করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়তে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মমতা সরকার। বঙ্গভূমিতে প্রাণঘাতী ভাইরাসকে রুখতে লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে দিল রাজ্য় সরকার। আজ বিকেল ৫টা থেকে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত গোটা রাজ্য়ে লকডাউন জারি থাকবে বলে এদিন জানালেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। এর আগের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাংলায় আংশিক লকডাউন জারি করা হয়েছিল।
এদিন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, ''পরিস্থিতির অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য় করে এই বিশেষ সন্ধিক্ষণে আজ বিকেল ৫টা থেকে রাজ্য়জুড়ে লকডাউন জারি করা হচ্ছে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। গোটা রাজ্য়জুড়ে লকডাউন থাকবে। গ্রাম, শহর সর্বত্র লকডাউন থাকবে। একটু কষ্ট করতে হবে, দুর্ভোগ হবে''।
এদিন, বেলেঘাটা আইডি, এম আর বাঙুর, আরজি কর-সহ একাধিক হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিটে যান মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ডাক্তার-নার্সদের হাতে মাস্ক-স্য়ানিটাইজার তুলে দেন মমতা।
আরও পড়ুন: করোনায় মমতা সরকারের নয়া প্রকল্প ‘প্রচেষ্টা’, মিলবে আর্থিক সাহায্য়
বাংলায় প্রাণ কেড়েছে করোনা। প্রাণঘাতী ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে গোটা রাজ্য়। মারণ ভাইরাসকে রুখতে ইতিমধ্য়েই বাংলাজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার নতুন করে রাজ্য়ে দু'জনের শরীরে কোভিড ১৯ ভাইরাস মিলেছে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্য়া ছুঁয়েছে ৯।
এদিকে, করোনা মোকাবিলায় রাজ্য়ে ঘোষিত লকডাউনকে উপেক্ষা করেই রাস্তায় নেমেছেন বঙ্গবাসীর একাংশ। কলকাতার রাজপথেই উদ্দেশ্য়হীনভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে কয়েকজনকে। লকডাউন না মানার অভিযোগে ২৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্য়ের বিভিন্ন জেলাতেও বিক্ষিপ্তভাবে লকডাউন না মানার ছবি সামনে এসেছে। প্রশাসনের শত চেষ্টা সত্ত্বেও যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামছে তাতে ভাইরাস যুদ্ধে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। লকডাউন সফল করতে রাস্তায় নেমেছে পুলিশ। লকডাউন না মানলে আইনি ব্য়বস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন: কোথায় বন্ধ, কী চলবে?
এদিন বাংলায় ফের দু’জনের শরীরে মিলেছে মারণ জীবাণু। দু’জনেরই বিদেশ-যোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। একজন ফিরেছিলেন মিশর থেকে। অন্যজন, ব্রিটেন থেকে বাংলায় ফিরেছিলেন বলে খবর। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্রে খবর, নাইসেডে এই দু’জনেরই লালারস পরীক্ষা হয়।
উল্লেখ্য়, সোমবার রাজ্য়ে প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্য়ু হয়। দমদমের বাসিন্দা এক প্রৌঢ় ক'দিন আগে ভিনরাজ্য় থেকে ফিরেছিলেন। এরপরই জ্বর নিয়ে সল্টলেকের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। সোমবার তাঁর মৃত্য়ু হয়েছে। ওই ব্য়ক্তির পরিবারের সদস্য়রা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে খবর।
আরও পড়ুন: করোনা থেকে বাঁচতে কী করছেন মমতা? জানুন মুখ্য়মন্ত্রীর মুখ থেকে
এর আগে বাংলায় বিলেত ফেরত দুই তরুণের শরীরে কোভিড ১৯ ভাইরাস মিলেছিল। প্রথম করোনা আক্রান্ত ছাত্র ইংল্য়ান্ড থেকে ফিরেছিলেন। তিনি রাজ্য়ের এক পদস্থ আমলার ছেলে। করোনা উপসর্গ নিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে। এমনকি, বেলেঘাটা আইডি-তে স্বাস্থ্য় পরীক্ষা করা নিয়ে ডাক্তারদের পরামর্শ উপেক্ষা করেছিলেন বলে অভিযোগ। বাংলায় করোনা আক্রান্ত দ্বিতীয় তরুণও ইংল্য়ান্ড থেকে ফিরে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বাবা-মা ও পরিচারিকার শরীরে কোভিড ১৯ মিলেছে।
এ প্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে ফিরলে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এ নিয়ে রাজ্য়বাসীর কাছে আর্জি রেখেছেন স্বয়ং মুখ্য়মন্ত্রীও। করোনা পরিস্থিতিতে সকলকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
করোনা মোকাবিলায় সোমবার নবান্নে সর্বদল বৈঠক করেন মুখ্য়মন্ত্রী। এই সঙ্কটকালে রাজ্য় সরকার ও কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করার বার্তা দিয়েছে রাজ্য়ের বিরোধী দলগুলি।
করোনা মোকাবিলায় কার্যত স্তব্ধ বাংলা। এই পরিস্থিতিতে আপনার নিজের জন্য় ও আপনার চারপাশের সকলের সুরক্ষার জন্য় বাড়িতে থাকুন। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন