Advertisment

শ্রীঘরে পার্থ, প্রকট তৃণমূলের ভিতরের সমীকরণ

এর আগে CBI বা ED তৃণমূলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দল, এবার সেই দৃশ্য চোখে পড়ছে না।

author-image
Joyprakash Das
New Update
ed after Partha Chatterjee arrest tmc inner equation is significant

পার্থের গ্রেফতারিতে তৃণমূলের অন্দরে নানা জল্পনা।

তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলে তীব্র গুঞ্জন চলছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ গ্রেফতারের পরেই যে টুইট করেছেন তাতেই মূল বিতর্কের সূত্রপাত। যদিও পরবর্তীতে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে দলের তিন শীর্ষ নেতৃত্ব তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন। আগের টুইট থেকে সরে এবার দলের তরফে বলা হয় আইনে দোষী প্রমাণিত হলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দল ও সরকার ব্যবস্থা নেব।

Advertisment

কিন্তু অতীতের ঘটনা পর্যালোচনা করলেই কতগুলি বিষয় স্পষ্ট হবে। এর আগে সিবিআই বা ইডি তৃণমূলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কারণে দিনের পর দিন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দল। তার জন্য কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ চলেছে। কখনও টেন্ট করে, রাস্তায় মিছিল করে, রাজীবকুমারের বাড়িতে সিবিআই হানা দেওয়ায় ধর্মতলায় মঞ্চ বেঁধে অবস্থানে বসেছিলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজাম প্যালেসে ছুটে গিয়েছিলেন মমতা।

সেদিন অন্যান্য বন্ধু দলের নেতারা ভিন রাজ্য থেকে ধর্মতলায় এসেছিলেন প্রতিবাদে সামিল হতে। এবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা দলের মহাসচিব গ্রেফতারের পর তাঁর বাড়ির আশপাশে, হাসপাতালে, আদালত চত্বরে কোনও জায়গাতেই বড়, মাঝারি, ছোট কোনও পর্যায়ের নেতাকেই দর্শক হিসেবেও দেখা যায়নি। আগে সিবিআই বা ইডি নিয়ে যে বিক্ষোভের আগুন তৃণমূল কংগ্রেসের ছিল তা আপাতত উধাও, এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক মহলে।

২১ জুলাই শহিদ দিবসের দিনেও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই, ইডি নিয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিজেপিকে। তার পরের দিনই এসএসসি দুর্নীতি নিয়োগ মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। ইডির দাবি, ২১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে। মন্ত্রীর বাড়ি থেকে কী পাওয়া গিয়েছে তা নির্দিষ্ট করে এখনও জানা যায়নি।

আরও পড়ুন- ‘টাকার পাহাড়ের খোঁজ জানত পুলিশ’, চাঞ্চল্যকর অভিযোগে শোরগোল ফেলে দিলেন দিলীপ

মন্ত্রী গ্রেফতার হতেই তৃণমূল মুখপাত্র জানিয়ে দেন এই তদন্তে যাঁরা অভিযুক্ত সে বিষয়ে যা বলার তাঁরা বা তাঁদের আইনজীবী বলবেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, এতেই তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। দলীয় থেকে ব্যক্তিগত হতে সময় নেবে না!

যদিও পরের সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল সক্রিয় থাকলেও বাকি তিনজনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে উদ্বেগের ছাপ ছিল স্পষ্ট। এখনও পর্যন্ত দলের শীর্ষ দুই নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। নিদেনপক্ষে টুইটও নয়। দলে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নিয়ে বিতর্ক রয়েছেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় 'এক ব্যক্তি এক পদ নীতি' নিয়ে বারে বারে সওয়াল করেছেন। এখনও অধিকাংশ শীর্ষ নেতৃত্ব দলে ও প্রশাসনের একাধিক পদ নিয়ে বসে রয়েছেন।

আরও পড়ুন- ইডির জিম্মাতেই আজ রাতটা কাটাবেন অর্পিতা, কাল ফের আদালতে পেশ

পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা একদিকে দলের শীর্ষ পদে রয়েছেন, আবার কেউ কেউ একাধিক দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। জেলা সভাপতি বা কমিটিগুলি এখনও পর্যন্ত ঘোষণা করতে পারেনি তৃণমূল। শহিদ দিবস সফল দাবি করেও নানা বিতর্কে দল জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

আরও পড়ুন- মমতার দেওয়া ‘বঙ্গবিভূষণ’ নিচ্ছেন না অমর্ত্য সেন, সরকারকে বার্তা? উঠছে প্রশ্ন

দলের দুর্দিনের নেতাদের অনেকেই এখন যে কোনও কারণেই অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছেন। কালের নিয়মে চিরকাল কেউই ক্ষমতায় থাকে না। কথায় আছে, 'সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না'। রাজনৈতিক মহলের মতে, শেষমেশ আইনের ওপর দোহাই দিয়েই আপাতত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।

অভিজ্ঞমহল মনে করে, দিনরাত কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরোধিতা করে বিষয়টা ব্যক্তিগত হয়ে গেলে দলের অভ্যন্তরে বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। দলের নীচুতলার কর্মীদের ওপর যাতে এর কোনও প্রভাব না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখছে দল। কিছুটা ধীরে চলো নীতিতেই যেন এগোতে চাইছে।

tmc partha chatterjee ED WB SSC Scam
Advertisment