলেন কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত রায়। মন্দির কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে প্রশাসনের নির্দেশে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের জন্য দুটি লাইন করা হয়েছে। একটি ৫০০ টাকার বিশেষ লাইন। অন্যটি সাধারণ পুন্যার্থীদের জন্য। একটি আছে প্রোটোকল লাইন। যে লাইনে প্রশাসনিক আধিকারিক, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, রাজনৈতিক দলের প্রধানরা লাইন না দিয়েই সরাসরি মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারবেন।
সেই প্রোটোকল লাইন দিয়ে সোমবার কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত রায় চারজন নিকট আত্মীয়কে ঢুকিয়েছিলেন। এই বিষয়টি নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়। মন্দিরের উপদেষ্টা কমিটির প্রধান বামাপদ মুখোপাধ্যায় ওরফে রবি প্রোটোকল লাইনে চার পুন্যার্থীকে ঢোকানোর প্রতিবাদ করেন।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:২০২৬-এ মমতার বিরুদ্ধেই লড়ছেন শুভেন্দু? অনেকটাই স্পষ্ট করলেন বিরোধী দলনেতা নিজেই
বিষয়টি নিয়ে মন্দিরেই বচসা বাধে। এরপর বামাপদ মুখোপাধ্যায় মন্দিরের সেবাইত, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানান। অভিযোগ, সুকুমার মুখোপাধ্যায় মন্দিরের অফিসে বসে মন্দির থেকে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেন। বন্ধ করে দেন ৫০০ টাকার বিশেষ লাইন। ফলে সোমবার রাত ১১ টা পর্যন্ত অরক্ষিত ছিল মন্দির। এতেই মন্দিরের সেবায়েতদের একাংশের ক্ষোভ। যেখানের মন্দিরের আয়ের টাকায় নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে সেখানে পালাদারদের বা মন্দির কমিটিকে না জানিয়ে মন্দিরকে সারাদিন অরক্ষিত করে দেওয়া হল কেন? তাছাড়া সুকুমার মুখোপাধ্যায় একজন মন্দিরের সেবায়েত। তিনি কীভাবে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
আরও পড়ুন- Suvendu-Dilip: দীর্ঘদিন পর এক ফ্রেমে শুভেন্দু-দিলীপ, চনমনে BJP বিধায়করা, মিলছে 'বড় ইঙ্গিত'!
কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “তারাপীঠ মন্দিরে সারাদেশের ভাবাবেগ জড়িয়ে। যেখানে দেশের প্রধান থেকে শুরু করে হাজার-হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ ভিড় করেন। সেখানে তৃণমূলের একজন ব্লক সভাপতি কীভাবে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নিতে পারেন? রামপুরহাটের মহকুমা শাসকও আমাদের অফিসে ডেকে ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন। কিন্তু অন্যায়ভাবে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়ার বিষয়ে কর্ণপাত করলেন না। আমাদের মনে হয়েছে মহকুমা শাসক তৃণমূলের নির্দেশে কাজ করছেন।” এদিকে মন্দিরের অনিয়ম নিয়ে মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন আরও এক সেবায়েত নিখিল মুখোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, “মন্দিরে শাসক দলের রাজত্ব চলছে। ১৫ বছর ধরে মন্দির কমিটির কোনও নির্বাচন হয়নি। ফলে একনায়েকতন্ত্র চলছে। তিন মাস ধরে বিশেষ লাইনের কয়েক কোটি টাকা আদায় হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা কোথায় রয়েছে কেউ জানে না। মন্দিরের অনিয়ম নিয়ে ২০২২ সালে দু'বার মহকুমা শাসকের কাছে তথ্য জানার অধিকার আইনে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও কোনও উত্তর মেলেনি। এখন শাসক দলের সঙ্গে প্রশাসন যোগসাজশ করে চলছে। আমরা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।”
এবিষয়ে মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশে আমরা মন্দির শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে পরিচালনা করতে চাইছি। কিন্তু কিছু সেবায়েত নিয়ম ভেঙে মন্দির চালাচ্ছেন। এনিয়ে গণ্ডগোলের জেরেই লাইন থেকে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে তারা ছিলেন মন্দিরের আশেপাশেই।”
আরও পড়ুন- Humayun Kabir: শুভেন্দুকে 'গরমাগরম' হুমকি! শোভনদেব ডেকে কী বললেন? কথা সেরেই নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা হুমায়ুনের
সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোনও সেবায়েত যদি নিরাপত্তারক্ষীকে না মানে, মন্দিরের দায়িত্বে থাকা প্রধানকে যদি না মানে তাহলে নিরাপত্তারক্ষীর প্রয়োজন কী? নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার পরিবার মন্দিরের সমস্ত রকম অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তাদের জন্যই মন্দিরে অশান্তি হচ্ছে”। অন্যদিকে, রামপুরহাটের মহকুমা শাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, “আমি মন্দিরের সমস্যা নিয়ে জানতে ওঁদের ডেকেছিলাম। ওঁদের বলে দেওয়া হয়েছে কোনও নিয়ম ভাঙা যাবে না। ওঁরা যে অভিযোগ করছেন সেটা ঠিক নয়। তবে লজ নিয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়লে তদন্ত করে দেখব।”