বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধেই বারবার যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন ছাত্রীটি। কিন্তু কোনও সুরাহা না মেলায় শেষমেশ নিজেই গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন তরুণী। দিন কয়েক জমে-মানুষে টানাটানি শেষে গতকাল রাতে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ২২ বছরের ওই ছাত্রীর। কলেজ ছাত্রীর এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে ওড়িশায় তুমুল রাজনৈতিক তরজা শুরু। বিরোধীরা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝিকে কাঠগড়ায় তুলে সোচ্চার হয়েছে।
একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন ওই কলেজ ছাত্রীটি। গায়ে আগুন দেওয়ার পর তাঁর শরীরে ৯৫ ভাগই পুড়ে গিয়েছিল। এককথায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছিল তরুণী। গত কয়েকদিন ধরে জীবনের জন্য জন্য লড়াই করা ওই কলেজ ছাত্রী সোমবার রাতে মারা যান। কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছিলেন ওই ছাত্রী। গতরাতে বালাসোর জেলার তার নিজ গ্রামে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওড়িশার প্রধান বিরোধী দল BJP এবং কংগ্রেস রাজ্যের BJP নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সোচ্চার হয়েছে। বিরোধী দলগুলির যুব ও একাধিক ছাত্র সংগঠন ভুবনেশ্বরের AIIMS হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো তাঁদের তর্কাতর্কি পর্যন্ত বেধে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live Updates: ছত্তিশগড়েও বাঙালি নিপীড়ন! পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রেফতারিতে সোচ্চার মহুয়া
X-এ একটি পোস্টে ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতা, নবীন পট্টনায়ক বলেছেন, “একটি ব্যর্থ ব্যবস্থা কীভাবে কারও জীবন নিতে পারে তা ভাবা আরও বিরক্তিকর। সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হল এটি কোনও দুর্ঘটনা ছিল না, বরং এমন একটি ব্যবস্থার ফলাফল যা সাহায্য করার পরিবর্তে নীরব ছিল। ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করতে করতে, মেয়েটি শেষ পর্যন্ত তার চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল”। ওই পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে কলেজ কর্তৃপক্ষ যৌন হয়রানির অভিযোগ উপেক্ষা করলেও, মেয়েটি উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এমনকী একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে পর্যন্ত গিয়েছিলেন ন্যায়বিচারের জন্য। বালাসোরের সাংসদ প্রতাপ সারঙ্গির সঙ্গেও নির্যাতিতা দেখা করেছিলেন।
আরও পড়ুন-BJP:দুর্দিনের সঙ্গীদের নিয়েই '২৬-এর লড়াই! কথায় নয়, কাজে বোঝাতে শুরু করলেন মোদী-শাহরা
X-এ পোস্টে নবীন পট্টনায়ক আরও লিখেছেন, “যদি একজন ব্যক্তিও দায়িত্ব নিতেন এবং ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করতেন, তাহলে সম্ভবত মেয়েটির জীবন বাঁচানো যেত। কেবল শারীরিক আঘাতের কারণেই মেয়েটি জীবন হারাননি, বরং রাজ্য সরকারের অবহেলার কারণেও, যার ফলে তিনি তার সংগ্রামে একা পড়েছিলেন। ঘটনার পুরো ধারাবাহিকতা প্রকাশ করে যে এটি প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসঘাতকতা - একটি পরিকল্পিত অবিচার ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু কলেজ কর্তৃপক্ষ নয় বরং ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদেরও দায়ী করা উচিত।” বিজেডির ছাত্র ও যুব শাখাগুলি ওড়িশা জুড়ে বিক্ষোভের ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে কংগ্রেস এবং তার বামপন্থী জোটগুলি ১৭ জুলাই রাজ্যব্যাপী বনধের ডাক দিয়েছে।
আরও পড়ুন- Weekend getaway:এবেলা বেরিয়ে ওবেলা ফিরুন! বর্ষায় কলকাতার কাছেই অপূর্ব এই নদীপাড়ে প্রাণের স্বস্তি-মনের আরাম
একটি পোস্টে, কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ওড়িশার ছাত্রীর মৃত্যুকে "বিজেপির ব্যবস্থার দ্বারা হত্যার চেয়ে কম কিছু নয়।" বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের কথা জানিয়েছেন। ছাত্রীর পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেছেন। তবে রাহুল গান্ধীর প্রতি পাল্টা আক্রমণ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, "এটা দুর্ভাগ্যজনক যে রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস ওড়িশার মেয়ের সঙ্গে জড়িত মর্মান্তিক ঘটনায় সস্তার রাজনীতি করছেন।"