Hudur Durga: প্রতি বার পুজো এলেই শোকের পরিবেশ ফুটে ওঠে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। এর কারণটাও বেশ বিষ্ময়ের। গোটা বিশ্ব যখন দুর্গা আরাধনায় ব্রতী হয়, তখন কী করেন এঁরা?
Durga Puja 2024-Hudur Durga: দেবী দুর্গা মর্তে অসছেন। তাই আনন্দে মাতোয়ারা বর্ণহিন্দুরা। কিন্তু দেবী দুর্গার আগমন উপলক্ষে মোটেই আনন্দিত নয় আদিবাসীরা। কারণ, দুর্গাপুজোর সময়টা আদিবাসী জনগগোষ্ঠীর কাছে হল শোকের সময়। তাঁদের কাছে দেবী দুর্গা হলেন 'হুদুড় দুর্গা' (Hudur Durga)। তাই দেবীপক্ষে বর্ণহিন্দুরা যখন দেবী দুর্গার আরাধনায় মগ্ন থাকেন তখন নাচের মাধ্যমে দুর্গা অর্থাৎ হুদুড় দুর্গাকে খুঁজে বেড়ান আদিবাসীরা। ছদ্মবেশে হুদুড় দুর্গাকে খুঁজে বেড়ানোর সেই পরব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে ’দাসাই পরব’ নামে খ্যাত। যার মাহাত্ম্য মেনে পূর্ব বর্ধমান জেলার আদিবাসীরা আজও ’দাসাই পরব’ পালনে অবিচল রয়েছেন। মহাষষ্ঠীর দিন থেকেই তারা এই পরব পালনে মাতোয়ারা হবেন ।
Advertisment
দেবী দুর্গাকে আদিবাসীদের হুদুড় দুর্গা ভাবার নেপথ্যে রয়েছে মহিষাসুর প্রীতি। আদিবাসী সমাজের অনেকেই মনে করেন তাঁরা মহিষাসুরের বংশধর। সেই আদিবাসী জনজাতির লোকজন’ই মহিষাসুর অর্থাৎ হুদুড় দুর্গার পুজারী। দুর্গাপুজোর সময়ে তাঁরা মহিষাসুরের পুজো করেন। কারণ, অসুর জনজাতির মানুষজন বিশ্বাস করেন দুর্গা আসলে কোনও নারী শক্তি নয়। তাঁদের মতে দুর্গা শক্তিশালী বলবান পুরুষ। সেই কারণে তাঁদের কাছে দুর্গা ’হুদুড় দুর্গা’ নামেই পরিচিত।
আদিবাসী জনজাতীর মানুষজন এও বিশ্বাস করেন ’অনার্যদের’ দেবতা হলেন ’অসুর’। আর্যরা কখনই অনার্যদের দেবতা ’হুদুড় দুর্গার’ সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না। তাই দেবীরূপী দুর্গাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে মহিষাসুরের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন দেবতারা। তাঁদের মতে চিরাচরিত দুর্গা পূজার কাঠামোয় অসুরকে যতই অত্যাচারী দেখানো হোক না কেন, বাস্তবে মহিষাসুর ছিলেন ঠিক তার উল্টোটাই । যুদ্ধে ’অসুর’ কোন মহিলা ও শিশুদের আঘাত করতেন না। সেই দুর্বলতা জেনে দেবতারা বিজয়লাভ করার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দুর্গাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ।সেই সময়েও নিজের নীতিতে অবিচল ছিলেন মহিষাসুর।তাই দুর্গার কাছে তিনি পরাজিত হতে বাধ্য হন।
এই বিশ্বাসে ভরকরেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন দুর্গাপুজোর সময়ে ছদ্মবেশে নাচের মাধ্যমে তাঁদের অনার্য ভগবানকে খুঁজে বেড়ান।যার প্রস্তুতি সাধারণত ভাদ্র মাস শেষ থেকেই আদিবাসী মহল্লায় শুরু হয়ে যায়। আর তারপর পুজোর ষষ্ঠীর দিন থেকে পুরুষরা নারী সেজে ধামসা ও মাদল নিয়ে ’দাসাই নাচে’ র মধ্য দিয়ে হুদুড় দুর্গার খোঁজে মাতোয়ারা হন । দশমী পর্যন্ত চলে এই দাসাই পরব ।
আদিবাসী ’অসুর জনজাতির’ লৌকিক বিশ্বাস অনুযায়ী,অসুররা এই দেশের প্রাচীন জনজাতি। তাদের নেতার নাম ছিল ‘হুদুড়’ দুর্গা’ অর্থাৎ ‘মহিষাসুর’। সাঁওতালি ভাষায় দুর্গা পুংলিঙ্গ। সাঁওতালি ভাষায় ‘হুদুড়’ কথার অর্থ প্রচণ্ড জোরে বয়ে চলা বাতাস । আর্য সেনাপতি ’ইন্দ্র’ ছলনা ও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে এক দেবীকে হুদুড় দুর্গার কাছে পাঠান।ওই দেবী হুদুড় দুর্গাকে বিয়ে করার পর নবমীর দিন হুদুড় দুর্গাকে হত্যা করেন । সেই কারণে ওই দেবী দুর্গাদেবী নামে পরিচিতি পান ।অসুর জনজাতির মানুষজন এই লোককথাকে বিশ্বাস করেই শতকের পর শতক দুর্গোৎসবের চারদিন শোকের দাসাই পরব পালন করে আসছেন। আদিবাসী পুরুষেরা নারীর বেশে,মাথায় ময়ূরের পুচ্ছ লাগিয়ে বুক চাপড়ে ‘ভুয়াং’ নাচের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে দুঃখের গান গেয়ে এই সময়ে খুঁজে বেড়ান তাদের মহিষাসুর বা হুদুড় দুর্গাকে।