Migrant Worker: আবারও বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানায় মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের সাত জন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাভাষী সন্দেহ আটক করে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখার অভিযোগ উঠল। হরিশ্চন্দ্রপুরে তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তাজমুল হোসেন তার বিধানসভা এলাকার এই পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকে রাখার ঘটনায় তুমুল সমালোচনা করেছেন।
মন্ত্রী বলেন ,"দলীয় কাজে কলকাতায় আছি। তবে আমার বিধানসভা এলাকার পরিযায়ী শ্রমিক আটক হরিয়ানায়, সেই বিষয়টি শুনেছি। মুখ্যমন্ত্রীকে পুরো ঘটনার কথা জানাবো। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতই বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের এভাবে হেনস্থা করার বিষয়টি নিয়েও প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এদিকে হরিয়ানায় গুরুগ্রামে আটক মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের পরিযায়ী শ্রমিকদের অভিযোগ,বাংলা কথা বলাতেই তাদের বাড়ির ছেলেদের বাংলাদেশী সন্দেহ করে আটক করেছে ওই রাজ্যের পুলিশ। এরপর তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘন্টার পরেও নির্মম অত্যাচার করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর রাঙ্গাইপুর ও ঠাকুরটোলা এলাকার সাত জন পরিযায়ী শ্রমিক প্রায় ২০ দিন আগে হরিয়ানার গুরুগ্রামে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে যান। তাদের নাম আজমল হোসেন, লোকমান আলি, উসমান আলি, মানিরুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম, প্রসূন দাস, অভিজিৎ দাস । তাদের কাছে রয়েছে বৈধ নথিপত্র।
অভিযোগ, তারপরেও বুধবার রাতে সেখানকার পুলিশ তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
আটক পরিযায়ী শ্রমিক লোকমান এবং উসমান আলির বৃদ্ধ মা আরমানি বেওয়া বলেন, আমার স্বামী নেই। সংসার চালানোর জন্য দুই ছেলে হরিয়ানাতে গিয়েছে। দুই ছেলে রোজগারের ওপর আমাদের সংসার চলে। বাড়িতে পুত্রবধূ নাতি-নাতনীরা রয়েছে। ওরা যেখানে কাজ করছে সেখানকার কিছু শ্রমিকেরা বৃহস্পতিবার সকালে আমাকে ফোন করে জানায় যে আমাদের গ্রামের সাতজনকে বাংলাদেশী সন্দেহে হরিয়ানা পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। অথচ ছেলেদের কাছে ভারতীয় পরিচয় পত্র সবই রয়েছে। আসল যারা বাংলাদেশি, তাদেরকে পুলিশ না ধরে ভারতীয়দের এভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
আরেক পরিযায়ী শ্রমিক অভিজিৎ দাসের মা সুমিতা দাস বলেন, "২০ দিন আগে রাঙ্গাইপুর এবং পাশের গ্রাম ঠাকুরটোলা এলাকার মোট সাতজন যুবক হরিয়ানায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যায়। এরপরই এদিন জানতে পারি আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। ওরা হরিয়ানার গুরুগ্রামের একটি বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু বুধবার রাতে সবাইকে বাংলাদেশী সন্দেহে পুলিশ আটক করেছে। ওদের সাথে ওই এলাকার যারা অন্যান্য শ্রমিক ছিল তারাই ফোন করে বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন"।
এদিকে চাঁচল ১ এবং ২ ব্লকের গত কয়েক দিনের ব্যবধানে মোট যে ১৪ জন শ্রমিক হরিয়ানার গুরুগ্রামে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল। যদিও তাদেরকে বুধবার ছেড়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসনের পক্ষ থেকে। শ্রম দপ্তরের চাঁচল মহাকুমার সরকারি কমিশনার নওশাদ আলি বলেন, বিষয়টি শুনেছি। জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এদিকে বাংলার শ্রমিকের উপর এরকম নির্যাতনের ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। তৃণমূলের জেলার সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এব্যাপারে বিক্ষোভ আন্দোলন চলবে।
বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন , কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে। সঠিক পরিচয় পত্র থাকলে পুলিশ অবশ্যই তাদের ছেড়ে দেবে। অথচ এখানে তৃণমূলীরা বিভ্রান্তির রাজনীতি করছে।