Kali Puja 2024: নেপথ্যে বর্গী হানার রোমহর্ষক ইতিহাস! দুর্গাকালী আরাধনার সূচনা-পর্ব অবাক করবে

Kali Puja 2024: গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর সঙ্গে দুই পরী জয়া ও বিজয়াকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠিতা দুর্গা কালী রূপী বড়মা। প্রাচীন এই পুজো শুরুর কাহিনীটা জানলে চমকে উঠবেন।

Kali Puja 2024: গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর সঙ্গে দুই পরী জয়া ও বিজয়াকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠিতা দুর্গা কালী রূপী বড়মা। প্রাচীন এই পুজো শুরুর কাহিনীটা জানলে চমকে উঠবেন।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
purba bardhaman, kali puja 2024,durga kali, Burdwan news, পূর্ব বর্ধমান,দুর্গাকালী, কালীপুজো ২০২৪

Kali Puja 2024: খণ্ডঘোষের দেবী দুর্গা-কালী মাতা।

Kali Puja 2024: বর্গী হানায় একদা তছনছ হয়ে গিয়েছিল সারা বাংলা। তার রেশ পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামেও আছড়ে পড়েছিল। প্রায় পাঁচ ১০০ বছরেরও আগের সেই বর্গী হামলায় নিজের আশ্রয় পর্যন্ত হারাতে হয়েছিল ওঁয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের আরাধ্য দেবী বড়মা'কে। তাঁর ঠাই হয়েছিল শ্মশান সংলগ্ন পরিত্যক্ত জায়গায়। সেখানেই দীর্ঘদিন তিনি পড়েছিলেন। স্বপ্নে দেবী এই গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধদেব সরকারকে তাঁর দুরাবস্থার কথা জানান। তারপরেই দেবীকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে বুদ্ধদেববাবু প্রথম পুজোপাঠ শুরু করেন। পরে মন্দিরও গড়ে তোলেন তিনি। সেখানেই অধিষ্ঠিত হন বড়মা। 

Advertisment

সেই থেকে  প্রতি বছর কার্তিকেয় আমাবস্যা তিথিতে কালীপুজোর (Kali Puja 2024) দিন ওঁয়াড়ি গ্রামে ঘটা করে হয়ে আসছে বড় মায়ের পুজো। বর্গীদের মহিষাসুরের সঙ্গে তুলনা করে বড় মায়ের পুজোয় একটা সময়ে মহিষ বলি হত। সেই সময়ে মহিষাসুর বধের পরে বড়মার মূর্তির সামনে লাঠি খেলায় মাতোয়ারা হতেন ওঁয়াড়ি গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম যুবকরা। এখন মহিষ বলি আর না হলেও  পুরনো প্রথা মেনে কালীপুজোর দিন বড়মা'র সামনে হয় লাঠি খেলা। দেবী বড়মাকে আঁকড়ে ধরেই ওঁয়াড়ি গ্রামে সম্প্রীতির অটুট বন্ধন আজও চোখে পড়ে।

ওঁয়াড়ি গ্রামে বড়মা দেবী কালী রূপে পূজিতা হলেও আদতে বড়মা হলেন দুর্গাকালীর রূপ। বড়মার প্রতিমা প্রকৃত অর্থেই নজরকাড়া।  গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর সঙ্গে দুই পরী জয়া ও বিজয়াকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠিতা দুর্গা কালী রূপী বড়মা। নিজের মাহাত্ম্য গুণেই বড়মা ওঁয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে অনন্য দেবী রূপে ভূষিতা হয়েছেন। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, বড় মায়ের কাছে কেউ কিছু চাইলে বড়মা তাঁকে নিরাশ করেন না।

আগে গ্রামের সরকার বাড়িতে পূজিতা হতেন বড়মা। এখন তিনি পূজিতা হন ওঁয়াড়ি গ্রামের সকলের বড়মা রূপে। দেবীর মন্দিরটিও তৈরি হয়েছে বিশাল আকারে। শোনা যায় এক সময়ে বড় মায়ের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে সাতশো বিঘা। জানা গেছে,  সামান্য ৩০ - ৩৫ বিঘা  দেবত্তর সম্পত্তি এখনও রয়েছে বড় মায়ের নামে। সেই জমির আয় থেকেই সারা বছর বড় মায়ের নিত্য সেবা ও কার্তিকেয় আমাবস্যা তিথির বিশেষ পুজোপাঠ হয়। পুজো সাতদিন ধরে চলে।

Advertisment

আরও পড়ুন- Digha: কলকাতা থেকে দিঘা যাওয়ার 'নতুন রুট'! বাম্পার প্ল্যান! নিমেষে পৌঁছোতে পারেন সমুদ্রনগরীতে

পুজারী তুষার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "তন্ত্র মতেই হয় বড় মায়ের পুজো। মায়ের পুজোর ভোগ অন্নে চাল-কলাই ভাজা ও চিনি দিতে হয়। আগে মহিষাসুর বধ মনে রেখে মহিষ বলি হত। তবে মোষ বলিদান এখন আর হয় না। উপাচার মেনে ছাগ, আখ ও ছাঁচি কুমড়ো বলিদান হয়। কালীপুজোর দিন থেকে শুরু করে সাত দিন ধরে চলে বড়মা'র বিশেষ পুজোপাঠ।"

আরও পড়ুন- Kankaleshwari Kali Temple : মন্দিরের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে রহস্য! বহু ‘অলৌকিক’ ঘটনার সাক্ষী কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির

বড়মার প্রতিমার রূপ ও মাহাত্ম্য নিয়ে ওঁয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দা মহলে অনেক কাহিনী  প্রচলিত রয়েছে। এলাকার বাসিন্দা মুসূদন চন্দ্র বলেন, "কথিত আছে চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে দিনযাপন করতেন গ্রামের সরকার পরিবারের পূর্ব পুরুষ বুদ্ধদেব সরকার। উদাস মনের এই মানুষটি কালী মায়ের ভক্ত ছিলেন। মধুসূদন বাবুর কথায়, "গ্রামের প্রবীণদের কাছে শুনেছি ওঁয়াড়ি গ্রামের এক পাশে ছিল শ্মশানঘাট। সেখানে নিজের পোষা গরু চড়াতে যেতেন  বুদ্ধদেববাবু। গরু চরাতে চরাতে একদিন সেখানেই বুদ্ধদেব ঘুমিয়ে পড়েন।  স্বপ্নে বড়মা তাঁকে দেখা দেন। বড়মা বুদ্ধদেবকে বলেন, বর্গী হামলায় তাঁর সব কিছু তছনছ হয়ে গেছে। বর্গীরা সব মন্দির ধ্বংস করে দিয়েছে। নিজের দুরাবস্থার কথা বুদ্ধদেবকে জানিয়ে বড়মা  বলেন, 'আমি খুব কষ্টে রয়েছি। আমাকে শ্মশান থেকে নিয়ে গিয়ে তোর বাড়িতে প্রতিষ্ঠা কর।"

আরও পড়ুন- Kali Puja Weather: কালীপুজোর আবহাওয়া নিয়ে বিরাট খবর! শীতের ছ্যাঁকা কবে থেকে? জানুন লেটেস্ট আপডেট

আরও পড়ুন- Kali Puja 2024: অপঘাতে মৃত ১০৮ নরমুণ্ডে কালীপুজো, নেপথ্যের আরও হাড়হিম কাহিনী গায়ে কাঁটা দেবে!

সেই সময় নাকি বুদ্ধদেব বড়মাকে বলেন, "আমি নিজেই দু’বেলা খেতে পাইনা । তোমাকে প্রতিষ্ঠা করে কী খাওয়াব? তখন দেবী বুদ্ধদেবকে  জানিয়ে দেন, সামান্য চাল-কলাইভাজা আর একটু চিনি দিবি তা দিয়েই আমার খাওয়া হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বড়মা নির্দেশ দিয়ে বুদ্ধদেবকে বলেছিলেন, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশও দুরাবস্থায় রয়েছে। আমার সঙ্গে ওদেরও প্রতিষ্ঠা করে পুজো করবি।"  বড়মার সেই নির্দেশ মেনেই বুদ্ধদেব সরকার 
বড়মার পুজো-পাঠ শুরু করেন। 

Purba Bardhaman westbengal Kalipuja 2024