/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/20/img-20250820-wa0035-2025-08-20-20-32-09.jpg)
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরো চেয়ারম্যান
ভারত ২০৩৫ সালের মধ্যে নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরি করে ফেলবে।সেটা হয়ে গেলেই ভারত ২০৪০ সালের মধ্যে উৎক্ষেপণযান প্রযুক্তি ও মহাকাশযান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশগুলির সমকক্ষ হয়ে যাবে। এ বছরই আটটি বড় লঞ্চিং আছে। নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে ইসরো এগিয়ে যেতে চায়। তার স্পষ্ট ভিশন’ই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিচ্ছেন বলে বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জানালেন ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন ।তাঁকে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ডি.এস.সি প্রদান করা হয়।ভি নারায়ণন ছাড়াও
আরো তিন দিকপাল প্রফেসর পদ্মানাভন বলরাম, ডা:শ্যামাসিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডাঃ দেবীপ্রসাদ শেঠী ডিএসসি পান। তবে ডাঃ শেঠী সমাবর্তনে অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সমাবর্তনে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অনুপস্থিত ছিলেন।
ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন আরো জানান, এ বছর প্রথম আনক্রুড মিশন হবে ডিসেম্বরে। তাতে বায়ুমিত্র নামে এক মানবসদৃশকে পাঠানো হবে। ২০২৬ শে এইরকম আরো দুটি মিশনের পর ২০২৭ এর প্রথম কোয়ার্টারে মানুষকে যুক্ত করে অভিযান হবে।চন্দ্রযান ফোর চন্দ্রপৃষ্ঠ অবতরণ করবে। নমুনা সংগ্রহ করবে। এর ওজন হবে ৯৫০০ কেজি। এছাড়াও চন্দ্রযান ফাইভ প্রেরণের ব্যাপারে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এটি জাপানের সাথে একটি প্রকল্প।তিনি এও জানান, ২০৩৫ এ ভারত নিজের স্পেস স্টেশন তৈরি করবে।
ভি নারায়ণনের জন্ম তামিলনাড়ুতে। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। খড়্গপুর আইআইটি থেকে ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে এখান থেকেই অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিইচডি করেন নারারণন। স্নাতকোত্তর পর্বে প্রথম স্থান অধিকারের জন্য রৌপ পদক দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। পিএইচডি শেষ করে তিনি যোগ দেন ইসরোতে। ১৯৮৪ সালে রকেট এবং মহাকাশ প্রপালশন বিশেষজ্ঞ হিসাবে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থায় যোগ দেন নারায়ণ। ২০১৮ সালে লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম সেন্টারের ডিরেক্টর হিসাবে তাঁকে নির্বাচিত করা হয়।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ডি. এস. সি অর্পণ কর্মসূচি শেষে নারায়ণ এক দীর্ঘ আবেগময় বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, স্যাটেলাইট পাঠাতে হলে আমাদের ইঞ্জিন দরকার। ইঞ্জিনের কাজ গাড়ির ইঞ্জিনের কাজের থেকে আলাদা কিছু নয়। আপনি গাড়ির ইঞ্জিন জানেন, সেটি কী করে? এটি মানুষ অথবা কোনো বস্তু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায়।রকেট ইঞ্জিনও একই কাজ করে। এটি মানুষ অথবা স্যাটেলাইটকে নিয়ে যেতে হয়। তবে কয়েকটি পার্থক্য আছে। এই অঞ্চলে গাড়ি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের বেশি যায় না। হয়তো সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
কিন্তু চন্দ্রযান উৎক্ষেপণ করতে হলে ৩৭,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগ দিতে হয়।সেই ধরনের ইঞ্জিন আমাদের তৈরি করতে হয়েছে। ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন, যেখানে তরল হাইড্রোজেন ও তরল অক্সিজেন ব্যবহার হয়। এই প্রযুক্তি ভারতকে দেওয়া হয়নি।উন্নত দেশগুলো MTCR এর অজুহাত দেখিয়েছিল। আমাদের উন্নয়ন রুখে দিতে।তবে আজ আমরা তিনটি ইঞ্জিন তৈরি করেছি। আর ভারত আজ সেই কয়েকটি দেশের একটি যাদের হাতে এই জটিল প্রযুক্তি আছে।
নিজের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা এদিন তুলে ধরেন,ভি নারায়ণন। তিনি বলেন,আমি যখন এম.টেক শেষ করে ফিরেছিলাম, তখন প্রযুক্তি আমাদের থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সেটা খুবই অসন্মানের ছিল। কিন্তু আজ আমরা অনেক কিছু শুধু অর্জনই করিনি,তিনটি ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের নম্বর ওয়ান। মাত্র তিনটি ইঞ্জিন দিয়েই আমরা সফল হয়েছি।অন্য দেশগুলোর গড়ে ছয়টি ইঞ্জিন লেগেছে। শুধু ইঞ্জিন নয়, ভারত এই ক্ষেত্রে সময়ও কম নিয়েছে। সেই জায়গায় আমরা আজ বিশ্বের নম্বর ওয়ান। আর ৫০০০ কেজি হাইড্রোজেন নিয়ে একটি পরীক্ষা করতে হয়েছিল।সাধারণত মানুষ কোটি কোটি টাকা খরচ করে বহু পরীক্ষা করে। আমরা ১০০০ কোটি টাকার এক সেন্টার বানায় ১০ বছরে। কিন্তু কোনো পরীক্ষা ছাড়াই, শুধু ডিজিটাল সিমুলেশনের মাধ্যমে।
আইআইটি খড়গপুর থেকে পাওয়া জ্ঞান। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া জ্ঞান। সেই ভিত্তিতে আমরা পরীক্ষায় গিয়েছিলাম।আমরা ৩৪ দিনের মধ্যে সেই কাজ করেছি। আর আমরা নম্বর ওয়ান। এই বিশ্বরেকর্ড আগামী ৫০ বছরে কোনো দেশ ভাঙতে পারবে না।কারণ কেউ এত বড় ঝুঁকি নেবে না।আর মোদিজি যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন মহাকাশ ক্ষেত্রে অনেক ভালো কাজ হয়েছে।একটি দেশ যার স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ছিল না। আমরা দিশা পেয়েছিলাম। আমরা ১০০০ কেজির স্যাটেলাইট তৈরি করেছিলাম।নিজেদের রকেটে উৎক্ষেপণ করেছিলাম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম। আজ আমরা জি২০ স্যাটেলাইট তৈরি করছি।জি২০ স্যাটেলাইট। বায়ুদূষণ, বায়ুমণ্ডলের অবস্থা জানার জন্য।আমরা সেটি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকে দান করব।মানে জি২০ দেশগুলোকে।
বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়েও এদিন বলেন ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন। তিনি জানান,এ বছর আমাদের গগনযান প্রকল্প হবে।আমাদের চন্দ্রযান-৪ প্রকল্পও হবে। আমরা চাঁদে অবতরণ করে নিরাপদে ফিরিয়ে আনব। ২০৪০ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশ দিয়েছেন।আমরা আমাদের নিজস্ব মানুষকে চাঁদে পাঠাব এবং ফিরিয়ে আনব। আমরা একটি রকেট তৈরি করছি। সেই রকেট ৪০ তলা ভবনের সমান উঁচু হবে। প্রথম রকেট মাত্র ৩৫ কেজি নিচের কক্ষপথে তুলেছিল।এটি তুলবে ৭৫,০০০ কেজি।এটাই আমাদের কল্পিত রকেট। আমরা সবাই সেটি অর্জনের পথে কাজ করছি।