Purba Bardhaman News: কাটোয়ার শিব মন্দিরে ঢোকার ছাড়পত্র আদায়ের লড়াইয়ের জের, বিরাট চক্রান্তের অভিযোগ দলিতদের

Katoa: তাঁদের চাঁদায় পুজো হয়, অথচ তাঁদেরই অধিকার নেই মন্দিরে ঢোকার। এতদিনে প্রতিবাদে গর্জে উঠতেই বড়সড় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। বিষয়টি কানে গিয়েছে প্রশাসনের কর্তাদেরও।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
Dalit families alleged harassment for trying to enter Shiv temple in Gidhgram Katwa: পূর্ব বর্ধমান কাটোয়া গীধগ্রাম শিব মন্দির

Purba Bardhaman News: এটিই সেই শিব মন্দির।

Dalit families alleged harassment for trying to enter Shiv temple in Gidhgram, Katwa: গ্রামের শিব মন্দিরে ঢুকে পূজো দেওয়ার অধিকার ছিল না। সেই অধিকার পেতে গর্জে উঠেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গীধগ্রামের ১৩০টি দলিত পরিবার। তার 'মাশুল' এখন চরমভাবে গুণতে হচ্ছে ওই পরিবারগুলিকে। হাতে না মেরে তাঁদের 'ভাতে মারা'র চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন দলিত পরিবারের সদস্যরা। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানময় যুগে এমন সামাজিক বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার ঘটনা মাথাচাড়া দেওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

Advertisment

কাটোয়ার গীধগ্রামে রয়েছে সাড়ে তিনশো বছরের পুরানো একটি শিবমন্দির। এই শিব 'গীধেশ্বর' নামে পরিচিত। গ্রামবাসীদের আরাধ্য দেবতা গীধেশ্বরের সারাবছর নিত্যসেবা হয়। তবে শিবরাত্রি ও গাজন উৎসবে ব্যাপক ধুমধাম হয়। এবছর শিবরাত্রির দু'তিন দিন আগে গীধগ্রামের দাসপাড়ার কিছু বাসিন্দারা কাটোয়ার মহকুমা কাছে একটি অভিযোগ জমা করেন। অভিযোগে তাঁরা জানান, গীধেশ্বরের মন্দিরের পুজো দিতে পারেন না দাসপাড়ার শতাধিক দলিত পরিবার। মন্দিরে ঢুকে পুজো দেওয়া থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হয়। 
শিবরাত্রির দিন গীধেশ্বর শিবের মন্দিরে ঢুকে তাঁরা যাতে পুজো দেওয়ার অধিকার পান সেই আর্জিও মহকুমা শাসকের কাছে জানিয়ে ছিলেন দাস পাড়ার দলিতরা। 

এমন আর্জির বিষয়টি নিয়ে শিবরাত্রির আগে গ্রামে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তড়িঘড়ি হস্তক্ষেপ করে প্রশাসন। কাটোয়ার মহকুমাশাসক অহিংসা জৈনের উদ্যোগে গত ২৮ ফ্রেবুয়ারি মহকুমাশাসকের অফিসে একটি বৈঠক হয়। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, কাটোয়া ১ নম্বর বিডিও, গীধেশ্বর মন্দির কমিটির কর্মকর্তারা এবং দাসপাড়ার কয়েকজন প্রতিনিধি ওই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় গ্রাম্য দেবতার পুজোর্চ্চনার অধিকার সকল গ্রামবাসীরাই সমানভাবেন পাবেন। দু’পক্ষই তাতে সম্মতি দেয়। কিন্তু সম্মতি মিললেও সমাধান মেলে না। অবস্থা যে  তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে যায়।

আরও পড়ুন- West Bengal News Live: নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নওশাদের, তৃণমূল-যোগ জল্পনার সোজাসাপ্টা জবাব

Advertisment

এমন অবস্থায় গত শুক্রবার গীধগ্রামে উত্তেজনা চরমে পৌঁছোয়। গীধেশ্বর শিব মন্দিরে প্রবেশের অধিকারের দাবিতে মন্দির চত্বরে গিয়ে গর্জে ওঠেন দাস পাড়ার দলিত পরিবারের সদস্যরা। সেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে পুলিশ ও প্রশাসন । যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে গ্রামে বসানো হয় পুলিশ পিকেট । পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রামে শান্তি থাকলেও দলিতদের ক্ষোভ বিক্ষোভ এখন অ্যদিকে মোড় নিয়েছে। দলিতরা এখন যে অভিযোগ করছেন তা যথেষ্ট চমকে দেওয়ার মতোই। 

আরও পড়ুন- Kolkata Metro: কোনও রুটে চলবেই না মেট্রো, কোথাও আধঘণ্টা অন্তর ট্রেন, কবে? মেট্রোযাত্রীদের জন্য বড় খবর!

গীধগ্রামের দাস পাড়ার দলিত বাসিন্দারা মঙ্গলবার সকালে সংবাদ মাধ্যমকে অভিযোগ জানান, তাঁরা গীধেশ্বর মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দাবি করে ছিলেন। তার জন্য এখন তাঁদের হাতে না মেরে ভাতে মারার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। দাসপাড়ার বাসিন্দা নুপুর চন্দ্র দাস-সহ কয়েকজন জানান, তাঁদের এলাকার প্রায় ২০-৩০ টি দলিত পরিবার গোপালন করেন। গাভির দুধ এতদিন তাঁরা স্থানীয় একটি দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্রে (আমুল)গিয়ে দিয়ে আসতেন। তার বিনিময়ে তাঁরা হাতে-হাতে দুধের দাম পেয়ে যেতেন। কিন্তু এখন ওই দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র তাঁদের থেকে দুধ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও দাস পাড়ার যাঁরা যাঁরা অন্যের জমি ভাগে নিয়ে চাষ করছিলেন তাতেও রাশ টেনে দেওয়া হয়েছে। ভাগ চাষ করা জমির ফসল দাসপাড়ার দলিত ভাগ চাষিদের আর কাটতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- একবিংশ শতাব্দীতে এসেও খাস বাংলাতেই তাজ্জব ঘটনা! প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন

এমনকী গীধেশ্বর মন্দিরে প্রবেশের দাবি তোলা দাসপাড়ার লোকজনকে খেত মজুরদের নাকি খেত মজুরির কাজেও নেওয়া হচ্ছে না। হাতে না মেরে দাস পাড়ার লোকজনকে এখন এই ভাবেই ভাতে মারার চক্রান্ত চলছে বলে নুপুর চন্দ্র দাস জানিয়েছেন। মধ্যযুগীয় এই অবিচার থেকে মুক্তির পাওয়ার পথ এখনও হাতড়ে বেড়াচ্ছেন গীধগ্রামের দাস পাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন । 

কী করলে দাসপাড়ার লোকজন মন্দিরের পুজো দিতে পারবে, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে, তা মন্দিরের পুরোহিত সমেশ  চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এদিন জানতে চাওয়া হয়েছিল। উত্তরে পুরোহিত বলেন, “গ্রামের ৪ হাজার জনগন যে রায় দেবে সেই রায়’ই মানতে হবে। চার হাজার জনগনের মত যে দিকে থাকবে, সে দিকে আমরাও থাকব। এর বাইরে আমরাও কিছু করার নেই। কিছু করতেও পারব না।" 

মঙ্গলবার বিকেলে কাটোয়া মহকুমা শাসকের অফিসে জরুরি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন ছাড়াও কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় এবং গীধগ্রামের দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বেঠক শেষে মহকুমা শাসক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "দুই পক্ষের সম্মতিতে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগামিকাল বুধবার গীধগ্রামের দাস পাড়ার মানুষজন গীধেশ্বর শিব মন্দিরের পুজো দিতে যাবেন। দাস পাড়ার ওই বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষজনের জীবন জীবিকায় কোনওভাবে লাগাম পরানো যাবে না। সেই কথাও এদিন জানিয়ে দেওয়া  হয়েছে।" বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,“মহকুমা শাসকের অফিসে এদন যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটাই গীধগ্রামের সবইকে মানতে হবে। দাস সম্প্রদায়ের মানুষজনের জীবন জীবিকা যাতে স্বাবাভিক থাকে, কোনও ব্যাঘাত সৃষ্টি যাতে না হয় সে কথাও বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।" 

Bengali News Today Purba Bardhaman news in west bengal news of west bengal