India-Bangladesh Trade: বাংলাদেশ থেকে আসা তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্যসহ একাধিক পণ্যের উপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত। বিশেষভাবে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সীমান্ত চেকপোস্টগুলিতে—যেমন অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকায়। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশ এই পণ্যগুলি সরাসরি স্থল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠাতে পারবে না। পরিবর্তে, তাদের কলকাতা বা মুম্বইয়ের মতো সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে হবে, যার ফলে পরিবহণ খরচ এবং সময় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে।
পাকিস্তানের পর বাংলাদেশকে 'মুখতোড় জবাব'। মহম্মদ ইউনূসের দম্ভ মাটিতে মিশিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এর আগে ইউনূস বেজিংয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্য স্থলবেষ্টিত। বাংলাদেশ এই সমগ্র অঞ্চলের সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। এবার শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত জাতীয় সড়ক নির্মাণ ও বন্দর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইউনূসকে যোগ্য জবাব দিতে চলেছে মোদী সরকার।
ভারতের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করলে চড়া মাসুল দিতে হবে—এবার কার্যত সেই বার্তাই দিল নয়াদিল্লি। শনিবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্থ বৈদেশিক বাণিজ্য দফতর (DGFT)-এর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে রেডিমেড পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ বেশ কিছু সামগ্রী আমদানি আর করা যাবে না।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় কোন বন্দরগুলি?
ডিজিএফটির জারি করা নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি সীমান্ত চেকপোস্ট-এর মাধ্যমে এই পণ্যগুলি ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে কলকাতা ও মুম্বইয়ের মতো সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি থাকছে। অর্থাৎ সরাসরি স্থলপথে আমদানির পথ বন্ধ হল।
কূটনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটেই সিদ্ধান্ত?
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত কেবল বাণিজ্যিক নয়, কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস চিনে এক বক্তৃতায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ভারতের তরফে ইউনূসের এই মন্তব্যকে অপমানজনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ভারত এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কূটনৈতিক বার্তা দিতে চায় বলে মনে করা হচ্ছে।
কোন কোন পণ্য পড়ল নিষেধাজ্ঞার আওতায়?
ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ বৈদেশিক বাণিজ্য দপ্তর (DGFT) শনিবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে:
- তৈরি পোশাক
- প্লাস্টিক ও মেলামাইন পণ্য
- কাঠের আসবাবপত্র
- কার্বনেটেড পানীয় ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়
- বেকারি সামগ্রী ও মিষ্টান্ন
- তুলা ও তুলার বর্জ্য
তবে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল এবং চূর্ণ পাথরের মতো কিছু পণ্য এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধাক্কা
নতুন নীতির ফলে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে নির্দিষ্ট সমুদ্রবন্দর নির্ভরতা বাড়বে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত চাপ তৈরি করবে। খরচ বাড়বে, সময় লাগবে বেশি—ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকাও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
বাণিজ্য ভারসাম্যের যুক্তিও থাকছে
ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ সম্প্রতি ভারত থেকে সুতা ও চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সেই প্রেক্ষিতেই ‘ন্যায্য বাণিজ্য’ বজায় রাখতে ভারতও সীমান্ত বন্দর ব্যবহারে কড়াকড়ি আনছে। ভারতীয় উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষা এবং কৌশলগত অবস্থান বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
নেপাল-ভুটানের রপ্তানিতে প্রভাব নেই
তবে এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র ভারতের জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশের পণ্য যদি ভারত হয়ে নেপাল বা ভুটানে যায়, তাহলে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না বলে DGFT-এর বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপ শুধু ব্যবসায়িক নয়, তা আঞ্চলিক রাজনীতি ও কূটনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।