/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/puja-2025-10-06-16-06-40.jpg)
Lakshmi Puja 2025: লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলার এই গ্রামে চলা মেলায় জমজমাট এলাকা।
রবি ঠাকুরের কাব্যে উঠে রয়েছে অঞ্জনা নদীর নাম। সেই অঞ্জনার তীরে দোগাছিতে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা শুরু হয়েছে । লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে ফের দোগাছিতে হচ্ছে আড়ঙ মেলা। প্রবল খুশি অঞ্জনার তীরের দোগাছিবাসী। দীর্ঘদিন ধরে গোটা দোগাছি পঞ্চায়েত এলাকাটি উদ্বাস্তু অধ্যুষিত বলে পরিচিত। এখানে ঘরে ঘরে হয় লক্ষ্মীপুজো। দোগাছি পঞ্চায়েত এলাকায় ৩০ টা'র বেশি গ্রাম রয়েছে। ৫০,০০০ বেশি মানুষের বাস এই দোগাছিতে।
এলাকার ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো হয়। এই লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামে আড়ঙ বসে। আড়ঙ মেলায় লক্ষাধিক টাকার ব্যবসা হয়। এই ব্যবসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের রুটি রুজীর ক্ষেত্রে অনেকটা রসদ যোগাবে। দোগাছিতে লক্ষ্মী পুজো মানে গ্রামে গ্রামে আত্মীয়-স্বজন, কুটুমের ভরে যাওয়া। এই সময় ঘরে ঘরে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করা হয়। তিলের নাড়ু, চিনির নাড়ু, গুড়ের ও নারকেলে নাড়ু, মুড়ি বা ঝুড়ি বেসমের মোয়া করা হয়। পুজোকে কেন্দ্র করে এখানে বাড়ি বাড়ি আলপনা দেওয়া শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। বাঙালির বড় উৎসব দুর্গাপুজা হলেও এখানে আসলে বোঝা যায় লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে কত আবেগ, ভক্তি শ্রদ্ধা মিশে রয়েছে। দেশভাগের পর মানুষ এপারে এসে বসবাস শুরু করেন।
ক্রমে তারা স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ওঠেন। দোগাছির বাসিন্দাদের লোকায়ত নামে দোগেছে বলা হয়। লক্ষ্মী পুজোর ঐতিহ্যকে বজায় রেখে দোগেছেদের মধ্যে বাড়ছে দিনকে দিন পুজোর সংখ্যা। দোগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে যাত্রাপুর, ক্ষীরপুলি হাটবোয়ালিয়া, ইছাপুর, নগরঘাটা, ভূতপাড়া, হাজারিপোঁতা, সুভাষনগর কলাতলা, পাড়ায় মূলত বড় বড় বাড়ির লক্ষ্মীপুজো হয়। এছাড়া এই পঞ্চায়েতের অধিকাংশ গ্রামে বড় বড় লক্ষ্মী পুজোও হয়।
এখানে বড় পুজো বলতে প্রথমেই নাম আসে স্মৃতি সংঘ, নতুন পাড়া বারোয়ারি, ভারতমাতা ক্লাব, সাথী, বয়েজ ক্লাব, সূর্যোদয় সংঘ, জীবনশক্তি, ষষ্ঠীতলা বারোয়ারি, সাথী ক্লাব সহ একাধিক পুজো। ছোট বড় ক্লাব বারোয়ারি নিয়ে এখানে ৫০ টার বেশি পুজো হয়। দোগাছি পঞ্চায়েত প্রধানত কৃষি প্রধান। সারা বছর যাতে ফসল ভালো হয়, সংসারের সুখ শান্তি থাকে এই প্রার্থনা করে গ্রামের ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো করা হয়। লক্ষ্মী পুজোর আড়ঙ শব্দটির অর্থ প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে নদী তীরের সাময়িক বাজার। এলাকায় যা আড়ঙ মেলা নামে পরিচিত। এই আড়ঙ-এ পুজোর আড়াই দিনের মাথায় বিকেলের পর এলাকার সমস্ত ক্লাব বারোয়ারির লক্ষ্মী প্রতিমাকে নিয়ে আসা হয়। মাঠে বসা আড়ঙ মেলায় নাগরদোলা, আসবাবপত্র দোকানওয়ালা, রকমারি খাবার থেকে ছোট বড় একাধিক পসরা সাজিয়ে দোকানওয়ালারা আসেন।
সারারাত পেরিয়ে সকাল হতে মেলা শেষ হয়ে যায়। লক্ষাধিক টাকার ব্যবসা হয়। শুরু হয় পাশেই বয়ে যাওয়া অঞ্জনা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন। কয়েকটা বড় বড় ক্লাব বারোয়ারি অবশ্য আড়ঙ থেকে প্রতিমা এলাকায় নিয়ে গিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে বের করে। দোগাছির মাঠে এই আড়ঙ এবছর হওয়ায় দোগাছিবাসী খুব খুশি। মেলা হওয়ায় খুশি নতুন পাড়া এক ব্যক্তি বলেন, 'আড়ঙ মেলা হওয়ায় আমরা খুব খুশি। এই এলাকায় দূর দুরান্ত থেকে মানুষ আড়ঙ-এ আসে। মেলাও প্রায় তিন দিনে গড়িয়ে যায়। লক্ষাধিক টাকার ব্যবসা হয়।
মানুষের মধ্যে উৎসাহ খুব বেশি। আমরাও ভালো পুজো করছি।'শ্রী শ্রী লক্ষ্মী পুজো ভাসান মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নিখিল মন্ডল বলেন, '৫০টির বেশি পুজো কমিটিকে আমরা আড়ঙ-এ আমন্ত্রণ জানিয়েছি। মেলা থেকে যা টাকা ওঠে সেই টাকাতে মেলার সমস্ত খরচ বাদে যে টাকা থাকে তা দিয়ে পুরস্কারের টাকা দেওয়া হয়। প্রতিমা, বাজনা, পরিবেশ-আচরণ এই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়।আমরা এখানে সুষ্ঠ ভাবে আড়ঙ মেলা করি। এখানে প্রচুর মানুষ আসেন।'