/indian-express-bangla/media/media_files/2024/10/22/s5d3oKtxTczl6UX8gEpg.jpg)
বিদ্যা-সুন্দর কালীবাড়ি।
Kali Puja 2024: নর বলি এখন আর হয় না। তবুও বিদ্যাসুন্দর কালী আজও শিহরণ জাগায়। বর্ধমানের তেজগঞ্জের নির্জন জায়গায় পূজিত হন পাষাণ মূর্তির বিদ্যাসুন্দর কালী। কার্তিকের আমাবস্যায় কোলাহল, আলোর রোশনাই, বাদ্যির শব্দ এসব থেকে বিদ্যাসুন্দর কালী অন্তরালেই থাকেন।
তবে অন্তরালে থাকলেও দেবীর প্রতি বর্ধমানবাসীর ভক্তিভাবে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। নিজ মাহাত্ম্যেই দেবী তাঁর ভক্তদের কাছে শ্রদ্ধার দেবী হিসেবেই জায়গা করে নিয়েছেন।
বিদ্যাসুন্দর কালীর পুজো নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। রায়গুনাকর ভরতচন্দ্রের কব্যগ্রন্থে উল্লেখিত রয়েছে বিদ্যাসুন্দর কালীর কথা। কথিত আছে, এক সময়ে দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ ছিল জঙ্গলে ঘেরা। সেখানেই ছিল প্রাচীন কালী মন্দির। সেই সময়ের বর্ধমানের রাজারা ওই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। এও শোনা যায় ওই সময়ে এই মন্দিরে দেবীর সামনে নরবলি হত। মন্দিরের আশেপাশে সুড়ঙ্গও নাকি ছিল। তবে সেই সুড়ঙ্গ কোথায় ছিল তা অবশ্য আজ আর কেউ বলতে পারেন না। তবে ওই সুড়ঙ্গের সঙ্গে আজও জড়িয়ে রয়েছে এক প্রেম কাহিনী।
জনশ্রুতি রয়েছে, ওই সুড়ঙ্গ দিয়েই নাকি সেই সময়ের রাজকন্যা বিদ্যার সঙ্গে গোপনে দেখা করতেন সুন্দর। দক্ষিণ মশান কালীর গরিব পূজারীর সন্তান ছিলেন সুন্দর। রাজবাড়ি থেকে মন্দিরে পুজোর ফুল দিতে আসতেন মালিনী মাসি। তার কাছেই একদিন একটা সুন্দর মালা দেখতে পান সুন্দর। মালাটি কে গেঁথেছে তা মালিনী মাসির কাছে জানতে চায় সুন্দর। মালিনী মাসি জানান মালাটি গেঁথেছেন রাজকন্যা বিদ্যা। সুন্দর এর পরেই রাজকন্যার সাথে দেখা করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠলে বিদ্যা সেদিন ভয়ে পালিয়ে যান।
আরও পড়ুন- Kali Puja 2024: 'দেবীর খড়গ ধোয়া জল পানে সারে কঠিন ব্যধি', বুড়ো কালীর মাহাত্ম্য অসীম!
কিন্তু পালিয়ে গেলে কি হবে। সুন্দরের মন উদগ্রীব হয়ে ওঠে বিদ্যার জন্য। ধরা পড়লে একেবারে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সুন্দর রাজবাড়ি অবধি সুড়ঙ্গ কেটে ফেলেন। সুড়ঙ্গ পথ ধরেই সুন্দর রাজকন্যা বিদ্যার কাছে পৌঁছে যান। সময় গড়ানোর সঙ্গেই গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিদ্যা আর সুন্দরের মধ্যে। বিদ্যা আর সুন্দরের প্রণয় সম্পর্কে আবদ্ধ হবার কথা রাজার কানে পৌঁছে দেন তাঁর চরেরা।
একথা জানার পরেই রাজা তেজগঞ্জের মন্দিরেই দেবী মায়ের সামনে নিজের মেয়ে আর তাঁর প্রেমিককে বলির নির্দেশ দেন। হাঁড়িকাঠে তাদের দু’জনকে বলি করার ঠিক আগের মুহূর্তে দেবী মাকে প্রণামের অনুরোধ করেন সুন্দর। তখনই মূর্ছিত হন কাপালিক। সেই মুহুর্তেই আচমকা উধাও হয়ে যান বিদ্যা আর সুন্দর। তারপর থেকে তাঁদের আর কোনও খোঁজ মেলেনি। এরপর থেকে রাজার আদেশে মন্দিরে নর বলি বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- Cyclone Dana Live Updates: ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে সতর্ক রাজ্য সরকার, ৯টি জেলায় শনিবার পর্যন্ত বন্ধ স্কুল
ভরতচন্দ্রের সেই বিদ্যাসুন্দর কালী আজও রয়েছেন বর্ধমানের তেজগঞ্জে। এখানে এখনও রয়েছে সেই মূর্তি। রয়েছে ভৈরব আর পঞ্চানন্দ এই দুই মন্দিরও। কথিত আছে রাজার নির্দেশে বাঁকুড়া থেকে এসে এই মন্দিরে পুজোর ভার পেয়েছিলেন বর্তমান সেবায়েত বংশের পূর্ব পুরুষ। এখন আর জাঁকজমক নেই। তবুও শ্যামাপুজোর দিন এই মন্দিরে নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়। পুজো শেষে নির্জনেই থেকে যান বিদ্যাসুন্দর কালী।