/indian-express-bangla/media/media_files/2025/06/27/calcutta-law-college-rape-2025-06-27-21-45-03.jpg)
কসবা ল' কলেজ ধর্ষণ মামলায় নির্যাতিতার অভিযোগপত্রে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য- পার্থ পাল
Kasba Law College gang rape Case Updates: কলকাতার ল' কলেজে এক ছাত্রীকে কলেজ চত্বরেই গণধর্ষণের অভিযোগে চূড়ান্ত চাঞ্চল্য ছড়াল রাজ্য জুড়ে। ২৫ জুন রাতে ঘটনাটি ঘটে বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন- [ কসবার ল' কলেজে ছাত্রীকে 'গণধর্ষণ', নির্যাতিতার পাশে থেকেও বিরোধীদের প্রবল সমালোচনায় তৃণমূল ]
কী ঘটেছিল?
পুলিশ সূত্রে খবর, ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কলেজেরই একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্ত তিনজন মনোজিত মিশ্র (৩১), জ়াইব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০)কে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় একজনের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ’ এবং বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সাহায্যের অভিযোগে এফআইআরে উল্লেখ করেছেন নির্যাতিতা তরুণী।
অভিযুক্ত কারা?
কসবা গণধর্ষণ কান্ডে তিন অভিযুক্তই কোনও না কোনওভাবে ওই কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিজেপির দাবি, মূল অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (TMCP)-এর প্রাক্তন নেতা।
কখন ধরা পড়ে অভিযুক্তরা?
২৬ জুন সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিং-এর কাছ থেকে মনোজিত ও জ়াইবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই প্রমিতকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তিনজনের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলি ইতিমধ্যে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন কলকাতার পুলিশ কমিশনর মনোজ ভার্মা।
পুলিশি পদক্ষেপ ও মেডিকেল রিপোর্ট
অভিযোগ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে কসবা থানার পুলিশ। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ও মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, গোটা ঘটনায় একাধিক সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। আজ ধৃতদের আদালতের পেশ করা হলে অভিযুক্তদের ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
NCW হস্তক্ষেপ
জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) ইতিমধ্যে কসবা গণধর্ষণের ঘটনায় স্বতঃপ্রনোদিত (suo moto) হস্তক্ষেপ করে গোটা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, "এই ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন"।পাশাপাশি নির্যাতিতাকে আইনি, মানসিক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্যের পাশাপাশি BNSS-এর ধারা ৩৯৬ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিজেপির অভিযোগ: TMC দায় এড়াতে পারে না
বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কসবা কাণ্ডের কড়া নিন্দা জানিয়ে লিখেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকাল বাংলা মহিলাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ধর্ষণ যেন রোজকার ঘটনা হয়ে উঠেছে।" তাঁর দাবি, মূল অভিযুক্ত TMCP-এর নেতা এবং কলেজ প্রশাসন পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল কংগ্রেস এক বিবৃতিতে “এই ঘৃণ্য অপরাধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, অভিযোগ পেয়েই রাজ্য প্রশাসন অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করেছে। তদন্তের স্বচ্ছতা ও অভিযুক্ত যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি পায় তা নিশ্চিত করা হবে।” একইসঙ্গে ‘অপরাজিতা বিল’ নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে তৃণমূল কংগ্রেস।
এফআইআরে কী জানিয়েছেন নির্যাতিতা
কলকাতার ল' কলেজে ছাত্রী ধর্ষণ কাণ্ডে নতুন মোড়। থানায় লিখিত বয়ানে তিনি একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন। সেদিন সন্ধ্যার হাড়হিম ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন নির্যাতিতা তরুণী।
অভিযোগ অনুযায়ী, মূল অভিযুক্ত কলেজের প্রাক্তনী ও TMCP ইউনিটের ‘অঘোষিত নেতা’ হিসেবে পরিচিত। ওই প্রাক্তনী তথা ছাত্র নেতা তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দেন, তা ফিরিয়ে দিতেই তরুণীর উপর চলে নির্মম অত্যাচার। কলেজের প্রভাবশালী এই নেতা তাঁকে ধর্ষণ করার পাশাপাশি ব্ল্যাকমেল এবং হুমকিও দেন বলে অভিযোগ।
নির্যাতিতা তরুণী জানিয়েছেন, ২৫ মে তিনি পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করতে কলেজে যান। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে তিনি ইউনিয়ন রুমে প্রবেশ করে। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন মূল অভিযুক্ত সহ আরও কয়েকজন। বিকেল ৪টা নাগাদ অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী বেরিয়ে গেলেও ওই নেতা তাঁকে আটকান। কিছু সময় পরে ইউনিয়ন রুমে ফিরে এসে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তরুণী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানান যে তাঁর বয়ফ্রেণ্ড রয়েছে। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী বেরিয়ে গেলেও ওই প্রাক্তনী তাঁকে আরও কিছুক্ষণ থাকতে বলেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে তরুণী ৭টার দিকে ফের ইউনিয়ন রুম ছাড়ার চেষ্টা করলে সে তাঁকে বাধা দেন এবং সেখানে হাজির দুজনকে ইশারায় বাইরে পাঠান। অভিযোগ, ইউনিয়ন রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হয়। তরুণী বারবার অনুরোধ করলেও কোনও কর্ণপাত করা হয়নি।
তরুণী এও জানান, ওই সময় তাঁর প্রবল প্যানিক অ্যাটাক হয় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করেন। সেই সময়ে বাইরে থাকা দুজনকে প্রধান অভিযক্ত ঘরে ডাকেন। একাধিকবার অনুরোধের পর তাকে ইনহেলার দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে তিনি সেই ইউনিয়ন রুম থেকে পালানোর চেষ্টা করলেও আটকানো হয়।
ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ
নির্যাতিতা জানান, এরপর গার্ডস রুমে নিয়ে গিয়ে মূল অভিযুক্ত তাঁকে বিবস্ত্র করেন এবং ধর্ষণ করেন। অভিযুক্ত বাকি দুজন তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তরুণী জানান, তাঁকে হুমকি দিয়ে বলা হয় প্রেমিককে খুন, বাবা-মাকে জেলে ভরে দেওয়া হবে। এমনকি বিবস্ত্র অবস্থার ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখানো হয়। শেষে তরুণীর অভিযোগ, “আমি প্রাণপণে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি,”। কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তরুণীর FIR-এর ভিত্তিতে তদন্তও শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন- [ কসবায় ল' কলেজে গণধর্ষণ, মূল অভিযুক্ত TMCP নেতা মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূলের তাবড় নেতার ছবি ]