Advertisment

Kali Puja 2024: অপার ভক্তির মানত যায় না বিফলে! দেবী বর্গভীমার 'অনুমতি' নিয়েই কালীপুজোর শুরু এতল্লাটে

Kali Puja 2024-Bargabhima Temple: প্রাচীন এই মন্দির নির্মাণ নিয়েও এলাকায় নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। কালীপুজোর দিন ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় হয় এই মন্দিরে।

author-image
Debanjana Maity
New Update
Kali Puja 2024,Bargabhima Temple in Tamluk,Bargabhima Temple, Tamluk,Purba Medinipur,কালীপুজো ২০২৪,বর্গভীমা মন্দির,তমলুক,পূর্ব মেদিনীপুর

Bargabhima Temple: তমলুকের দেবী বর্গভীমা।

Kali Puja 2024: সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম তমলুকের দেবী বর্গভীমার মন্দির (Bargabhima Temple)। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে খণ্ডিত হয়ে সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল তমলুক শহরে। আর সেই থেকেই তমলুকে গড়ে উঠেছে দেবী বর্গভীমার মন্দির। যা আজও পূর্ণ মহিমায় জাগ্রত বলেই বিশ্বাস ভক্তদের। তমলুকে ধুমধাম করে কালীপুজো (Kali Puja 2024) হলেও দেবী বর্গভীমার 'অনুমতি' না নিয়ে এখনও কোনও পুজো শুরু হয় না।

Advertisment

দেবীর ৫১টি সতীপীঠের অন্যতম পীঠ হল তমলুকের বর্গভীমা মন্দির। আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে সমগ্র মেদিনীপুর জেলায় কয়েক হাজার মন্দির ছিল। আজও তমলুকের দেবী বর্গভীমার মন্দির মানুষের কাছে পূর্ণ মহিমায় জাগ্রত। প্রাচীন পুরাণে বর্ণিত আছে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে খন্ডিত হয় সতীর দেহের বিভিন্ন অংশ। আর সেই সব অংশ যেখানে যেখানে পড়েছে সেখানেই তৈরি হয়েছে দেবীর একটি করে পূর্ণ জাগ্রত মন্দির।

আর সেই মতোই বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে খন্ডিত হয়ে সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল প্রাচীন এই তাম্রলিপ্ত যা আজ তমলুক শহর নামে পরিচিত। আর সেখানেই গড়ে উঠেছে দেবী বর্গভীমার মন্দির। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী বর্গভীমার কাছে এসে প্রার্থনা করলে তিনি নাকি তা ফেরান না। আর এই সব বিশ্বাস মেনেই বছরের প্রত্যেক দিন ভিড় জমে তমলুকের এই মন্দিরে। ব্যক্তিগত বা কোনও সংস্থার কোনও শুভ কাজ অনুষ্ঠিত হলে প্রথমে দেবী বর্গভীমাকে পুজো দেওয়ার রীতি রয়েছে এখানে। আর সেই রীতি মেনেই দেবী বর্গভীমাকে পুজো দিয়েই শুরু হয় তমলুকের বড় থেকে ছোট সমস্ত কালীপুজোর। 

আজও কালীপুজোর দিন সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে পুজো দেওয়ার ভিড় জমে দেবী বর্গভীমা মন্দিরে। দেবী বর্গভীমার পুজো শুরু না হলে এতল্লাটের কোনও কালীপুজোরই সূচনা হয় না। এই নিয়ম শুধু তমলুক শহরের নয়, তমলুক শহরের পাশাপাশি আশেপাশের নন্দকুমার, মহিষাদল, কোলাঘাট, চৈতন্যপুরের কালীপুজোগুলিও দেবী বর্গভীমার পুজো শুরুর পরেই শুরু হয়। দেবীর সতীপীঠের এই বর্গভীমা মন্দিরে দেবী সারাবছর ভিন্ন ভিন্ন রূপে পূজিত হন। কখনও দুর্গা, কখনও কালী, আবার কখনও জগদ্ধাত্রী রূপে পূজিতা হন দেবী বর্গভীমা। তবে এখানকার দেবী যেহেতু কালী রূপে অধিষ্ঠিত রয়েছেন তাই প্রতি বছর কালীপুজোর দিনগুলিতে দেবীকে সাজানো হয় রাজবেশে। নতুন কাপড় ও স্বর্ণালঙ্কারে নতুন রাজবেশে সেজে ওঠেন দেবী বর্গভীমা। 

আরও পড়ুন- Kali Puja 2024: আকাশে ঘুরবে ড্রোন চড়কি, ছাতা খাটাবে ফুলঝুড়ি! কালীপুজোয় আসতবাজির চোখ ধাঁধানো কালেকশন!

বছরের প্রত্যেকদিনই দেবীর জন্য থাকে শোল মাছের বিশেষ ভোগ। যা কালীপুজোর দিনেও ব্যতিক্রম হয় না। কালীপুজোর দিন শোল মাছ সহ নানা পদে সাজানো হয় দেবীর ভোগ। দেবীর ভোগ গ্রহণ করতে সারা বছরই দর্শনার্থীদের ভিড় জমে মন্দিরে। প্রত্যেকদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত ভক্তদের জন্য খোলা থাকে মন্দির। তমলুকবাসীর বিশ্বাস, তৎকালীন তমলুকের ময়ূরবংশীয় রাজাই নির্মাণ করেছেন এই মন্দির। 

আরও পড়ুন- Kali Puja 2024: নেপথ্যে বর্গী হানার রোমহর্ষক ইতিহাস! দুর্গাকালী আরাধনার সূচনা-পর্ব অবাক করবে

তবে কারও কারও মতে, প্রাচীন ময়ূরবংশীয় রাজা তাম্রধ্বজের সময় রাজা একজন ধীবরকে ষোল মাছ ধরতে পাঠান। ধীবর মাছ ধরতে না পারায় রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। এরপর কোনোও রকমে জেলে জঙ্গলে পালিয়ে যায় এবং সেখানে ভীমাদেবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন। সেখানে দেবী একটি কূপের জল ছিটিয়ে মাছগুলোকে বাঁচিয়ে তোলেন। এভাবে ধীবর প্রত‍্যেকদিন জ্যান্ত মাছ রাজার কাছে নিয়ে যাওয়ায় রাজা কৌতূহলী হয়ে ধীবরকে কারণ জানতে চায়। এরপর ধীবর সমস্ত কিছু বলায় কূপের ইতিহাস প্রকাশ‍্যে আশে। আর এর জেরে কূপিত হয়ে দেবী পাথরের মূর্তি ধারন করেন। আর সেখানে রাজা তাম্রধ্বজ কিছু না পেয়ে পাথরের মূর্তির ওপরেই তৈরি করেন এই মন্দির। 

আরও পড়ুন- Digha: কলকাতা থেকে দিঘা যাওয়ার 'নতুন রুট'! বাম্পার প্ল্যান! নিমেষে পৌঁছোতে পারেন সমুদ্রনগরীতে

আবার কারও মত, ধনপতী নামে এক বণিক বণিজ‍্যে যাওয়ার পথে তমলুকে নোঙর করেন এবং সেখানে একজনকে সোনার পাত্র বয়ে নিয়ে যেতে দেখেন। এরপর বণিক জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন একটি কূপের জলের স্পর্শে নাকি সব পেতল সোনা হয়ে যায়। বণিক তা পরীক্ষা করেও দেখেন। এরপর তিনি যখন ফিরে আসেন তখন এই মন্দির নির্মাণ করেন।  আর এই দ্বিমত নিয়েই আজকের এই বর্গভীমা মন্দির। ৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট  বৌদ্ধ ধর্মের স্থাপত্যের ধাঁচে গড়ে ওঠা সতী পীঠের অন্যতম এই পীঠ বর্গভীমা মন্দির আজও বহু মানুষ ভিড় জমান। যা কালিপুজোর দিন জনসমুদ্রের আকার ধারণ করে। 

মন্দিরের পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, "সতীর ৫১ পীঠের অন‍্যতম তমলুকের দেবী বর্গভীমা এখনও পূর্ণ মহিমায় জাগ্রত। এখনও পর্যন্ত প্রত্যেকদিন দেবীকে শোল মাছের ভোগ দেওয়া হয়। এলাকার যেকোনো শুভ কাজ শুরু হওয়ার আগে দেবী বর্গভীমার কাছে অনুমতি নিয়ে হয়। দেবী খুব জাগ্রত হওয়ায় জেলার বাইরে বহু দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা মন্দিরে ভিড় জমান।"

Tamluk Bargabhima Temple Kalipuja 2024
Advertisment